ঝাড়গ্রাম: রাজপুত্রের বিয়ে বলে কথা। কিন্তু করোনা আবহে জাঁকজমক ও বিয়ের ভোজ বাতিল করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবার। রাজ পরিবারের ঐতিহ্য মেনে বিয়ে হল। সোমবার নববধূকে নিয়ে ঝাড়গ্রামে ফিরলেন বিক্রমাদিত্য মল্লদেব। তবে এদিন সন্ধ্যায় ফিরেও রাজবাড়িতে প্রবেশ করলেন না বিক্রমাদিত্য ও তাঁর নববিবাহিতা স্ত্রী মণিকা।
জানা গেল, এটাই ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবারের রীতি। তাই এদিন রাজবাড়ির বাইরে অতিথিশালায় রাত্রি যাপন করবেন নবদম্পতি। মঙ্গলবার কুলদেবী ও কুলদেবতার মন্দিরে প্রণাম করে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজবাড়িতে ‘গৃহপ্রবেশ’ করবেন নববধূ ও বিক্রমাদিত্য।
বিদেশে পড়াশোনা করা বিক্রমাদিত্য হলেন মল্লদেব রাজ পরিবারের তরুণ প্রজন্ম। ঝাড়গ্রামের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে রাজ পরিবারের অভূতপূর্ব অবদান রয়েছে। ঝাড়গ্রামের রাজা নরসিংহ মল্লদেবকে আধুনিক ঝাড়গ্রামের রূপকার বলা হয়।
নরসিংহ তিরিশের দশকে ঝাড়গ্রাম এস্টেটের রাজা হন। ঝাড়গ্রামে ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি হাসপাতালের জন্য জমি ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন নরসিংহ। তাঁর শাসনকালকে ঝাড়গ্রামের ‘সুবর্ণ যুগ’ বলা হয়। নরসিংহ জাতীয় কংগ্রেস থেকে ঝাড়গ্রামের সাংসদও নির্বাচিত হন। সেই নরসিংহের নাতি শিবেন্দ্রবিজয় মল্লদেব ওরফে দুর্গেশ হলেন বিক্রমাদিত্যের বাবা।
দুর্গেশবাবু ঝাড়গ্রাম পৌরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান। অধূনা উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন নিবাসী ওড়িশার রেড়াখোল রাজপরিবারের কন্যা মণিকা দেওয়ের সঙ্গে বিয়ে হল বিক্রমাদিত্যের। রবিবার দেরাদুনে কোভিড বিধি মেনে বিয়ের পরে সোমবার বিমানযোগে কলকাতায় ফেরেন বিক্রমাদিত্য ও মণিকা।
করোনা আবহে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে ২৮ এপ্রিল প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। প্রীতিভোজের আসরে প্রায় চার হাজার জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। অতিথি অভ্যর্থনা ও প্রীতিভোজের জন্য রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে কুড়ি হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে বাতানুকুল মণ্ডপ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। বিক্রমাদিত্যের কাকা জয়দীপ মল্লদেব জানালেন, করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে প্রীতিভোজ স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। আগামী নভেম্বরে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হবে।