স্বাস্থ্য

মলত্যাগের রুটিন বজায় রাখার উপায়

মলত্যাগের রুটিন বজায় রাখার উপায় - West Bengal News 24

প্রতিদিন মলত্যাগের অভ্যাস ধরে রাখাটাও শরীরের যত্ন নেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিক’য়ের মতে, মল অপসারণের ক্ষেত্রে এমন কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই যা সবার জন্যই সমান উপকারী ও কার্যকর হবে। দিনে তিনবার থেকে সপ্তাহের তিনবার, সবই স্বাভাবিক।

প্রতিদিন বাদামি রংয়ের মল শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে এটাই আদর্শ ঘটনা হলেও কয়বার হবে, কেমন হবে তা নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর।

তাই মানুষভেদে সবারই পরিস্থিতি ভিন্ন। যে কারণে তুলনা করতে হবে নিজস্ব প্র্রাত্যহিক নিয়মের সঙ্গে। আর কোনো বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করলে বুঝে নিতে হবে কোথাও কোনো গোলমাল হয়েছে।

মলত্যাগের প্রাত্যহিক রুটিন ধরে রাখাটা নির্ভর করে খাবার ও অন্যান্য করণীয় এবং বর্জণীয় বিষয়ের ওপর।

খাদ্যাভ্যাস ও জল পান
মলত্যাগের রুটিন স্বাভাবিক রাখতে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে দুটি উপাদান তা হলো- জল আর ভোজ্য আঁশ।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা পুষ্টি পরামর্শ কেন্দ্র ‘গাটিভেট’র প্রতিষ্ঠাতা পুষ্টিবিদ এরিন লিসেম্বি জাজ ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “জল মলকে নরম রাখে এবং অন্ত্রের পেশির সুস্থতা বজায় রাখে। দুটোই নিয়মিত মলত্যাগের জন্য জরুরি। আর ভোজ্য আঁশ এমনভাবে মল তৈরি করে যা সহজেই অন্ত্রের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বের হয়ে যেতে পারে।”

মায়ো ক্লিনিক বলছে, “ভোজ্য আঁশ দুই ধরনের। জলে দ্রবণীয় আর অদ্রবণীয়। গাজর, আপেল, সীম, বার্লি ইত্যাদি থেকে পাওয়া আঁশ জলে দ্রবণীয়। এগুলো শরীরের ভেতর ভেঙে জেলজাতীয় পিচ্ছিল উপাদানে পরিণত হয়।

আবার আটা, ওটস, আলু, ফুলকপিতে থাকা ভোজ্য আঁশ জলে অদ্রবণীয়। এগুলো পুরোপুরি ভাঙে না, বরং মলকে ভারি করে। নিয়মিত মলত্যাগের জন্য জলে অদ্রবণীয় ভোজ্য আঁশের গুরুত্ব বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের আরেক পুষ্টিবিদ রেচেল লার্কি বলেন, “উদ্ভিজ্জ ভোজ্য আঁশ হলো ‘প্রোবায়োটিক’। অন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যাক্টেরিয়াকে প্রয়োজনীয় খাবার যোগায় এটি। হজম আর মলত্যাগ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পর্কিত স্নায়বিক বিষয়গুলো অক্ষুণ্ন রাখার জন্য অন্ত্রের এই ব্যাক্টেরিয়াগুলো গুরুত্বপূর্ণ।”

আপেল, জাম, টক জাতের ফল, তরমুজ, সবুজ শাকসবজি, সেলেরি, ব্রকলি, শিকড়ভিত্তিক সবজি, লতাগুল্ম, বাদাম ও বীজ-জাতীয় খাবার থেকে পাওয়া যায় এই ভোজ্য আঁশ।

দই, টকদই, ‘মিসো’, ‘কেফির’, ‘খম্বুচা’ ইত্যাদি গাঁজানো প্রক্রিয়ায় তৈরি করা খাবার যোগায় প্রোবায়োটিক। এগুলো ভোজ্য আঁশ নয়। তবে অন্ত্রে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া বাড়ায়।

লার্কি আরও বলেন, “প্রতিদিন মলত্যাগ হওয়ার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত খাবার খেতে হবে। অভুক্ত থাকার অভ্যাস থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। কতবার খাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করবে আপনি কী খাবেন এবং কতটুকু খাবেন। আর কম খাওয়ার কারণে অনেকেই হজমের সমস্যায় আক্রান্ত হন।”

ঘুম ও খাওয়ার নির্দিষ্ট সময়
প্রতিদিন ঘুম ও খাওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা উচিত বলে পরামর্শ দেন লার্কি। এই অভ্যাসের ভিত্তিতেই মলত্যাগের রুটিন গড়ে উঠবে।

জাজ বলেন, “প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে মলত্যাগের চেষ্টা করার মাধ্যমে শরীরকে অভ্যস্ত করে তুলতে পারেন। দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে শৌচাগারে গিয়ে পাঁচ মিনিট শরীর মন শান্ত করে মলত্যাগের চেষ্টা করুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে বড় এক গ্লাস জল পান করে, নাস্তা করার পর কিংবা চা, কফি পান করার পর এই চেষ্টা করার সবচাইতে আদর্শ সময়।”

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, “মলত্যাগের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট সময় নেওয়া উচিত। এরমধ্যে যদি কিছু না হয় তবে ক্ষান্ত দিন।”

হজমের সমস্যায় নজর দিন
যা খাবেন তার সবই হজমে প্রভাব ফেলবে, একেকজনকে একেকভাবে।

জাজ বলেন, “অ্যালকোহল হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। ‘ক্যাফেইন’ অন্ত্রের সক্রিয়তা বাড়িয়ে দৈনিক রুটিনকে নষ্ট করে দিতে পারে।”

লার্কি বলেন, “কফির মাধ্যমে অনেকেই তাদের মলত্যাগের রুটিনে লাগাম পরাতে দেখবেন। তবে আপনার বেলায় পরিস্থিতি ভিন্ন হতেই পারে। তখন বুঝে নিতে হবে কফি আপনার হজমতন্ত্রের জন্য উপকারী নয়।”

জাজ বলেন, “মল অপসারণের গতি কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত চর্বি। চর্বি জলে দ্রবণীয় নয়। ফলে তা মলকে শক্ত করে যা অন্ত্রের ভেতর দিয়ে বের হতে বেগ পায়। আবার চর্বি শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানও। তাই একে একেবারে বাদও দেওয়া যাবে না। বরং আরও ভোজ্য আঁশ যোগ করতে হবে।”

আরও পড়ুন ::

Back to top button