জানা-অজানা

আটলান্টিকে হারিয়ে যাওয়া রহস্যময় সুলতান

আটলান্টিকে হারিয়ে যাওয়া রহস্যময় সুলতান - West Bengal News 24

আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে মালি সাম্রাজ্য স্থাপিত হয় ১২৩৩ সালে। পরের কয়েক দশকে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। সেই সাম্রাজ্যের এক সুলতান আবিষ্কার ও সম্পদের নেশায় আটলান্টিক পাড়ি দিতে গিয়ে নিজেই হারিয়ে যান চিরতরে। সেই গল্প জানাচ্ছেন ওয়াহিদ সুজন

মানসা মুসার হজযাত্রা

গল্পের প্রধান সূত্র মানসা মুসা। যাকে বলা হয়, জ্ঞাত ইতিহাসে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। ১৩ শতকের মালির এ শাসকের সম্পদের মূল্য বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির বিচারে ৪০০ বিলিয়ন ডলার, যেখানে রথ চাইল্ড পরিবারের সম্পত্তির পরিমাণ ৩৫০ বিলিয়ন ডলার।

স্বর্ণের বিশাল মজুদ থাকলেও মালি সাম্রাজ্য বহির্বিশ্বে অতটা পরিচিত ছিল না। তবে ধর্মপ্রাণ মুসা যেবার সাহারা মরু ও মিসর পার হয়ে মক্কায় হজ পালনে যাত্রা করলেন, তখনই সেই অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করল। বলা হয়ে থাকে, ৬০ হাজার মানুষের একটি দল নিয়ে মালি ত্যাগ করেন মুসা। তীর্থযাত্রায় তার সঙ্গে ছিল পুরো মন্ত্রিপরিষদ, কর্মকর্তা, সৈনিক, কবি, ব্যবসায়ী, উটচালক এবং ১২ হাজার দাস-দাসী। এ যেন মরুর বুক দিয়ে বয়ে চলা চলন্ত এক শহর, যেখানে খাবারের জন্য ছিল পশুর এক বিশাল বহর।

আরও পড়ুন : পৃথিবীর শেষ রাস্তা, একা যাওয়া নিষেধ!

কায়রোতে মানসা মুসার ভ্রমণ সেখানকার বাসিন্দাদের মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে, এক যুগ পর যখন ইতিহাসবিদ আল-উমারি শহরটিতে যান, তখনো মানুষের মুখে মুখে ছিল মানসা মুসার স্তুতি। কায়রোতে তিন মাস অবস্থানের সময় তিনি মানুষকে যে হারে স্বর্ণ দান করেছেন তাতে পরবর্তী ১০ বছর ওই পুরো অঞ্চলে স্বর্ণের দাম তলানিতে গিয়ে পৌঁছায় ও অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। বর্তমান হিসাবে, মুসার মক্কা যাত্রার ফলে স্বর্ণের যে অবমূল্যায়ন হয় তাতে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ১৫০ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল।

আটলান্টিকের গল্প

কায়রোয় অবস্থানকালে স্থানীয় জেলা গভর্নর আবু আল-হাসান আলি ইবনে আমির হিজাবের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় মুসার। ইবনে আমির হিজাব থেকে আল-উমারির পাওয়া তথ্যই মুসাকে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করে। এর মধ্যে রয়েছে তার সিংহাসনে আসীন হওয়ার গল্প, যার সঙ্গে যুক্ত আটলান্টিক অভিযান।

মুসা জানান, উত্তরাধিকার সূত্রে রাজত্ব পাওয়াটা গতানুগতিক ধারায় হয়নি। তার পূর্বসূরি আটলান্টিক জয়ের নেশায় সিংহাসন ছেড়ে দেন। যিনি মনে করতেন, মহাসাগরের সবচেয়ে দূরবর্তী সীমা আবিষ্কার করা কোনো অসম্ভব বিষয় নয় এবং তার ইচ্ছা ছিল সেটা করে দেখানো। এ জন্য একটি অভিযানের আয়োজন করেন। এর অংশ হিসেবে ২০০ জাহাজ ভর্তি ছিল নাবিক ও অন্যান্য কর্মকর্তা, একই সংখ্যক জাহাজে নেওয়া হয় স্বর্ণ, অন্যান্য রসদ ও পানি। সব মিলিয়ে কয়েক বছর চলার মতো উপকরণে ভর্তি ছিল জাহাজগুলো।

