মানুষের তৈরি দূষণে বিপর্যস্ত মানব জীবন,বাতাসে বেড়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড, সতর্ক করছেন পরিবেশবিদরা
বাতাসে বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে কার্বন ডাই অক্সাইড। বিষ-বাষ্পের মাত্রা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। মে মাস থেকে বায়ুদূষণ যে হারে বাড়ছে তাতে বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি, সতর্ক করছেন ন্যাশনাল ওসিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের গবেষকরা। বিশ্বজুড়ে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। গত ২০০ বছরে যেখানে বাতাসে বিষাক্ত কার্বনের মাত্রা বেড়েছিল মাত্র ২৫ শতাংশ, সেখানে মাত্র ৩০ বছরেই বিষাক্ত বাষ্পের মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারণই হল, মানুষের তৈরি দূষণ।
কলকারখানা ধোঁয়া, গ্রিন হাউস গ্যাসের বাড়বাড়ন্ত। প্লাস্টিক দূষণের কারণে পরিবেশে রাসায়নিকের মাত্রাও বাড়ছে। মাইক্রোপ্লাস্টিক থেকে বিষাক্ত কণা মিশছে মাটি, জলে। করোনা আবহে লকডাউনের সময় বাতাসে বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কিন্তু লকডাউনের রাশ আলগা হওয়ার পর থেকে ফের কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়েছে।
চলতি বছর মে মাসের সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাতাসে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৪১৭.১৪ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন), কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে ৪১৯.৫ পিপিএম। গবেষকরা বলছেন, শুধু ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০) ও অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণাই (পিএম ২.৫) নয়, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায় বাতাসে নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রাও বিপজ্জনক হারে বাড়ছে।
বায়ুমণ্ডলে ওই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা (পিএম)-গুলি খুব সহজে মিশে যেতে পারে। কিন্তু যদি পিএম কণাগুলির ব্যাস বেশি হয় তাহলে বায়ুমণ্ডলে মিশে যেতে সময় লাগে বেশি। বিদ্যুত্কেন্দ্র, গাড়ি, ট্রাক, অগ্নিকাণ্ড, ফসল পোড়ানো ও কারখানার চিমনি থেকে এই দূষণ-কণাগুলি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বাতাসের ধূলিকণাকে আশ্রয় করে বিষ-বাস্প তৈরি করে। কুড়ি সালের এপ্রিল মাসের পর থেকে সারা বিশ্বে দৈনিক কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের মাত্রা কমতে শুরু করেছিল। দেখা গিয়েছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক কার্বন নির্গমনের মাত্রা আগের তুলনায় প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমেছিল।
কার্বন নির্গমনে বিশ্বের পরিসংখ্যাণে সর্বদাই শীর্ষে থাকে চিন। সেখানেও গত ফেব্রুয়ারি মাসে দৈনিক কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমেছিল প্রায় এক চতুর্থাংশ। এছাড়াও ভারত এবং ইউরোপে যথাক্রমে ২৬ এবং ২৭ শতাংশ করে কমেছে দৈনিক কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ। আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’-এ প্রকাশিত হয়েছিল সেই তথ্য। গবেষকরা আশঙ্কা করেছিলেন, মানুষ আবার তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে শুরু করলে, দৈনিক কার্বন নির্গমনের পরিমাণ হু হু করে বাড়বে।
সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়ে দেখা দিয়েছে। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিদ জন টিন্ডাল পরিবেশের অন্যতম প্রধান শত্রু কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসকে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখিয়েছিলেন, সূর্যের আলো এবং তাপ বায়ুমণ্ডল ভেদ করে পৌঁছয় পৃথিবীর মাটিতে। মাটি উত্তপ্ত হয়। এবং তাপ ছাড়ে। সে তাপ ফেরত যেতে পারে না মহাশূন্যে।
বাতাসে উপস্থিত কার্বন ডাই-অক্সাইড তা শুষে নেয়। ফলে বাতাস গরম হয়ে ওঠে। সেই তাপ আবার ফেরত যায় মাটিতে। এটাই গ্রিনহাউস এফেক্ট। এই কারণেই বিশ্ব উষ্ণায়ণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, পৃথিবীর বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের যা পরিমাণ, সেটা বেড়ে দ্বিগুণ হলে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়বে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে জীবজগতের ওপরে।
সুত্র : দ্য ওয়াল