উত্তর দিনাজপুর

ফের রক্তাক্ত কালিয়াগঞ্জ, এবার পুলিশের গুলিতে প্রাণ গেল এক যুবকের

Manoj Kumar Barman

ফের রক্তাক্ত কালিয়াগঞ্জ, এবার পুলিশের গুলিতে প্রাণ গেল এক যুবকের - West Bengal News 24

বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছন ছাড়ছে না কালিয়াগঞ্জের। পরপর গণধর্ষণ, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে বিক্ষোভরত গ্রামবাসীদের থানা ঘেরাও এবং কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারদের উপর হামলা ইত্যাদিতে যখন ক্রমশ উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। আর ঠিক সেই সময় আবারো বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে কালিয়াগঞ্জ। আর এবার গভীররাতে পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল বছর তেত্রিশের তরতাজা এক যুবকের দেহ।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে কালিয়াগঞ্জের রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন চাঁদগাও গ্রামের বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় বর্মন গত রাতে এক বিয়ের প্রীতিভোজ অনুষ্ঠান খেতে এসেছিলেন। আর ঠিক সেই সময় বিজেপির স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিষ্ণু বর্মনের খোঁজে আসা পুলিশ কর্মী নিরপরাধ মৃত্যুঞ্জয় বর্মনের উপর দুই রাউন্ড গুলি চালায়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে গত মঙ্গলবার কালিয়াগঞ্জ থানায় গ্রামবাসীদের অগ্নিসংযোগ এবং কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের উপর চড়াও হওয়ার পরপরই পুরো এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। চলছে ক্রমাগত পুলিশি ধরপাকড়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে যে মৃত মৃত্যুঞ্জয় বর্মন স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপির সদস্য বিষ্ণু বর্মনের ভাই। তিনি কর্মসূত্রে বাড়ির বাইরে থাকেন।

বিষ্ণু বর্মনকে বাড়িতে না পেয়ে নিরপরাধ মৃত্যুঞ্জয় বর্মনের উপর পুলিশ অকারণেই গুলি চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিমত। গত বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি ফিরে বিষ্ণু বাবু সংবাদমাধ্যমের সামনে অভিযোগ করেন, বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে মৃত্যুঞ্জয় কে খুন করেছে পুলিশ। তার অভিযোগ গত রাতে আড়াইটার সময় পুলিশ দরজা ভেঙে তার বাড়িতে ঢোকে। গতকাল তিনি বাড়িতে ছিলেন না।

ফের রক্তাক্ত কালিয়াগঞ্জ, এবার পুলিশের গুলিতে প্রাণ গেল এক যুবকের - West Bengal News 24

পুলিশ বাড়িতে তাকে না পেয়ে তার ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবা এবং বিয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে আসা জামাইবাবুকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। বিষ্ণু বাবুর স্ত্রী ও কন্যা প্রথমে পুলিশকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং জানায় বিয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসেছে জামাই।

ইতিমধ্যে সেখানে উপস্থিত হয় বিষ্ণু বাবুর খুড়তুতো ভাই মৃত্যুঞ্জয়। বছর তেত্রিশের মৃত্যুঞ্জয় কর্মসূত্রে থাকেন শিলিগুড়িতে। বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্যই তিনি কয়েকদিন আগে বাড়ি ফিরেছিলেন। বৃদ্ধ জেঠাকে পুলিশ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে দেখে তিনি আর চুপ করে বসে থাকতে পারেননি জড়িয়ে ধরেন জেঠাকে। মৃত্যুঞ্জয় বাধা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক পুলিশ কর্মী গুলি চালায়।

প্রথম গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও পরবর্তী গুলিটি সরাসরি বুকে এসে লাগে মৃত্যুঞ্জয়ের এবং সেখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তিনি। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন এবং পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মৃত্যু দেহটি নিয়ে যায়। আর এই গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কালিয়াগঞ্জ এলাকায়।

গত বুধবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্সের পর পুলিশ অতি সক্রিয়ভাবে গ্রামবাসীদের উপর অত্যাচার করছে বলে অভিযোগ রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এটা রাষ্ট্রীয় অত্যাচার এবং সন্ত্রাসের চরমতম নিদর্শন। দিকে দিকে গণ বিদ্রোহে রাজ্যে যখন আগুন জ্বলছে তখন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী রোমান সম্রাট নিরোর মত আনন্দ উল্লাসে মেতে রয়েছেন।

তিনি আরো বলেন গতকালের প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে কালিয়াগঞ্জের মানুষের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী যুদ্ধ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ তার প্রমাণ দিয়ে দিল। এই নৃশংস হত্যার দায় ওনাকেই নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সমস্ত জনগণকে গণতান্ত্রিকভাবে এই হিংসা এবং রক্তপাতের বিরুদ্ধে তাদের আওয়াজ জোড়ালো করার আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুন ::

Back to top button

দয়া করে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিন

দেখে মনে হচ্ছে আপনি কোনও বিজ্ঞাপন ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমরা বিজ্ঞাপনের উপর ভরসা করি ওয়েবসাইটের ফান্ডের জন্য