অভিযাত্রিক দলের কাণ্ডারির প্রতি সুলতানের নির্দেশ ছিল, মহাসাগরের একদম শেষ না দেখে যেন না ফেরে বা রসদ ও পানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলতে হবে। এরপর অনেক দিন কেটে যায়, কিন্তু নৌবহরের ফিরে আসার নাম নেই। অবশেষে হতাশার খবর নিয়ে একটি জাহাজ ফিরে আসে। ওই জাহাজের ক্যাপ্টেন বলেন, হে সুলতান, আমরা দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করেছি যতক্ষণ না খোলা সাগরে শক্তিশালী স্রোতসহ একটি নদী দেখা যায়। বহরের শেষ জাহাজ ছিল আমার। অন্য জাহাজগুলো এগিয়ে যায় সেই প্রচণ্ড স্রোত ও ঘূর্ণির ওই নদীতে। এরপর কুয়াশায় তাদের আর কাউকে দেখা যায়নি ও তারা ফিরে আসেননি। আমরা জানি না তাদের কী হয়েছিল।

আরও পড়ুন : কম বয়সেই ধনী হতে চান? রপ্ত করুন এ অভ্যাসগুলো!

এসব কথা সুলতানের বিশ্বাস হয় না, তিনি সিদ্ধান্ত নেন ঘটনা তলিয়ে দেখার। সে ক্ষেত্রে তার জন্য একটা পথই উপযুক্ত মনে হয়। নিজে গিয়ে দেখে আসা, আসলে কী আছে মহাসাগরের সীমানায়। এবার আগের চেয়ে পাঁচগুণ জাহাজ প্রস্তুত করতে বললেন। এক হাজার জাহাজ প্রস্তুত করলেন নিজের ও নাবিকদের জন্য। বাকি হাজার জাহাজে নেওয়া হলো রসদ ও পানি।

লম্বা এই সফরের কারণে সিংহাসনের দায়িত্ব দিয়ে যান উত্তরসূরি কানকু মুসাকে। এরপর সুলতান আর নিজ দেশে ফিরে আসেননি। আটলান্টিকে তার কী হয়েছিল কেউ জানে না। অপেক্ষার পর একসময় অধিকার বলে মালি সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসে কানকু মুসা হয়ে যান মানসা মুসা। তার হাত ধরে মালি সাম্রাজ্য ধনসম্পদ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে যায়।

ইবনে আমির হিজাবের সঙ্গে মানসা মুসার এই কথোপকথনের রেকর্ড এই সমুদ্রযাত্রার একমাত্র ঐতিহাসিক বিবরণ। মুসা মধ্যযুগীয় আরব ঐতিহাসিক বা পশ্চিম আফ্রিকার মৌখিক ঐতিহ্যে গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেলেও আটলান্টিকে হারিয়ে যাওয়া সুলতানের গল্পটি কোথাও লিপিবদ্ধ নেই। এমনকি সেই সময় নিয়েও জানা যায় না। তবে এই ধরনের একটি সমুদ্রযাত্রার সম্ভাবনাকে বেশ কয়েকজন ঐতিহাসিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন। এর সঙ্গে আমলে নেওয়া হয় সুলতানের নাম নিয়ে বিভ্রান্তি।

আটলান্টিক পাড়ি

সমুদ্রযাত্রার জনপ্রিয় কাহিনীতে সমুদ্রে যাত্রাকারী সুলতানকে মানসা আবু বকর দ্বিতীয় বলে বর্ণনা করা হয়। কিন্তু মুসার আগে এ নামে কোনো মানসা বা সুলতান রাজত্ব করেননি। অনুমান করা হয়, মানসা মুহাম্মাদ ইবনে কু ছিলেন আটলান্টিকে হারিয়ে যাওয়া অভিযাত্রী। তার সমুদ্রযাত্রার সুনির্দিষ্ট সাল উল্লেখ নেই। যেহেতু ১৩১২ সালে মুসা ক্ষমতায় আরোহণ করেন, হয়তো এর কাছাকাছি সময়ে আটলান্টিক অভিযানে যোগ দেন আগের রাজা।

