৩ কোটি টিকা কিনবে রাজ্য : Mamata Banerjee
দেশের একাধিক রাজ্য চলে গিয়েছে লকডাউনের আওতায়। আর তার জেরে দেশের অর্থনীতির চাকা আরও একবার বসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দিয়েছেন গতবছরের মতো টানা লকডাউন চলতে থাকলে দেশের বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের নীচে নেমে যাবে। এমনকি ইতিমধ্যেই চাহিদার তুলনায় যোগানে টান পড়তে শুরু করে দিয়েছে। আর তার জেরে বাড়তে শুরু করে দিয়েছে জিনিসপত্রের দাম। এই অবস্থায় বাংলার বুকে আর লকডাউন ডেকে আনতে চান না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি চাইছেন মানুষ সচেতন হোক। তাঁরা কোভিড বিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সব কাজ করুন। একই সঙ্গে তিনি জোর দিতে চান টিকাকরণের ক্ষেত্রেও। রাজ্যের সব বাসিন্দাকে বিনামূল্যে টিকা দিতে রাজ্য সরকার এবার তাই ৩ কোটি টিকা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্ত এখন তাই তারিফ কুড়াচ্ছে অর্থনীতিবিদ থেকে সামাজিক স্তরেও। তবে চিকিত্সক ও বিশেষজ্ঞরা বার বার লকডাউনকেই সমস্যার একমাত্র সমাধান হিসাবে বেছে নিতে বলছেন যা মানতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী।
গতবছর কোভিডের প্রথম ঢেউয়ে দেশজুড়ে চলা প্রায় ৪-৫ মাসের টানা লকডাউন কার্যত দেশের অর্থনীতির কোমর ভেঙে দিয়েছিল। তার জেরেই মুখ্যমন্ত্রী আর লকডাউন চাইছেন না। কেননা লকডাউনে সাধারন মানুষের দুর্গোতির শেষ থাকে না। বিশেষ করে দিন আনা দিন খাটা মানুষজন ও ব্যবসায়ীরা নিদারুন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। রাজ্যের আয়ও ধাক্কা খায়। তাই মুখ্যমন্ত্রী জোর দিতে চাইছেন কোভিডবিধি পালনের ক্ষেত্রে। সবাই যেন মাস্ক ব্যভার করেন, ঘন ঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোন, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন, ভিড় বা জমায়েত এড়িয়ে চলুন – এই সব ক্ষেত্রেই জোর দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু লকডাউন তিনি চাইছেন না। এমনকি কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে এখনই কনটেনমেন্ট জোন বা মিনি কনটেনমেন্ট জোন গড়া নিয়েও আপত্তি রয়েছে তাঁর। পরিবর্তে তিনি জোর দিচ্ছেন টিকাকরণের ওপরে। কারন টিকাকরণ কোভিড হওয়ার হাত থেকে পুরোপুরি বাঁচাতে সক্ষম না হলেও মৃত্যুর ঘটনা ঠেকিয়ে দিচ্ছে। আর তাই মুখ্যমন্ত্রী এখন রাজ্যবাসীকে বিনামূল্যে কোভিডের টিকা দিতে ৩ কোটি টিকা কিনতে চাইছেন।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যবাসীকে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার যেমন এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছে, বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও তেমনি এই একই পদক্ষেপ করার সুপারিশ করেছে রাজ্য সরকার। আপাতত রাজ্য সরকার তিন কোটি প্রতিষেধক কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। এ জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পাশাপাশি প্রতিষেধক প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকেও চিঠি দেবে রাজ্য সরকার। এই ৩ কোটির মধ্যে ২ কোটি প্রতিষেধক নিজের কাছে রাখবে রাজ্য সরকার। বাকি ১ কোটি প্রতিষেধক বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে দেওয়া হতে পারে। এই প্রতিষেধক পাওয়া গেলে রাজ্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের প্রতিষেধক নিশ্চিত করা যাবে বলে স্বাস্থ্য-কর্তাদের আশা। কারন ৪৫ উর্ধ্বদের এখনও কেন্দ্র সরকার বিনামূল্যে টিকা দিচ্ছে। সেই হিসাবে চলতি বছরের মধ্যেই রাজ্যের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষ টিকা পেয়ে যেতে পারেন। বেসরকারি হাসপাতালগুলি যাতে টিকা উত্পাদক সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেরাই টিকা কিনে নিতে পারে তার জন্য রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও অনুমতি দিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
পাশাপাশি, রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তারা আশ্বস্ত করছেন যে, রাজ্যে অক্সিজেনের সংকট এখনই নেই। এখন রাজ্যে তরল অক্সিজেন উত্পাদিত হচ্ছে দৈনিক ৪৯৭ মেট্রিকটন। সেখানে চাহিদা দৈনিক ২২৩ মেট্রিকটন। রাজ্যে এই মুহূর্তে অক্সিজেন বরাদ্দ রয়েছে প্রতিদিন ৩১৮ মেট্রিকটন। তার উপরে কেন্দ্রীয় সরকার যে পরিমাণ অক্সিজেন আমদানি করবে, তার ১০% দিতে কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছে রাজ্য। সূত্রের খবর, গুজরাতের জামনগর থেকে অক্সিজেনের দু’টি ট্যাঙ্কার আসতে চলেছে রাজ্যে। রাজ্যের ১১২টি কোভিড হাসপাতালে পাইপ-মাধ্যমে অক্সিজেন পরিষেবার সুবিধা রয়েছে। তার সঙ্গে আরও অন্তত ২৫টি হাসপাতাল যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি, ৯৩টি হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট তৈরির অনুমতি কেন্দ্রের থেকে চেয়েছিল রাজ্য। কেন্দ্রের ছাড়পত্রে ৫টি হাসপাতালে সেই পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে। তিনটিতে কাজ শেষ, দু’টির কাজ চলছে। পাইপ-মাধ্যমে অক্সিজেন পরিষেবা যেখানে নেই, সেখানে তা চালু করার জন্য স্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
সুত্র : এই মুহুর্তে