মার্কিন হস্তক্ষেপে সংঘর্ষবিরতি মেনে নেওয়া নিয়ে মোদিকে নিশানা কংগ্রেসের, স্মরণ ইন্দিরার দৃঢ় অবস্থানের
ওয়েস্ট বেঙ্গল নিউজ ২৪
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়েছে আমেরিকা। শনিবার দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ থামানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করে জানান যে, উভয় দেশ সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ট্রাম্প আরও “ফের শান্তি ফেরার আগাম শুভেচ্ছা” জানিয়েছেন। এর পরেই ভারতীয় বিদেশসচিব সাংবাদিকদের সামনে জানান যে, পাকিস্তানের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আপাতত সীমান্তে সংঘাত বন্ধ রাখতে ভারত রাজি হয়েছে। এই সংঘর্ষবিরতি চলবে ১২ মে পর্যন্ত। সেই দিন আবার দুই দেশের DGMO (Director General of Military Operations) পর্যায়ে বৈঠক হবে।
এই পরিস্থিতিতে, আমেরিকার এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে— “কেন প্রধানমন্ত্রী মোদি মার্কিন হস্তক্ষেপ মেনে নিলেন?” পাশাপাশি, তারা স্মরণ করিয়েছে একাত্তরের যুদ্ধকালীন ইন্দিরা গান্ধীর অবস্থান। সোশ্যাল মিডিয়ায় কংগ্রেস নেতাদের দাবি, ‘আজ দেশ ইন্দিরা গান্ধীজির অভাব অনুভব করছে।’
প্রশ্ন উঠছে, এই সংবেদনশীল সময়ে কংগ্রেস কেন হঠাৎ ইন্দিরার প্রসঙ্গ টেনে আনল? এটি কি শুধুই বর্তমান সরকারের কৃতিত্ব খাটো করার কৌশল, না কি সময়োপযোগী এক রাজনৈতিক তুলনা? বিতর্ক চলছেই। তবে বিষয়টি বুঝতে হলে ইতিহাসে ফিরতে হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত প্রত্যক্ষ সামরিক সহায়তা দিয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের সুসম্পর্ক সেই সিদ্ধান্তের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচারে তখন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ, বিশেষত বাংলাভাষীরা চরম সঙ্কটে পড়েন। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয় এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে রণক্ষেত্রে নামে। সেই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ইন্দিরা গান্ধীকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বলেন। ইন্দিরার উত্তর ছিল, ”হিংসার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের মেরুদণ্ড সোজা। যথেষ্ট ইচ্ছাশক্তি এবং সম্পদ রয়েছে আমাদের। সেই সময় অতীত যখন শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গ হওয়ায় তিন, চার হাজার মাইল দূর থেকে কেউ ভারতীয়দের নির্দেশ দিত, নিজেদের ইচ্ছে চাপিয়ে দিত।”
কংগ্রেসের বক্তব্য, আজকের পরিস্থিতিতে মোদি সরকার কেবল মার্কিন প্রেসিডেন্টের আহ্বানেই সংঘর্ষবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের প্রশ্ন, “যে ইন্দিরা গান্ধী আমেরিকার চাপে মাথা নোয়াননি, আজ মোদি সরকার কেন সম্মতি দিল?” তাদের মতে, দেশ এখন এমন একজন নেতার অভাবে ভুগছে যিনি ইন্দিরার মতো সাহস ও দৃঢ়তা দেখাতে পারেন।