আরও পড়ুন : ৭৫ বর্গ কিমির দেশে মাত্র একটি পরিবারের বাস

মালির সাম্রাজ্য বিশ্বের বৃহত্তম মরুভূমি জুড়ে সাহারা স্বর্ণ, লবণ, তামা, খনিজ ও অন্যান্য পণ্য পরিবহন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ধনী ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সামরিক শক্তি দিয়ে পশ্চিম আফ্রিকায় প্রবেশকারী প্রায় সমস্ত বাণিজ্যের ওপর কর আরোপ করে তারা। একই সময়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স শত বছরের যুদ্ধে একে অপরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য ছিল তাদের সঙ্গী। ঠিক এ সময়ে এত ধনসম্পদের মালিক আফ্রিকান শাসকের আটলান্টিক অভিযানের কেন দরকার হয়েছিল?

আবু বকর দ্বিতীয়কে উল্লেখ করা কিছু গল্প বলা হয়, একাধিক প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও হত্যাকাণ্ডের পর নবম মানসা হিসেবে ক্ষমতা পান আবু বকর দ্বিতীয়। যে গল্প নাকি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নাটক বা টিভি সিরিজ ‘গেম অব থ্রোনস’-এর সঙ্গে তুলনাযোগ্য। আবু বকর দ্বিতীয় নামে ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি দেখেন পাওয়া সম্পত্তি তার জন্য যথেষ্ট নয়। নতুন সাম্রাজ্য ছাড়া নতুন সম্পদ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর ক্রমাগত অশ্বরোহণ তাকে হতাশ করে তুলেছিল। তখন পণ্ডিতদের কাছে শোনা আটলান্টিক মহাসাগরের ওপারের দিকে মনোযোগ দেন। তিনি সেই সম্পদ আহরণের উদ্যোগ নিলে অনেকে বলে, এ সাগর অতিক্রম করা যাবে না, এর পরেই পৃথিবীর শেষ। কিন্তু তিনি তাদের উপহাস করে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ করেই অভিযাত্রী দল পাঠান। আবার এমনও অনুমান আছে, মানসা আবু বকর দ্বিতীয় প্রচণ্ড ভ্রমণপ্রিয় ও অনুসন্ধিৎসু মনের অধিকারী ছিলেন। যা তাকে আটলান্টিক পাড়ি দিতে উদ্দীপ্ত করেছে।

নামের বিভ্রান্তি

আরব ইতিহাসবিদ ও দার্শনিক ইবনে খালদুনের বই থেকেই সুলতানের নাম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়। তবে তিনি এ বিভ্রান্তির উৎস নয়, ভুল অনুবাদ থেকে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। আল-উমারির কয়েক দশক পর ইবনে খালদুন লেখেন, মানসা হিসেবে মুসার পূর্বসূরি ছিলেন মুহাম্মদ ইবনে কু। কিন্তু বংশধারায় আবু বকরের নাম দেখে ভুল করেন ১৯ শতকের ইউরোপীয় ঐতিহাসিক ব্যারন ডি সেন।

