ক্রিকেট

১৮ বছরের অপেক্ষার অবসান, অবশেষে আইপিএল জয়ের স্বাদ পেলেন কোহলি, হাতছাড়া হল শ্রেয়সের ডাবল ট্রফি জয়ের সুযোগ

ওয়েস্ট বেঙ্গল নিউজ ২৪

১৮ বছরের অপেক্ষার অবসান, অবশেষে আইপিএল জয়ের স্বাদ পেলেন কোহলি, হাতছাড়া হল শ্রেয়সের ডাবল ট্রফি জয়ের সুযোগ - West Bengal News 24

মাত্র চার বল হাতে থাকতেই বিরাট কোহলি মুখে হাত দিয়ে নিজের আবেগ আড়াল করার চেষ্টা করলেন। চোখ ঢেকে নেওয়ার পর বোঝাই যাচ্ছিল, আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে তাঁর গাল বেয়ে। তখনও ম্যাচ শেষ হয়নি, কিন্তু ফলাফল তখনই পরিষ্কার—জয় নিশ্চিত ছিল বেঙ্গালুরুর। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় সব রকম ট্রফি জিতেছেন কোহলি, শুধু আইপিএল ছিল অধরা। অবশেষে সেই স্বপ্নপূরণও হল ১৮তম আইপিএল মরশুমে।

ম্যাচটি অহমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে হলেও উপস্থিত দর্শকদের উন্মাদনা দেখে মনে হচ্ছিল যেন এটি বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম। গ্যালারিতে ছিল শুধুই লালের আধিক্য। যদিও দুই দলের জার্সিতেই লাল রঙ থাকলেও গ্যালারিতে দাপট ছিল বেঙ্গালুরু সমর্থকদের। পঞ্জাবের প্রতিটি উইকেট পতনের সঙ্গে গ্যালারির চিৎকার যেন আরও বাড়ছিল। ৯০ হাজারের বেশি দর্শকের মাঝে শেষদিকে ‘আরসিবি’, ‘কোহলি’ ধ্বনি এতই প্রবল হয়ে উঠেছিল যে কিছু শোনা যাচ্ছিল না। এমন কঠিন লক্ষ্যমাত্রা—১৯১ রান—এই পিচে তাড়া করে জয় পাওয়া সহজ ছিল না। কিন্তু দলগত প্রচেষ্টায় তা সম্ভব করল বেঙ্গালুরু।

চলতি মরশুমেই নিশ্চিত ছিল যে আইপিএল পেতে চলেছে এক নতুন চ্যাম্পিয়ন। কেবল প্রশ্ন ছিল—কে? কোহলিদের বেঙ্গালুরু না শ্রেয়সের নেতৃত্বাধীন পঞ্জাব? শ্রেয়স ইতিমধ্যে একবার আইপিএল জিতেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক হিসেবে। সেই অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল। কিন্তু একা একজন অধিনায়ক কিছুই করতে পারেন না, প্রয়োজন দলের সম্মিলিত পারফরম্যান্সের—যেটা দেখাল বেঙ্গালুরু।

১৮ বছরের অপেক্ষার অবসান, অবশেষে আইপিএল জয়ের স্বাদ পেলেন কোহলি, হাতছাড়া হল শ্রেয়সের ডাবল ট্রফি জয়ের সুযোগ - West Bengal News 24

ম্যাচ শুরুর আগে ম্যাথু হেডেন অনুমান করেছিলেন, এটি হতে পারে ২২০ রানের উইকেট। তবে বেঙ্গালুরুর ইনিংস শুরু হওয়ার পর সেই সম্ভাবনা আর দেখা যাচ্ছিল না। বিশেষ করে বিরাট কোহলি এই ম্যাচে আগের ম্যাচগুলোর মতো ঝলক দেখাতে পারেননি। তিনি ৩৫ বল খেলে মাত্র তিনটি বাউন্ডারি মারেন। পঞ্জাবের বোলাররা তাঁকে শর্ট বল করে চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন, এবং সফলও হন। কোহলি গুড লেংথে বল না পেয়ে বারবার স্কোয়্যার অঞ্চলে খেলতে বাধ্য হন। অর্শদীপ সিংহ ও কাইল জেমিসেন বলের গতি বদলে তাঁকে আরও বিপাকে ফেলেন।

তাই রান তোলার জন্য কোহলিকে দৌড়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। মনে হচ্ছিল তিনি ২০ ওভার টিকে থেকে বাকিদের ঝুঁকি নেওয়ার স্বাধীনতা দিতে চাইছেন। তবে সে পরিকল্পনায় খানিক ভাঙন ধরে আজমাতুল্লা ওমরজ়াইয়ের শর্ট বলে। বলটা ঠিকমতো সামলাতে না পেরে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। ৩৫ বলে করেন ৪৩ রান।

তবু কোহলিই দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। বাকিরা কেউ ৩০ রানের গণ্ডি ছুঁতে পারেননি। তবে সবাই ছোট ছোট অবদান রাখায় দল গড়ে তোলে ১৯০ রান। এই অতিরিক্ত ১৫ রানের পেছনে বড় অবদান ছিল জিতেশ শর্মার। আগেও প্লে-অফে জায়গা করে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ব্যাটিং ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ফাইনালেও একটি ওভারে দলের স্কোর বাড়িয়ে দেন তিনি।

পঞ্জাবের ইনিংসের শুরুটা ভালো হলেও চাপে ভেঙে পড়ে তারা। বেঙ্গালুরুর পরিকল্পনা ছিল, যত দ্রুত উইকেট নেওয়া যাবে, তত পঞ্জাবের ওপর চাপ বাড়বে। সেই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার ক্রুণাল পাণ্ড্য। তিনবার আইপিএল জেতার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন, যার মধ্যে ছিল পঞ্জাবের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটগুলো।

চাপের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে টার্গেট রানের গতি। পঞ্জাবের শেষ ভরসা ছিলেন শ্রেয়স, কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হন। একের পর এক উইকেট পড়ে যায়। একমাত্র শশাঙ্ক সিংহ কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন—৩০ বলে ৬১ রান করেন, কিন্তু দলকে জেতাতে পারেননি। ইনিংস থামে ১৮৪ রানে। ফলে ৬ রানের জয়ে অবশেষে বেঙ্গালুরু আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

আরও পড়ুন ::

Back to top button

দয়া করে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিন

দেখে মনে হচ্ছে আপনি কোনও বিজ্ঞাপন ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমরা বিজ্ঞাপনের উপর ভরসা করি ওয়েবসাইটের ফান্ডের জন্য