জম্মু-কাশ্মীর হামলার পর পাল্টা পদক্ষেপ: পাকিস্তানের শীর্ষ কূটনীতিককে মধ্যরাতে ডেকে নির্দেশ দিল ভারত, দেশ ছাড়তে বলা হল এক সপ্তাহে
ওয়েস্ট বেঙ্গল নিউজ ২৪
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকায় পর্যটকদের উপর ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত। বুধবার রাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই রাতেই নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানের এক শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করে হাতে তুলে দেওয়া হয় দ্রুত দেশ ছাড়ার নির্দেশপত্র। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি, তবে সংবাদ সংস্থা “এএনআই” এ বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য দিয়েছে।
“এএনআই”-এর তথ্য অনুযায়ী, ডাকা হয় ভারতে নিযুক্ত পাক কূটনীতিক সাদ আহমেদ ওয়ারাইচকে। একই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়, নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনে নিযুক্ত ‘প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা’, ‘নৌ উপদেষ্টা’ ও ‘বায়ু উপদেষ্টা’-কে ‘অবাঞ্ছিত’ (পার্সোনা নন গ্রাটা) হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। ভারতীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়, এই তিনজন সামরিক উপদেষ্টাকে আগামী সাত দিনের মধ্যে দেশ ছাড়তে হবে। সূত্রের খবর, ওই কূটনীতিকের হাতে এই সিদ্ধান্তের অফিসিয়াল চিঠি তুলে দেওয়া হয় এবং ভারতীয় ভূখণ্ডে তাঁদের উপস্থিতি “অগ্রহণযোগ্য” বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার আগে, বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে একটি জরুরি বৈঠকে বসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি (সিসিএস)। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা সেই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।
সেই সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে অন্যতম হল, যতক্ষণ না পাকিস্তান সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ করছে, ততক্ষণ “সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি” স্থগিত রাখা হবে। পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে “আট্টারি-ওয়াঘা সীমান্ত”। যাঁরা বৈধ নথি নিয়ে এই সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের “১ মে”-র মধ্যে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
ভারতের আরও ঘোষণা, ‘সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্প (এসভিইএস)’-এর আওতায় পাকিস্তানি নাগরিকদের আর ভারতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। পূর্বে যাঁরা এই ভিসায় দেশে এসেছেন, তাঁদের অনুমতিও বাতিল করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছে, বর্তমানে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানিদের “৪৮ ঘণ্টার” মধ্যে দেশ ছাড়তে হবে।
এছাড়াও পাকিস্তানের সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কারের পাশাপাশি নয়াদিল্লিতে পাক দূতাবাসের মোট সদস্য সংখ্যা “৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০” করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় ও ১ জন নেপালি নাগরিক। অভিযোগ উঠেছে, ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়। শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল বলে জানায় স্থানীয় সূত্র। এই ঘটনার পরপরই তিন বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয় কেন্দ্র এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।