ইবনে খালদুন থেকে অনুবাদের সময় ডি সেøন বলেন, মুহাম্মদ ইবনে কু থেকে আবু বকর হয়ে রাজত্ব মুসার হাতে যায়। এখানে ঝামেলা হয়। কারণ মূল আরবি উৎসে শুধুমাত্র বংশধারায় মুসার পূর্বপুরুষ হিসেবে আবু বকরের উল্লেখ রয়েছে। আর মুসার বাবাকে মুখে মুখে প্রচলিত গল্প ফাগা লেয়ে বলা হয়। বলা হয়ে থাকে, তাদের গল্প থেকে ওয়াল্ট ডিজনির বিখ্যাত ‘দ্য লায়ন কিং’ অনুপ্রাণিত। কিন্তু তিনি শাসক ছিলেন না, ছিলেন মালি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সানজাতার ভাই। অবশ্য মানসা হিসেবে পরে আরও একজন আবু বকর সিংহাসনে আরোহণ করেন। তবে তিনি ছিলেন সুকারার পূর্বসূরি ও সানজাতার মেয়ের দিক থেকে নাতি। এ ছাড়া কিছু ইতিহাসবিদ বিস্তারিত বিবরণ ছাড়াই বলেছেন, সমুদ্রযাত্রায় গিয়েছিলেন মানসা কু।

অভিযাত্রার পরিণতি

কলম্বাসের আগে আমেরিকার আবিষ্কারের গল্প বিশ্বাস করেন কৃষ্ণাঙ্গ অনেক পণ্ডিত। এ দলে শ্বেতাঙ্গরাও আছে। এখানে বলতেই হয় জনপ্রিয় ধারায় এখন আবু বকর দ্বিতীয়ই সেই অভিযাত্রী হিসেবে বর্ণিত হন। যেমন মালির ইতিহাসবিদ গাদৌসু দিয়াওয়ারা দাবি করেন, আবু বকর দ্বিতীয় আমেরিকা যেতে না পারলেও ব্রাজিলে অবতরণ করেন ও সেখানেই বসবাস করেন।

আরও পড়ুন : জুতা পরিষ্কার রাখার সহজ উপায়

দিয়াওয়ারা ও অন্য কৃষ্ণাঙ্গদের আটলান্টিক পাড়ি দেওয়া নিয়ে অনেক ধরনের প্রমাণ দেখান। ‘দ্য জার্নাল অব নিগ্রো হিস্ট্রি’র প্রতিষ্ঠাতা ও ইতিহাসবিদ কার্টার জি উডসনের মতে, আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে একসময় খুব উন্নত মানুষ ছিল যারা ভূমধ্যসাগরীয় সভ্যতা দ্বারা বিশ্বের সভ্যতাকে প্রভাবিত করেছিল, তারা তাদের সংস্কৃতিকে এক মধ্যবর্তী সময় জুড়ে বিস্তৃত করেছে তা নিয়ে তাদের সন্দেহ নেই। এটা মনে রাখা হবে, ইউরোপের তুলনায় আমেরিকার কাছাকাছি আফ্রিকা।

এ ছাড়া প্রাক-কলম্বাস যুগের মেক্সিকোর অধিবাসীদের চুলের ছাঁট বা গুয়াতেমালা পর্যন্ত সংগৃহীত ভাস্কর্যসহ অন্যান্য নিদর্শনে কৃষ্ণাঙ্গদের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে অনেকে দাবি করেন। পোলিশ বিজ্ঞানী আন্দ্রেজ উইয়েরসিনস্কি এমন কিছু প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানানো হয়। এ ছাড়া তিন খণ্ডের ‘আফ্রিকা ইন দ্য ডিসকভারি অব আমেরিকা’ প্রকাশ করে হার্ভার্ডের অধ্যাপক লিও উইনার অন্যান্য প্রমাণের সঙ্গে নেটিভ আমেরিকানদের ভাষায় আফ্রিকান শব্দের ব্যবহার দেখান। এসবের সঙ্গে মানসা কু’র সম্পর্ক কোথায়? ১৯৭০ এর দশকে রুটগার্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইভান ভ্যান সার্টিমা দাবি করেন, ইউরোপের রোমান সাম্রাজ্যের চেয়ে বড় মালি সাম্রাজ্যের অধিপতি সেনেগাল নদী হয়ে আটলান্টিক পৌঁছেছিলেন। আরও দাবি করেন, কলম্বাসের তৃতীয় যাত্রার আগে পর্তুগালের রাজা জন দ্বিতীয় গিনি উপকূল থেকে পণ্যবাহী ক্যানো (নৌকা) পশ্চিমে যাত্রা করতে দেখেছেন।। সেই তথ্যের ভিত্তিতে যাত্রাপথ তৈরি হয়েছিল। বিশপ বার্তোলোম দে লাস কাসাসের তৈরি কলম্বাসের লগে এর প্রমাণও দেয়। এ ছাড়া কলম্বাসের আমলে ক্যারিবিয়ান দ্বীপ হিস্পানিওলার স্থানীয় বাসিন্দারা দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে আসা কালো মানুষের কথা উল্লেখ করেছিল, সেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের বল্লমের বর্ণনা রয়েছে।

