আন্তর্জাতিক

শৈশবে প্রধানমন্ত্রীর অভিনয় করা লিজ ট্রাস যেভাবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী

Liz Truss Life History : শৈশবে প্রধানমন্ত্রীর অভিনয় করা লিজ ট্রাস যেভাবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী - West Bengal News 24

ব্রিটেনের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন লিজ ট্রাস। দায়িত্ব নেয়ার পর তার সম্পর্কে অজানা অনেক তথ্য বেরিয়ে আসছে। এর মধ্যে সবচেয়ে চমক তথ্য হলো-শৈশবে ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন লিজ।

সোমবার ঘোষিত ফলাফলে ভোটদাতা ৮২.৬ শতাংশ ভোটারের মধ্যে লিজ ট্রাস পেয়েছেন ৮১ হাজার ৩২৬ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাক ভোট পেয়েছেন ৬০ হাজার ৩৯৯টি।

শৈশবের লিজ ট্রাস
প্রকৃত নাম এলিজাবেথ ট্রাস। রাজনীতির দুনিয়ায় পরিচিত লিজ ট্রাস নামে। ১৯৮০-র দশকে মার্গারেট থ্যাচার ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। বছর সাতেকের লিজ তখন স্কুলে থ্যাচারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন। তবে পরবর্তীতেও মনে রেখেছেন সেদিন।

সংবাদমাধ্যমকে ট্রাস বলেন, আমি স্কুলে মক পোলে প্রধানমন্ত্রী থ্যাচার সেজে প্রার্থী হয়েছিলাম। স্কুলের সাজানো ভোটারদের খুব আবেগের সঙ্গে আমাকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু একটাও ভোট পাইনি। শুধু তাই না, নিজেও নিজেকে ভোট দিইনি।

Liz Truss Life History : শৈশবে প্রধানমন্ত্রীর অভিনয় করা লিজ ট্রাস যেভাবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী - West Bengal News 24
লিজ ট্রাসের শৈশবের ছবি

লিজের পরিবার ও রাজনীতি
উত্তর ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে ১৯৭৫ সালে জন্ম। বাবা ছিলেন অংকের অধ্যাপক, মা নার্স- দুজনেই বামপন্থী। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের দাবিতে ছোট লিজ তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রচারে অংশ নিতেন। মার্গারেট থ্যাচারের সরকার লন্ডনের পশ্চিমে রয়্যাল এয়ার ফোর্সের গ্রিনহাম ঘাঁটিতে মার্কিন পরমাণু অস্ত্রবাহী যুদ্ধাস্ত্র বসানোর অনুমতি দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন ছোট লিজ। ব্রিটেন থেকে রাজতন্ত্র অবসানের দাবিতে হওয়া মিছিলেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন ট্রাস। উদারপন্থী লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের সঙ্গে ছিলেন। পরবর্তীতে সেই দলের সক্রিয় কর্মী।

বিয়ে-পরিবার ও সন্তান
২০০০ সালের শুরুর দিকে সহকর্মী অ্যাকাউন্টটেন্ট হিউ ও’লিয়ারিকে বিয়ে করেন। তিনি দুই সন্তানের মা।

Liz Truss Life History : শৈশবে প্রধানমন্ত্রীর অভিনয় করা লিজ ট্রাস যেভাবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী - West Bengal News 24
স্বামীর সঙ্গে লিজ ট্রাস

লিজ ট্রাসের লেখাপড়া ও রাজনীতি
ট্রাসের বয়স যখন চার, ট্রাস পরিবার গ্লাসগোর পশ্চিমে পেসলি অঞ্চলে গিয়ে বসবাস শুরু করে। পরে চলে যায় উত্তর ইংল্যান্ডের লিডসেতে। সেখানেই রাউন্ড হে নামে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে লিজ ট্রাসের লেখাপড়া। উচ্চশিক্ষা অক্সফোর্ডে। সেখানে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে লেখাপড়া করেন। ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

১৯৯৪ সালে লিবারেল পার্টির সম্মেলনে লিজ ট্রাসের বক্তব্য ছিল, আমরা লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা সবার জন্য সমান সুযোগের আদর্শে বিশ্বাসী। শাসন করার অধিকার নিয়ে কেউ জন্মেছে, একথা আমরা বিশ্বাস করি না। গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ইস্যুতে আমরা গণভোট নেয়ায় বিশ্বাসী।

কনজারভেটিভ পার্টিতে যোগদান
ট্রাস আগের অবস্থান ভুল ছিল বলে দাবি করেন। স্নাতক হওয়ার পর অক্সফোর্ডে থাকাকালীনই ১৯৯৬ সালে কনজারভেটিভ পার্টিতে যোগ দেন। অ্যাকাউন্টটেন্ট হিসেবে শেল ও কেবল অ্যান্ড ওয়ালেস কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন।

২০০১ সালে উত্তর ইংল্যান্ডে পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের এক কেন্দ্র থেকে ভোট দাঁড়ান। কিন্তু হেরে যান। ২০০৫-এ অন্য এলাকায় প্রার্থী হয়েও সাফল্য পাননি। শেষে ২০০৬ সালে দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের গ্রেনিচ থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে আর্থিক সংস্কার নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।

লিজের কলঙ্ক ও রাজনীতি
ডেভিড ক্যামেরন ২০১০ সালে তার দক্ষিণ-পশ্চিম নরফোকে এক কেন্দ্রে প্রার্থী করেন। কিন্তু এক এমপির সঙ্গে প্রেমের খবর ফাঁস হওয়ায় ভোটের ফল নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ১৩ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেন ট্রাস। ২০১২ সালে শিক্ষামন্ত্রী হন। ২০১৪ সালে পরিবেশমন্ত্রী হন। টেরেসা মে-এর শাসনে আইনমন্ত্রী ও অর্থ দফতরের মুখ্যসচিব হন। ২০১৯-এ বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর লিজ ট্রাস বাণিজ্যমন্ত্রী হন। ২০২১ সালে হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

লিজের দুর্বলতা ও রাজনীতি
তিনজন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে ছয়টি দফতরের মন্ত্রিত্ব সামলানোর পরও জনগণের কাছে সেভাবে পরিচিত নন। ব্রেক্সিট ইস্যুতে প্রথমে ইউরোপের সঙ্গে থাকার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু গণভোট ব্রেক্সিটপন্থীরা জিততেই ১৮০ ডিগ্রি বদলে যান। ব্রেক্সিটের পক্ষে সুর চড়ান। সমালোচকদের অভিযোগ, তিনি হাওয়া বুঝে চলেন। এখন তার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বলতে- ব্রিটেনের মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার বাড়ন্ত ব্যয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আসন্ন শীতে জ্বালানি গ্যাসের ঘাটতি।

আরও পড়ুন ::

Back to top button