রাশিফল ও ভবিষ্যৎ

জগন্নাথদেবের মতোই স্নানযাত্রা পালিত হয় মহাপীঠ কালীঘাটেও

ওয়েস্ট বেঙ্গল নিউজ ২৪

জগন্নাথদেবের মতোই স্নানযাত্রা পালিত হয় মহাপীঠ কালীঘাটেও - West Bengal News 24

শ্রীক্ষেত্র পুরী ও কালীঘাটের দূরত্ব যতই হোক না কেন, দুটি তীর্থক্ষেত্রেই উপাসনার নিয়মে যেমন কিছু পার্থক্য রয়েছে, তেমনই রয়েছে কিছু আশ্চর্য মিল। যদিও উপাসনার ধরণে তফাৎ চোখে পড়ে, তবু শেষ পর্যন্ত সমস্ত উপাসনাই এক সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছেই পৌঁছায়। এই তফাত আর মিলের অনন্য দৃষ্টান্তই উঠে আসে “স্নানযাত্রা” উপলক্ষে।

পুরীর “Puri Jagannath Temple”-এ জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমায় জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা পালন করা হয়। এই দিনটিকে তাঁর আবির্ভাব তিথি বলেই মানা হয়। সেই উপলক্ষে রত্নবেদী থেকে বেরিয়ে এসে স্নানমণ্ডপে প্রভুর স্নানের আয়োজন হয়। এই পুণ্য অনুষ্ঠানে যারা ভক্তিভরে অংশ নেন, তাঁদের চক্রবদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা ধর্মশাস্ত্রে বলা আছে। যদিও এই রীতি সরাসরি “শাক্তমতের” অন্তর্ভুক্ত নয়, তথাপি কালীঘাটেও একই রকম এক অনুপম রীতির অনুসরণ হয়। “Jagannath Dev”-এর মতোই এখানে সতীঅংশকে স্নান করিয়ে পুজো করা হয়।

“Kalighat Temple”-এ সতীর পদাঙ্গুলি পতিত হয়েছিল— একে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে মহাপীঠ। কথিত আছে, “স্নানযাত্রা”-র দিনেই দুই ব্রহ্মচারী— আত্মারাম ব্রহ্মচারী ও ব্রহ্মানন্দ গিরি— হ্রদ থেকে সতীঅঙ্গটি উদ্ধার করে, মন্ত্রোচ্চারণ সহকারে প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের দেখানো পথেই আজও এই দিনটিতে সেই পদাংশকে পুনরায় স্নান করানো হয়। এই প্রথা অত্যন্ত গোপনীয়, একান্ত ভক্তিসম্পন্ন এবং আধ্যাত্মিক আবহে পরিপূর্ণ।

বর্তমানে সতীঅঙ্গটি রুপোর বাক্সে, দেবী দক্ষিণাকালীর বিগ্রহের নিচে সযত্নে রক্ষিত রয়েছে। যেহেতু এই দিনে সেই পুণ্যদেহাংশ উদ্ধার হয়েছিল, তাই প্রতিবছর “স্নানযাত্রা”য় বিশেষ রীতি পালন হয়। সাধারণত, এদিন দেবীর পুজোয় গোপনতা ও নিষ্ঠার বিশেষ গুরুত্ব থাকে। সেবায়েতেরা চোখে কাপড় বেঁধে প্রবেশ করেন গর্ভমন্দিরে, যেখানে গোলাপজল, জবাফুল তেল, অগুরু ও গঙ্গাজলের মিশ্রণে সম্পন্ন হয় সতীঅংশের স্নান। পরে “সোনার সুতোয় কাজ করা বেনারসি” কাপড়ে ঢাকা হয় দেবীঅঙ্গ, এবং যথাস্থানে তা পুনরায় প্রতিস্থাপন করা হয়।

এই উৎসবের আরেকটি বিশেষ দিক রয়েছে। “শাক্ততন্ত্র” ও “বৈষ্ণবতন্ত্র”— উভয় পথেই কলিযুগে কৃষ্ণ ও কালীকে অভিন্ন সত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে এই দিন “কালীঘাট”-এ এক বিশেষ লীলার উদ্ভব ঘটে— রাত্রিকাল ও ঊষার সময়ে দেবী দক্ষিণাকালী “বৈষ্ণব রূপে” ভক্তদের দর্শন দেন। এর পেছনে রয়েছে এক কিংবদন্তি। বলা হয়, ভবানীদাস চক্রবর্তী নামে এক সেবায়েত এক রাতে স্বপ্নে দেবীর কাছ থেকে “তিলক পরার ইচ্ছা”র আদেশ পান। স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী দেবীকে নাসিকায় শ্বেতচন্দনের তিলক পরিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই আজও দক্ষিণাকালী মূর্তিতে ধরা দেয় বৈষ্ণব রূপ।

এই স্নানযাত্রা যেন এক অপূর্ব ঐক্যের প্রতীক। “শ্রীক্ষেত্র” ও “কালীক্ষেত্র”, “শাক্ত” ও “বৈষ্ণব” মত, সব কিছু মিলে যায় এক অলৌকিক তীর্থস্নানে। ভক্তিরসে স্নাত হয়ে এই দিন হয়ে ওঠে পরম পবিত্র, একান্ত ঈশ্বরমুখী।

আরও পড়ুন ::

Back to top button

দয়া করে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিন

দেখে মনে হচ্ছে আপনি কোনও বিজ্ঞাপন ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমরা বিজ্ঞাপনের উপর ভরসা করি ওয়েবসাইটের ফান্ডের জন্য