ব্রেকআপ! ভেঙে পড়বেন না- এর সুবিধাগুলোও দেখে নিন
‘ব্রেকআপ’ মানে চলমান রোমান্টিক সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কষ্ট অসহনীয়। এমন ঘটনায় কেউ কেউ এতটাই মুষড়ে পড়েন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন যে মনে হয়- শেষ, সব শেষ! জীবনের আর কোনো মানেই নেই! কারও কারও অবস্থা এমন হয় যে, যেতে হয় মানসিক চিকিৎসকের কাছে। দেখা দেয় মনোদৈহিক সংকট। কেউ জীবনাবসানের দিকেও ধাবিত হন। কিন্তু ব্যাপারটা কি আসলেও তাই? বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ কিন্তু এমন বলছেন যে সম্পর্ক ভাঙার বেদনা আপনাকে করে তোলে আরও শক্তিশালী আর সক্ষম একজন পরিপক্ক মানুষ- যার ব্যক্তিত্বটা আগের চেয়ে বদলে যায় ইতিবাচকভাবে- অনেক ক্ষেত্রেই একটি ব্রেকআপ আপনাকে বানিয়ে দিতে পারে ‘শিশু থেকে শিক্ষক’!
আসুন, একটু দেখে নেওয়া যাক আপনার ‘ভগ্ন-হৃদয়’ বাস্তব পরিস্তিতি মোকাবিলায় কতটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে
স্মৃতির কষ্টিপাথর : আপনার এখন আছে অনেক ঘটনার স্মৃতি। এগুলির ভাড়ে ভেঙে না পড়ে এদের কাজে লাগান। নয়া কোনো সম্পর্ক ফের গড়ার আগে এইসব স্মৃতির কষ্টিপাথর দিয়ে যাচাই করে নিতে পারবেন- কতটুকু খাঁটি সোনা আছে আপনার নতুন বান্ধবের মাঝে, বা আগের সম্পর্কটির ক্ষেত্রে আপনার ভেতরকার কোন অক্ষমতা বা অপূর্ণতা ছিল যার কারণে সমস্যার সূচনা হয়? আপনি কিন্তু স্থির মস্তিষ্কে সম্পর্কের সেই গতিরোধকটাকে এড়িয়ে যেতে পারবেন এখন সহজেই- কারও পরামর্শর দরকার নেই।
আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ : ব্রেকআপের পর নিজের ভাবনা-চিন্তা আর আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা সহজ হয়। আগে যখন কোনো ঘটনায় ভাবাবেগে চোখে পানি আসলে সঙ্গীর কাঁধে মাথা রেখে পেতেন স্বস্তি- এখন আপনি জানেন, সে রকম কেউ নেই আপনার জন্য; এবং এই সত্য অনুভূতিটাও হয়, ‘কেউ আসলে কারও নয়’। সুতরাং, অকারণে ‘সস্তা দরে’ যার-তার জন্য প্রেম-ভালোবাসা বিলিয়ে লাভ নেই। বলা যায়, ‘উলুবনে মুক্তো ছড়ানো’ স্বভাবটা আপনার এমনিতেই কেটে যাবে। বাবা-মা, আত্মীয়-বন্ধুর হাজারো পরামর্শে যা সম্ভব হয়নি, তা এখন আপনার মাঝে ‘ইনবিল্ট’ অবস্থায় আছে। মোট কথা- আপনি এখন আর ননীর পুতুল নন, হাল্কা রোমান্টিক বাতাসে গড়িয়ে পড়েন না অন্যের পায়ে।
