বিশ্বজুড়ে উদ্ভট সব নির্বাচনের হাস্যকর কাহিনী
নির্বাচন! কথাটি শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে উঠে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা, সভা-সমাবেশ, মিছিল, মাইকিং, নির্বাচন কমিশনের ব্যস্ততা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কাবস্থা। নির্বাচন অবশ্যই বেশ গুরুতর একটি বিষয় কারণ এর মাধ্যমে মানুষ তাদের নেতা বা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে, যিনি তাদেরকে নেতৃত্ব দেবেন ভবিষ্যতে। তবে পৃথিবীর সব নির্বাচনই কিন্তু এরকম হয় না। কিছু নির্বাচন আপনাকে অবাক ও একইসাথে বাকরুদ্ধ করে দেবে।
কি,ধাঁধায় পড়ে গেলেন? তাহলে আপনাকে আরও বিস্মিত করতে তুলে ধরা হলো বিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া উদ্ভট সব নির্বাচনের মজাদার কিছু কাহিনী। তালিকায় আছে বিড়ালের মেয়র নির্বাচিত হওয়া থেকে শুরু করে একটি ট্যালকম পাউডারের নেতা হয়ে ওঠার কাহিনী পর্যন্ত অনেক কিছুই। হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে ইকুয়েডর এ একবার পায়ে লাগানোর পাউডারকে জনগণ ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচিত করেছিল!
কথা না বাড়িয়ে চলুন যাওয়া যাক আজকের মূল লেখায়।
(১) মৃত ব্যক্তি যখন নির্বাচিত!
বেশিরভাগ মানুষই বেশ কিছু গুণের কথা মাথায় রেখে নেতা নির্বাচন করে বা কোন একজন প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেয়। যেমন-সততা, আন্তরিকতা (আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে অন্ধ সমর্থন)। যেটাই হোক, কখনো নিশ্চয়ই এরকম হয় না যে কেউ কোনো মৃত মানুষকে নির্বাচিত করেছে! বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এরকম ঘটনাও কিন্তু ঘটেছে। ২০০৯ সালে আমেরিকার ফ্লোরিডা ও আলাবামাতে নির্বাচনা প্রচারণাতে জয়ী হন যথাক্রমে আর্ল উড (৯৬) ও চার্লস বিসলে (৭৭)- যারা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে মারা যান। উডের পরিকল্পনা ছিল অরেঞ্জ কাউন্টির ট্যাক্স কালেক্টর হওয়া। ৫৬% ভোট পেয়ে উড নির্বাচিত হন। অন্যদিকে অ্যালাবামাতে চার্লস নির্বাচিত হন ৫২% ভোট পেয়ে! এছাড়া জেরি ওরোপেজা ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটে নির্বাচিত হওয়ার জন্য লড়ে যাচ্ছিলেন। নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে তার মৃত্যু হয় ও তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ পান নি। মৃত জেরি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
(২) নেতা যখন পায়ে লাগানোর পাউডার!
১৯৬৭ সাল, পিকোয়াজা, ইকুয়েডর। অত্যন্ত অদ্ভুতভাবে সেখানকার অধিবাসীরা একটি বিশেষ ব্র্যান্ডের ফুট পাউডার বা পায়ে লাগানোর পাউডারকে নির্বাচনে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। আর এ ঘটনাটি ঘটে যখন নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে একটি প্রসাধনী সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান Pulvapies নামে একটি পাউডারের প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। তারা তাদের বিজ্ঞাপনে লিখেছিল, “আসন্ন নির্বাচনে যে কোনো প্রার্থীকে ভোট দিন। কিন্তু যদি আপনি ভালো ও পরিচ্ছন্ন থাকতে চান, তবে Pulvapies কে ভোট দিন।“ প্রতিষ্ঠানটি নিজেরাই ভাবে নি যে স্থানীয় জনসাধারণ এটাকে এত গুরত্বের সাথে নেবে। ভোটের দিন সন্ধ্যায় সেই প্রতিষ্ঠান লিফলেট বিতরণ করলো যাতে লেখা ছিল “For Mayor: Honorable Pulvapies”। ভোটাররা এতেই তাদের সিল মেরে ব্যালট বক্সে ফেলে দিল। নির্বাচিত হলো সেই পায়ে লাগানোর পাউডার! ন্যাশনাল ইলেক্টোরাল ট্রাইব্যুনাল বেশ বিপদে পড়ে গেল ও পরাজিত প্রার্থীরা ঐ পাউডার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিল।
