তালেবানের মধ্যে বিভেদ, কতটা সত্য?
সম্প্রতি তালেবানের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভেদ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদনের পর তালেবানের ভেতর ‘ঐক্য’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চলতি মাসের শুরুতে তালেবানের উপপ্রধান মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার জনসম্মুখের বাইরে চলে যান। এর পর তালেবানের মধ্যে ‘অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব’ নিয়ে জনমনে সন্দেহ বাড়তে থাকে। এমনও প্রতিবেদন প্রকাশ হয় যে, ‘বারাদার নিহত হয়েছেন।’
তবে নিহতের গুঞ্জন উড়িয়ে তালেবান নেতা আব্দুল গনি বারাদার জনসম্মুখে আসেন। জনসম্মুখে এসে তিনি পূর্বে রেকর্ডকৃত একটি বক্তব্য পাঠ করেন। ওই বক্তব্যে ‘দীর্ঘ ভ্রমণের’ কারণে তিনি জনসম্মুখে বাইরে ছিলেন বলে উল্লেখ করেন। বারাদার বলেন, তালেবানের মধ্যে সম্পর্ক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের থেকেও গভীর।
আরও পড়ুন : করোনা নিয়ে চিন্তার কারণ নেই: যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ
অডিও বার্তায় বারাদার বলেন , আমার মৃত্যু নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। গত কয়েক রাত ধরে আমি দীর্ঘ ভ্রমণে ছিলাম। আমি যেখানে এখন থাকি, আমরা সবাই ভালো আছি; আমাদের ভাই-বন্ধুরাও ভালো আছে।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যম ভুয়া ও প্রোপাগান্ডামূলক সংবাদ প্রচার করছে। আমি সাহসিকতার এসব মিথ্যাচারকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমি শতভাগ নিশ্চিত করছি যে, তালেবানে অভ্যন্তরীণ কোনো কোন্দল নেই।
বারাদার সর্বশেষ সোমবার জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তোলেন। সুতরাং তিনি নিহত হননি এটা শতভাগ নিশ্চিত।
তবে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা বলছে, বারাদার নিহত না হলেও তালেবান নেতাদের মধ্যে বিবাদ সত্য।
কয়েক বছর যাবত তালেবানের সংবাদ সংগ্রহ সংগ্রহ করেছেন এমন একজন রিপোর্টার আল জাজিরাকে বলেন, তালেবানের মধ্যে বিভেদ হলো- রাজনৈতিক ও সামরিক বিভেদ। তালেবানের কট্টরপন্থিরা দাবি করছেন, যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের বিজয় এসেছে। অন্যদিকে আরেক গ্রুপ বলছে, সংলাপের ফলে তাদের বিজয় এসেছে।
আরও পড়ুন : এক ডালেই সাড়ে ৮শ’ টমেটো, গিনেস বুকে নাম
তালেবানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন একটি সূত্র বলছে, তালেবানের মধ্যে বিবাদ ‘ঘর থেকে রাস্তা’ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। তালেবান সদস্যরা বড় বড় শহরগুলোতে গিয়ে সাবেক কর্মকর্তাদের সর্বস্থ নিয়ে নিচ্ছেন।
আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের একজন কর্মকর্তার পরিবারের এক সদস্য বলেন, তালেবান সদস্যরা তাদের বাড়ি ও ব্যক্তিগত গাড়ি দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। যদিও তালেবানের তথ্য সংস্কৃতি বিষয়ক উপমন্ত্রী জাবিউল্লাহ মুজাহিদ ক্ষমতা দখলের দুদিন পর, তালেবান সদস্যদের কারও বাড়ি না যাওয়ার নির্দেশনা দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই রিপোর্টার বলেন, তালেবান সরকারের বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও তালেবানের প্রতিষ্ঠা মোল্লা ওমরের ছেলে ‘মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব’ কট্টরপন্থি তালেবান গ্রুপকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
আরও পড়ুন : মাস্ক পরায় রেস্টুরেন্ট থেকে বের করে দিলেন রেস্টুরেন্ট মালিক!
অন্যদিকে, বারাদার, শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টিনিকজাইরা রাজনৈতিকমুখী। এই গ্রুপটি সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করতে চাচ্ছে।
আল জাজিরার খবর অনুসারে, তালেবানের দ্বন্দ্বের আরেকটি জায়গা হলো আঞ্চলিক প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চীন। গত ২০ বছর যাবত এই দুই দেশ তালেবানকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্র বলছে, তালেবানের হাক্কানি গ্রুপ পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান যেসব তালেবান নেতাদের বন্দি করেছিল তারা ইরানের দিকে ঝুঁকছে।