কঠিন সত্য : ব্রেকআপের পরই অতিশয় তিক্ত আর কঠিন একটি সত্য মানুষ ঠিক ঠিক বিশ্বাস করতে শেখে- দুনিয়ায় কোনো কিছুই অবধারিত বা নিশ্চিত (পার্মানেন্ট) নয়। মানুষ বদলায়, চিন্তা-ভাবনা আর পছন্দ-অপছন্দও বদলায়। কোনো সম্পর্কের সূচনা অসাধারণ উপভোগ্য হতে পারে, কিন্তু এর পরিণতিও যে তেমনি হবে- তার গ্যারান্টি নেই। এই কথাগুলো ব্রেকআপের আগে আপনাকে বন্দুক ঠেকিয়েও বিশ্বাস করানো যেত না, কিন্তু এখন আপনি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে তা অনুভব করতে শেখে গেছেন- কারও কাউন্সেলিং ছাড়াই।
যার অপেক্ষায় আমি ছিলাম তৃষ্ণার্ত : মানুষ জীবনে একবারই ভালোবাসে- এমন ভাবনায় হতাশায় ডুবে মরার কারণ নেই। কারণ, আপনি চান বা না চান- একটা সম্পর্কের বৃত্ত থেকে বের হওয়ার নয়া জীবন শুরু হয় আপনার। ফের ভালোবাসায় জড়াতে পারেন আপনি- বিশ্বাস করুন, সেটা এমনও হতে পারে যে আপনি অনুভব করবেন এবং মনে মনে বলবেন- হ্যাঁ, এটাই তো সেটা যার অপেক্ষায় আমি ছিলাম তৃষ্ণার্ত। ব্রেকআপের অভিজ্ঞতা বিহনে এমনটা হতে পারত না।
পুরনো বন্ধুদের মূল্যায়ন : প্রিয়সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের সময়টাতে নিকটের-কাছের বন্ধু বা জানের দোস্তদেরও আপনি পুরনো সেকেলে মোবাইল ফোনের মতো দূরে ঠেলে দেন। আপনার মনপ্রাণ জুড়ে শুধু সেই প্রিয়জন, তাকেই আপনার একমাত্র জগৎ বানিয়ে রাখেন। প্রথম সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমনি হয় সাধারণত। আর তাই যখন ব্রেকআপ হয়- তখন তার ধাক্কাটাও সেই অনুপাতেই আঘাত হানে আপনাকে। তবে, এই ব্রেক আপের পরই আপনি পুরনো বন্ধুদের মূল্যায়ন নতুনভাবে করা শিখবেন, এবং ভবিষ্যতে নয়া বন্ধুদের ক্ষেত্রেও হবেন আরও যত্নশীল। মোটকথা, একটি ব্রেকআপ আপনাকে আপনার একমাত্র জীবনটাকে আরও বিজ্ঞতার সঙ্গে, আরও স্বস্তিতে উপভোগের সুযোগ এনে দেয়।
শাপে বর : ব্রেকআপের ঠিক পরপর যে সময়টা- এটা অসহনীয় অবশ্যই। তবে যদি একটু মনের জোর খাটিয়ে এই সময়টায় আপনি ফেলে রাখা কাজে মনোযোগ দেন- এরচেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারে না। একসময় নিজের ক্যারিয়ারের জন্য জরুরি যেসব বিষয় অবহেলায় দূরে ঠেলে রেখেছিলেন- এবার তাতে মনোনিবেশ করুন। ব্রেকআপের শোককেই শক্তি বানিয়ে লক্ষ্য হাসিলে অগ্রসর হোন। দেখবেন, ব্রেকআপ আপনার জন্য শাপে বর হয়ে দেখা দিয়েছে।
বিশেষ সতর্কতা : এই লেখা পড়ে কেউ আবার ইচ্ছা করে ‘ব্রেকআপের ফায়দা’ লুটতে যাবেন না, অনুগ্রহ করে। খামোখাই আপনার চলমান চমৎকার সম্পর্কটিকে ভাঙার ঝুঁকি নেবেন না! মনে রাখবেন, ব্রেকআপজনিত কারণে ঘটা নেতিবাচক আবেগকে নিরুৎসাহিত করতেই এই পরামর্শসূচক লেখার অবতারণা।