ঘুমিয়ে পড়া গ্রামের গল্প
মনে পড়ে সেই ঘুমিয়ে থাকা রাজকুমারীর কথা? যে ঘুমিয়ে গিয়েছিল ডাইনীর অভিশাপে। তার সাথে ঘুমিয়ে পড়েছিল পুরো রাজ্যের মানুষ। একমাত্র কোন রাজপুত্রই পারত তাকে গভীর ঘুমের জগত্ থেকে টেনে আনতে। জাগিয়ে তুলতে পুরো রাজ্যকে! ঠিক তেমনি এক গ্রামের গল্প বলব এখন। যেখানে বলা নেই কওয়া নেই, হুট করেই ঘুমের জগতে চলে যায় মানুষ। আর কাটিয়ে আসে দিনের পর দিন।
প্রথম দিকে এক, দুই, তিন এভাবেই ঘুমিয়ে যেতে শুরু করে হঠাত্ কাজাকিস্তানের উত্তর প্রদেশের কালাচি গ্রামের মানুষেরা। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাদের সংখ্যা। ছাড়িয়ে যায় শ এর ঘর। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে হঠাত্ করেই কোমার মতন একটা জায়গায় চলে যায় এখানকার অধিবাসীরা। দিনের পর দিন ঘুমিয়ে থাকে শান্তভাবে। তবরপর? নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে করছে তারপর আর ঘুম ভাঙে কিনা ঐ মানুষগুলোর? ভাঙে! কিন্তু প্রচন্ড মাথাব্যথা, ঠান্ডা ঝিমুনি আর স্মৃতিহীনতায় ভোগে তারা। কি হয়েছে, কেন হয়েছে কিছুই মনে করতে পারেনা।
২০১৩ তে প্রথম আক্রমণ করে গ্রামটিকে অদ্ভূত এই অসুখটি। তারপর ধীরে ধীরে সেটা কেবল বেড়েই চলেছে। বর্তমানে গ্রামের মোট ১৫২ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এই সমস্যায়। কি ধরনের অসুখ এটা? ২০১৩ থেকে ২০১৫- এতদিন পরেও কেন কিছু করা যাচ্ছেনা এর বিরুদ্ধে? কারণ আর কিছুই না। কারণ হচ্ছে অজ্ঞতা। অসুখ সারাবে কি করে? এখনো অব্দি তো ঠিক করে জানতেই পারা যায়নি অসুখটি কি। কোনরকম কারণই চিহ্নিত করতে পারেনি এখনো ডাক্তার আর বিজ্ঞানীরা অদ্ভূত এই ব্যাপারের। প্রথমটায় মনে করা হয়েছিল রেডন আর কার্বন ডাই অক্সাইডের মিশ্রনই এমন হঠাত্ ঘুমিয়ে পড়ার কারণ। কিন্তু সেটাকেও কিছুদিন আগে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।
কোনভাবেই কিছু করতে না পেরে গত বছরের শেষ দিকটায় কাজাকিস্তান সরকার প্রায় ২০,০০০ পরীক্ষানাগারে পরীক্ষা চালান কালাচির মাটি, বায়ু,পানি, খাবার পশু ইত্যাদি নিয়ে। পরীক্ষা চলে অধিবাসীদের ওপরেও। সেসময় অধিবাসী আর কিছু বিজ্ঞানীর কথায় জানতে পাওয়া যায় যে কালাচি নয়, এর পাশের গ্রাম থেকে আসা কোন কিছুই সমস্যাটি সৃষ্টি করছে। এক্ষেত্রে তারা প্রধানত দায়ী করেন ১৯৯০ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে অবস্থিত ইউরেনিয়ামের পুরোন খনিটিকে। টমসক পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়ার প্রফেসর লিওনিড রিখভানভ বলেন- “ আমার মতে, একটি গ্যাস কারখানা কাছেই কাজ করছে। “ এবং লিওনিডের ভাষ্যমতে সেখান থেকে উত্পন্ন রেডনই এমনটা হওয়ার কারণ।
ডা. কাব্রাশিট আলমাগামবেটভ জানান, আক্রান্ত মানুষদের রক্ত ও অন্যান্য জিনিস পরীক্ষা করার পরেও কোন কিছুই পাওয়া যায়নি। বিষাক্ত কিছুর দিকে আঙ্গুল ওঠালেও তার ভাবনায় ব্যাপারটি মানসিক কোন সমস্যাও হতে পারে। কিন্তু তাই বলে একসাথে এতজনের?
ইউরেনিয়াম খনির সাবেক প্রশাসক ভিক্টর ক্রিউকোভবের মতে এটি কেবল ইউরেনিয়াম নয়, কপার কিংবা লোহার কাজও হতে পারে।
সত্যিই কি তাই? এখনো কোন ঠিকঠাক তথ্য পাওয়া যায়নি। সবটাই সবার নিজের কথা। কিন্তু আসলেই কোন জিনিসটি দিনের পর দিন এভাবে ঘুম পাড়িয়ে রাখছে মানুষকে? এর ভেতরেই জেগে থাকা মানুষেরা যে যার মতন গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্যগ্রামে। ঠিকঠাক ব্যবস্থা না নিতে পারলে খুব বেশিদিন লাগবেনা এতদিন ধরে মানুষের কলরবে জেগে থাকা এতদিনের কালাচি গ্রামটির নিজেরও ঘুমিয়ে পড়তে!