চলতি বছরে হয়ে যাওয়া বিধানসভা নির্বাচনে কার্যত সমস্ত রাষ্ট্রীয় শক্তি, সরকারি এজেন্সি ও অর্থ তথা প্রশাসনিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বাংলা দখলের ফন্দি এঁটেছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও তাঁদের হারতে হয়েছে বাংলার নিজের মেয়ের কাছে। কিন্তু কথায় বলে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে। বিজেপিও তাই বাংলার মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েও হাত গুটিয়ে নেয়নি, বরঞ্চ প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পিছনের দরজা দিয়েই বাংলার ক্ষমতা দখল করতে।
গতকালই কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরবর্তী হিংসার ঘটনায় তদন্ত করবে সিবিআই। সেই রায় সামনে আসার পরেই রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে বিজেপি খুব খুশি হলেও রাজ্য সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করার কথা ভাবছে।
আর তারই মাঝে এদিন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়ে দিলেন, ‘হাইকোর্টের রায় নিয়ে আমরা কিছু মন্তব্য করব না। কিন্তু এটুকু বলতে পারি কিছুদিন আগে মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতিরা সিবিআই-কে কেজড প্যারট বা খাঁচায় বন্দি তোতা বলেছেন। এই খাঁচা থেকে মুক্তি দিতে হবে সিবিআই-কে। আমি এটুকুই বলছি।’
আরো পড়ুন : ঘাগরা জলপ্রবাহে পড়ে গিয়ে পর্যটক দলের এক বালকের মৃত্যু
বস্তুত সিবিআই যে কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা সরকারের অঙ্গুলিহেলনেই কাজ করে চলে সেটা এ দেশের রাজনীতিতে রীতিমত প্রতিষ্ঠিত। কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের স্বার্থরক্ষা করাই এখন সিবিআইয়ের প্রধান কাজ হয়ে উঠেছে। সেই সিবিআই যে বাংলার বুকে নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করবে না সেটাই এদিন বাংলার মানুষকে যেমন চন্দ্রিমা মনে করিয়ে দিয়েছেন তেমনি, তদন্তের নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে কিনা তা নিয়ে জনমানসে প্রশ্নও তুলে দিয়েছেন।
উদাহরণ স্বরূপ বেছে নিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের সঙ্গে সমমর্যাদা, ক্ষমতা ও অধিকার ভোগ করা মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায়কে। অর্থাত্ সিবিআই যে তদন্ত করবে সেই তদন্ত যে আদতে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয় সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন চন্দ্রিমা। ঘটনাচক্রে গতকালের হাইকোর্টের নির্দেশের পরে পরেই পরেই সিবিআই দ্রুত ৪টি দল গঠন করে নিয়েছে তদন্ত করার জন্য।
দেখে শুনে মনে হচ্ছে তাঁদের কাছে আগে থেকেই খবর ছিল রায় কী হতে যাচ্ছে। হয়তো এতক্ষনে তাঁদের কাছে এই নির্দেশও পৌঁছে গিয়েছে তদন্তের রিপোর্টে কোন কোন তৃণমূল নেতার নামে কী কী অভিযোগ জমা দিতে হবে।
সিবিআই সূত্রে খবর, সোমবারের মধ্যেই রাজ্য সরকার এবং রাজ্য পুলিশের কাছ থেকে তথ্য চাওয়া এবং তদন্তের কাজ শুরু করে দেওয়া হবে। সিবিআইয়ের ওই চারটি বিশেষ তদন্তকারী দলের প্রতিটিতে থাকবেন ছ’জন করে সদস্য। তদারকির জন্য দলগুলির মাথায় যুগ্ম অধিকর্তা পর্যায়ের এক জন করে অফিসার থাকবেন।
এদিনই এরা কলকাতায় চলে আসছেন। হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে মূলত নির্বাচন পরবর্তীকালে খুন, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার মতো অভিযোগের ক্ষেত্রেই সিবিআই তদন্ত করবে। আর অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তদন্ত করবে তিন আইপিএস অফিসারের নেতৃত্বে থাকা বিশেষ দল।
সূত্র : এই মুহুর্তে