রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসে এখন বিদ্রোহের আগুন। দলের অন্দরের কলহ বাইরে প্রকাশ পাচ্ছে।
শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) জানা যায়, তৃণমূলের সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
একই দিনে, মমতার ভোটকুশলী পিকে’র কোম্পানি আইপ্যাক’এর অফিসিয়াল টুইটার থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘আনফলো’করে দিয়েছিল। যদিও সন্ধ্যের পর আবার ফলো করেছে। এরইমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাকি থাকা পৌরসভায় প্রার্থী তালিকা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। সবকিছু মিলিয়ে দলের অন্দরের পরিবেশ নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তিতে তৃণমূল প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই পরিস্থিতিতে শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) কালীঘাটের নিজ বাসভবনে তড়িঘড়ি দলীয় বৈঠক ডেকেছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সূত্রের খবর, তৃণমূলের সব শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী। যদিও তৃণমূল সূত্রের দাবি, দলীয় সংগঠন এবং পৌরভোট নিয়ে আলোচনা করতেই বৈঠক ডেকেছেন নেত্রী। তবে বৈঠকের কারণে জরুরি তলব পাঠানো হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
আরও পড়ুন : খুনের পর এবার ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা
এই মুহূর্তে গোয়ায় আছেন অভিষেক। তিনি বৈঠকে থাকবেন কিনা এখনও স্পষ্ট নয়। গত কয়েকদিন ধরে এবং বিশেষ করে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) যেভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মমতার মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে পাশাপাশি ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাক নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। সে কারণেই এই বৈঠক বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।
জানা গেছে, ইতোমধ্যেই মমতা ঘনিষ্ঠ শীর্ষ নেতৃত্বরা প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাক নিয়ে নেত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন। আপত্তি তুলেছেন সংস্থার কাজকর্ম নিয়ে। এই অবস্থায় দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি সুব্রত বক্সি ও মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা নেতৃত্বদের বৈঠকে বেশকিছু কড়া বার্তা দিতে পারেন মমতা।
তবে মমতার কাছে আরও একটি অস্বস্তির কারণ হলো, এক প্রকার দূরত্ব যেনো তৈরি হচ্ছে নিজের পরিবারের তরুণ প্রজন্মদের থেকে। তৃণমূলের অভিষেকের সমর্থকরা ছাড়াও খোদ পরিবারের অনেকেই ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ দাবির সমর্থনে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। এর মধ্যে আছেন আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়, অগ্নিশা বন্দ্যোপাধ্যায়। আকাশ ও অগ্নিশা হলেন অভিষেকের চাচাতো ভাইবোন। এমনকি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফুফাতো বোন অদিতি গায়েনও ওই দাবির সমর্থনে মুখ খুলেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতার স্লোগান ছিল ‘এক ব্যক্তি এক পদ’, প্রথমে তা মেনে চললেও পরে কলকাতা পৌরসভা নির্বাচন থেকে সরে এসেছেন স্বয়ং নেত্রী। সে কারণে করপোরেশন ভোটে ৫ জন বিধায়ক এবং একজন সংসদ সদস্যকে কউন্সিলর পদে প্রার্থীও করেছিলেন। যারমধ্যে অন্যতম মমতা ঘনিষ্ঠ ফিরাদ হাকিম, তিনি একদিকে যেমন পশ্চিমবঙ্গের পরিবহন মন্ত্রী তেমনি কলকাতার মেয়র। বাকিরা তো সংসদ সদস্য- বিধায়কের পাশাপাশি ওয়ার্ডের কাউন্সিলার। অভিষেক ঘনিষ্ঠদের কথায় সবার জন্য এক নিয়ম থাকুক। একই নিয়ম দেখিয়ে কৃষ্ণনগরের সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্রসহ অনেককেই সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে দল। তাহলে শুধুমাত্র নেত্রী ঘনিষ্ঠরা এই সুবিধা পাবে কেনো?
তবে ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ এই দাবির বিষয়ে, এদিন দলের তরফে মুখ খুলছেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি এদিন বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমে চলা, ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ সমর্থন করে না দল। সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন নীতি নির্ধারণ করবেন। একইসঙ্গে দলের কর্মী, অনুগামীদের প্রতি তার বার্তা, দলের নিয়ম মেনে চলুন। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট ছড়িয়ে বিভ্রান্ত করবেন না।
ফলে সব মিলিয়ে শনিবারের মমতার ডাকা বৈঠক থেকে নেত্রী কি বার্তা দেয় তার দিকেই তাকিয়ে আছে মমতা-অভিষেক, দুই তরফের ঘনিষ্ঠরা।