পাকিস্তানে বিয়ের জন্য নিজের ধর্ম পালটে ফেলে জ্যোতি মালহোত্রা? যা জানাল পুলিশ
ওয়েস্ট বেঙ্গল নিউজ ২৪

হরিয়ানার ইউটিউবার ও জনপ্রিয় ট্রাভেল ভ্লগার জ্যোতি মালহোত্রাকে সম্প্রতি পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে হরিয়ানা পুলিশ। তাঁর ইউটিউব চ্যানেল ‘Travel With Jo’ নামেই পরিচিত। পুলিশের দাবি, ইউটিউব কনটেন্ট তৈরির ছুতোয় পাকিস্তানে গিয়ে তিনি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন এবং দেশে ফিরে গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েন। এই মামলায় জ্যোতির পাশাপাশি আরও ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। গোটা ঘটনায় ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি প্রবল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
পাক হাই কমিশনের অফিসারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক
তদন্তে উঠে এসেছে, জ্যোতি মালহোত্রার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তান হাই কমিশনের এক আধিকারিক দানিশ-এর সঙ্গে। জ্যোতি নিজেই এই বিষয়টি স্বীকার করেছেন। দানিশের সঙ্গে জ্যোতির কথোপকথন ও যোগাযোগের যথেষ্ট প্রমাণ তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। জানা গেছে, দানিশই প্রথম জ্যোতিকে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন কর্মীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
দানিশের মাধ্যমেই জ্যোতির পরিচয় হয় আলি আওহান নামে এক পাকিস্তানি নাগরিকের সঙ্গে। এরপর পাকিস্তানে জ্যোতির থাকার ব্যবস্থা করে দেন আলি আওহান। শুধু তাই নয়, জ্যোতির পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় আরও দুই সন্দেহভাজন ব্যক্তির সঙ্গে — শাকির এবং রানা শেহবাজ। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই চক্রের মাধ্যমেই জ্যোতিকে ধাপে ধাপে গুপ্তচরবৃত্তির জগতে টেনে আনা হয়।
বিয়ের প্রস্তাব এবং ধর্মান্তরের গুজব
তদন্তে সবচেয়ে বিস্ময়কর যে তথ্যটি সামনে এসেছে, তা হলো — জ্যোতি মালহোত্রা পাকিস্তানি আধিকারিক দানিশকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তানে আমায় বিয়ে করো”, এবং সেই কথোপকথনের অডিও ও চ্যাট প্রমাণ পুলিশ পেয়েছে।
যদিও বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছিল, জ্যোতি ধর্ম পরিবর্তনের পরিকল্পনা করেছিলেন কিনা, সে বিষয়ে হিসার পুলিশের তরফে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, ধর্মান্তরের কোনও প্রমাণ মেলেনি। একইসঙ্গে, তাঁর পাকিস্তানি গোয়েন্দা আধিকারিক বা কোনও অন্য পাক নাগরিকের সঙ্গে বিবাহ হয়েছে — এমন তথ্যও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দিল্লিতে দানিশকে ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’ ঘোষণা
ভারত সরকার ইতিমধ্যেই পাক হাই কমিশনের ওই আধিকারিক দানিশকে ‘persona non grata’ (অবাঞ্ছিত ব্যক্তি) ঘোষণা করেছে এবং তাঁকে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে অভিযোগ, দানিশ কূটনৈতিক পদমর্যাদার অপব্যবহার করে দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক কাজে যুক্ত ছিলেন।
জ্যোতির ইউটিউব চ্যানেল এবং পাকিস্তান সফর
‘Travel With Jo’ নামক ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করেন জ্যোতি। এই চ্যানেলের ভিডিও তৈরির অজুহাতেই তিনি একাধিকবার পাকিস্তানে যান। তবে তদন্তকারীদের দাবি, ভিডিও তৈরির আড়ালে তাঁর আসল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং ভারতে ফিরে সেই তথ্য হস্তান্তর করা।
অন্যান্য ইউটিউবারদের সঙ্গেও যোগাযোগ
তদন্তে আরও জানা গেছে, দানিশের নির্দেশেই জ্যোতি ভারতের আরও কিছু ইউটিউবার ও ভ্লগারের সংস্পর্শে আসেন। তবে তাঁদের সঙ্গে জ্যোতির ঠিক কী ধরনের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, এবং সেই সম্পর্ক কতটা এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল — তা এখনও তদন্তাধীন। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি।
তদন্ত চলমান
বর্তমানে গোটা ঘটনাটি নিয়ে হিসার পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি যৌথভাবে তদন্ত চালাচ্ছে। জ্যোতি মালহোত্রার মোবাইল ফোন, ইমেল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট এবং ব্যাঙ্ক লেনদেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীদের মূল লক্ষ্য, এই গোটা চক্রে আর কে কে যুক্ত এবং কী ধরনের তথ্য দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছিল।
এই ঘটনার জেরে দেশের ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়া দুনিয়ায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, অনলাইন কনটেন্ট তৈরির আড়ালে কতজন বিদেশি সংস্থার হয়ে কাজ করছেন, তার পূর্ণ নজরদারি প্রয়োজন।
এই মামলার আপডেট জানতে এখন গোটা দেশের নজর রয়েছে হরিয়ানা পুলিশের তদন্তের দিকে।