ইতিহাসে নেই

অবাক করা বিষয় হলো, প্রাচীন মালির ইতিহাস বা লোকগাথায় আটলান্টিক অভিযানের এ দুঃসাহসী প্রচেষ্টা লিপিবদ্ধ নেই। প্রশ্ন একটাই তবে; কেন? প্রাচীন আফ্রিকা নিয়ে গবেষণায় সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া উৎস হলেন গ্রিয়টস। আফ্রিকার আদি ঐতিহাসিক নামে পরিচিত এ শ্রেণিতে ছিলেন একইসঙ্গে ইতিহাসবিদ, গল্পকার, কবি ও গায়ক। যারা মৌখিকভাবে ইতিহাস নানান ফর্মে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেন। কিন্তু অদ্ভুতভাবে গ্রিয়টসরা আটলান্টিক অভিযাত্রীর দুঃসাহসী প্রচেষ্টা নিয়ে নীরব। এর একটি উত্তর দিয়েছেন ইতিহাসবিদ দিয়াওয়ারা। তিনি মনে করেন ১২ শতকের মালির সমসাময়িক ধারণার নিরিখে মানসা কু’র কাজটা সাহসী ছিল না। তার ক্ষমতা থেকে পদত্যাগকে লজ্জাজনক কাজ বলে মনে করেছেন গ্রিয়টসরা। তাই শুধু সুলতানের প্রশংসা করতে অস্বীকারই করেননি তারা, মানসা কু’র অভিযান নিয়ে মন্তব্য করতেও নারাজ ছিলেন।

অমীমাংসিত গল্প

মুহাম্মদ ইবনে কু’র আসলে কী হয়েছিল, ভবিষ্যতে জানা যাবে অথবা যাবে না। তাই বলে তাকে নিয়ে গল্পগাথা থেমে থাকবে না, এমন তো নয়। এখনো পর্যন্ত মানসা মুসার গল্প ধরে যে কথাগুলো পরবর্তী অনুসন্ধানীরা বলেন, তাতে অভিযানটি প্রমাণসহ চিহ্নিত করা মুশকিল। প্রাক-কলম্বাস যুগে আফ্রিকা ও আমেরিকার যোগাযোগের যে প্রমাণের কথা বলা হয়, সে সবের কোনোটিই বিতর্কহীন নয়। মালির জাহাজগুলো আমেরিকায় পৌঁছেছে কি না যেমন জানা যায় না, তেমনি দেশেও ফেরার বিষয়টিও। আর সব মিলিয়ে এর ফলাফলে কোনো দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য সম্পর্কও তৈরি হয়নি। এটুকুই আমরা জানি। এ ছাড়া প্রত্নতত্ত্ববিদ, নৃতত্ত্ববিদ, নৃ-ইতিহাসবিদ, ভাষাবিদ ও প্রাক-কলম্বাস যুগ নিয়ে গবেষণারত পণ্ডিতদের বড় একটি অংশ বলে থাকেন, তারা এমন কোনো সমুদ্রযাত্রার প্রমাণ পাননি। আর অন্যরা যে প্রমাণের কথা বলেন তাও অপর্যাপ্ত। কিন্তু মালির অধিবাসী বা অনেক মুসলমানের কাছে এই অমীমাংসিত গল্পও অনেক গৌরবের। বিশেষত মালির জাতীয় ইতিহাস ও রাজনীতিতে; যেখানে অতীতের বিজ্ঞান ও আবিষ্কারের গল্প গৌরবের সঙ্গে উদ্যাপিত হয়।

আরও পড়ুন ::

Back to top button