(৩) নেতাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখবে যে “নেতা”
অনেকেই রাজনীতিবিদদের কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে তাদেরকে ‘ভাঁড়’ বা এরকম অনেক নামেই ডাকে। কিন্তু ব্রাজিলের অধিবাসীরা মনে হয় এক ধাপ এগিয়ে। তারা একজন ভাঁড়কেই নির্বাচিত করে ফেললো, যে কিনা পড়াশোনাই জানতো না! কিন্তু সেই ভাঁড় নির্বাচনে দাঁড়ালেন ও প্রচারণাপত্রে লিখলেন, “ আমি জানি না নেতারা কি করেন। আপনারা আমাকে ভোট দিন। আমি আপনাদেরকে দেখে জানাবো যে নেতারা আসলে কী করেন!” তিনি ব্রাজিলের প্রতিটি নাগরিককে অনুরোধ করলেন তাকে ভোট দিতে। তিনি এটাও বলেন, নির্বাচিত হলে তিনি কিছুই করবেন না। শুধু এটাই জানতে চেষ্টা করবেন যে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়া নেতারা আসলে কী কাজে সময় ব্যয় করেন। এতোটুকুই সাধারণ ভোটারদের জন্য যথেষ্ট ছিল। গ্রাম্পি নামে সে ভাঁড় ১.৩ মিলিয়ন ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন, যা ছিল তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।
(৪) দুর্ঘটনাক্রমে যিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন
ইতালির একটি ছোট গ্রাম। এই গ্রামেরই একজন অধিবাসী ফ্যাবিও বোরসাত্তি। তিনি ছিলেন একদমই রাজনীতিবিমুখ মানুষ। তার এক বন্ধু স্থানীয় নির্বাচনে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে দাঁড়ায়। কিন্তু একজন মাত্র প্রার্থী থাকায় নির্বাচন বাতিলের সম্ভাবনা দেখা দিল, ফ্যাবিওর বন্ধু তাকে বললেন, নির্বাচনে দাঁড়াতে। ফ্যাবিও কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। কিন্তু বন্ধু যাতে নির্বাচিত হতে পারে সেজন্য তিনি নির্বাচনে দাঁড়ালেন। তিনি ভেবেছিলেন, তার বন্ধু সহজেই নির্বাচিত হতে পারবে। কিন্তু ভাগ্য অন্য কিছু লিখে রেখেছিল হয়তো। ফ্যাবিওর নিজের পরিবারের সদস্যরা পর্যন্ত তাকে ভোট দেন নি, তবুও ফ্যাবিও ৫৮% ভোট পেয়ে নির্বাচিত হলেন, তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী, তার বন্ধুটি হলেন পরাজিত! ফ্যাবিও প্রথমে সরে যেতে চাইলেন কিন্তু জনমতের ব্যপক বিরোধিতার কারণে নিজের পদে থেকে যান। কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম দিকে তার কিছুটা সমস্যা হলেও পরে নিজেকে গুছিয়ে নেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজের গ্রামটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার। তারই সুবাদে এখন অনেকেই এই গ্রামের নাম জানে।
(৫) বিড়াল যখন শহরের মেয়র!
আলাস্কার টালকিটনা শহর গত ১৫ বছর যাবত একটি বিড়াল মেয়রের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। ঘটনার সূত্রপাত তখন, যখন শহরের অধিবাসীরা ‘স্টাবস’ নামে এ বিড়ালের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেছিল, কারণ তাদের মতে মানুষের চেয়ে বিড়াল জনপ্রতিনিধি হিসেবে অনেক ভালো। স্থানীয় মানুষজন স্টাবসকে নিয়ে খুশি, কারণ সে অযথা কর আরোপ করে না, ব্যবসা-বাণিজ্যে হস্তক্ষেপ করে না ও সে সৎ। প্রতিদিন ৪০ জনের মত লোক স্টাবসের সাথে সাক্ষাত করতে আসেন। স্টাবসের নিজের ফেসবুক ফ্যান পেজ রয়েছে যাতে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১০ হাজার!