বিজেপিকেই এগিয়ে দিল কলকাতা
কলকাতা পুরভোটে বিরোধীদের ধরাশায়ী করে জয়ের হাসি হেসেছে শাসক দল। ১৩৪ টি ওয়ার্ডে জিতেছে তৃণমূল। বাম কংগ্রেস ২ টো করে, বিজেপি ৩ এবং নির্দল জিতেছে ৩ টি ওয়ার্ডে। এরই মধ্যে আবার নির্দলের দুই প্রার্থী তৃণমূলের পথেই পা বারাচ্ছেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ১৯ শে ডিসেম্বর কলকাতা পুরভোট ঘিরে শুরু থেকেই ছিল টানটান উত্তেজনা।
মোট ১৪৪ টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ এদিন। আঁটোসাঁটো নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় শহর। সকাল ৭ টা থেকে কলকাতায় মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সমস্ত বুথ, স্ট্রং রুম এবং গণনা কেন্দ্র ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়। কলকাতা পুর অঞ্চলে মোট ভোটার সংখ্যা ৪০,৪৮,৩৫২। ৪৯৫৯টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে ১১৩৯টি বুথ ছিল স্পর্শকাতর।
যদিও এতটা নিরাপত্তা সত্ত্বেও রক্ত ঝড়েছে পুরভোটে। শুরুতে ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবে শুরু হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই বিক্ষিপ্ত অশান্তির সূত্রপাত হয়। কোথাও বুথ এজেন্টকে বসতে দেওয়া হচ্ছে না, কোথাও ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, কোথাও আবার সিসিটিভি ক্যামেরাই ঢেকে দেওয়া হয়েছে, এসব অভিযোগ উঠতে থাকতে শাসক দলের বিরুদ্ধে।
পুরভোটে প্রহসন ও হিংসার অভিযোগ নিয়ে আদালতেও যায় বিরোধীরা। যদিও সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসক শিবির। পাল্টা বিরোধীদেরই কাঠগড়ায় তোলে তৃণমূল।
সেই পুরভোটের ফল ঘোষণা হয় ২১ শে ডিসেম্বর অর্থাত্ মঙ্গলবার। ফল ঘোষণার শুরুর থেকেই এগিয়ে থাকে তৃণমূল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছ্বাস বাড়তে থাকে শাসক শিবিরের কর্মী সমর্থকদের। অবশেষে তৃণমূলের ঝুলিতেই আসে জয়। ধরাশায়ী হয় বিরোধীরা।
পুর-নির্বাচনে জয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গণ উত্সবে গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে কলকাতা সারা দেশকে পথ দেখাবে।” এই কথা তিনি তখন বলেন, যখন ১৩৩ টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের জয়ের খবর আসে। এরপরেই তিনি কামাক্ষ্যা মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেখানে গিয়ে মায়ের দর্শন করে পুজোয় দেন মমতা।
জয় নিয়ে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “রবীন্দ্রনাথের বাংলা, নজরুলের বাংলা, বিবেকানন্দের বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা চলে না। সর্ব ধর্ম সমন্বয় যেটা বাংলা সৃষ্টি করেছে, আগামীদিনে এই পথটাই ভারতবর্ষ চলবে। বিজেপির খাতা ছিঁড়ে গেছে, আর এই ছেঁড়া বিজেপিই থাকবে।”
আরও পড়ুন: ‘গোটা দেশে সম্প্রীতি, একতা বজায় রাখতে হবে’ : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
এদিকে শাসক দলের এই জয়কে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “চুল নেই, তাতে বাবরি ছাট- এ কোনও ভোট হয়েছে! এ তো ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। এটা গণতন্ত্রের লজ্জা। মমতাকে কটাক্ষ করে বাম নেতা বলে, ত্রিপুরায় বিজেপি যা করেছে, এখানে উনি করতে পারলেন না! এত পুলিশ, গুণ্ডা বাহিনী থাকা সত্ত্বেও তিনি ১০০ তে ১০০ করতে পারলেন না!”
বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “এটাই হওয়ার ছিল। যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, প্রার্থীরা আক্রান্ত হয়েছেন সকাল থেকে, সেখানে রাজ্য নির্বাচন কমিশন নির্বাক দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।”
তবে শাসক-বিরোধী তরজার মধ্যেও যা দেখা দেখা যাচ্ছে, তা হল এই পুর নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাম শিবির। ২০১৫-র পুরভোটে যেখানে ১৬ টি আসন জিতেছিল বামেরা, সেই সংখ্যাই এবার নেমে দাঁড়ায় ২-এ। একই দশা হাত শিবিরেরও; তাদের আসন ৫ থেকে নেমে হয় ২।
আসন হারিয়েছে পদ্ম শিবিরও। গত পুরভোটে যে সংখ্যা ছিল ৭, সেটাই এবারে কমে দাঁড়িয়েছে ৩-এ। তবে সেইসঙ্গেই বিজেপি একুশের বিধানসভা ভোটের ন্যায় এই পুর নির্বাচনেও স্ট্রং বিরোধীদের তকমা অর্জন করে নিয়েছে পদ্ম শিবির, আর পিছিয়ে পড়েছে বাম-কংগ্রেস।
সুত্র: Press Card News