জানা-অজানা

বিশ্ববাসীর কাছে যেভাবে পৌঁছেছিল হিটলারের মৃত্যু সংবাদ

বিশ্ববাসীর কাছে যেভাবে পৌঁছেছিল হিটলারের মৃত্যু সংবাদ - West Bengal News 24

১৯৪৫ সালের ১ মে। লন্ডন থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরের রিডিংয়ে নিজের ডেস্কে বসে কাজ করছিলেন কার্ল লেহম্যান। সোভিয়েত সেনাবাহিনী বার্লিনের উপকণ্ঠে পৌঁছে গেছে। জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধও শেষ পর্যায়ে এসে ঠেকেছে।

২৪ বছর বয়সী লেহম্যান রেডিও শুনছিলেন। এ সময় একটি ঘোষণা আসে। তাতে শ্রোতাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ শোনার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়।

লেহম্যান বলেন, তারা একটি আনুষ্ঠানিক সংগীত বাজিয়ে ঘোষণা দিলো, অ্যাডলফ হিটলার মারা গেছেন। তারা বললো, বলশেভিকদের সঙ্গে লড়াইয়ের সময় তিনি মারা গেছেন। খুবই ভারি কণ্ঠে ওই ঘোষণাটি দেওয়া হয়েছিল।

ইহুদিদের ওপর নাৎসি বাহিনীর নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় নয় বছর আগে তিনি ও তার ছোট ভাই গেয়গকে জার্মানি থেকে ব্রিটেনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তাদের বাবা-মা। তাদের বাবা ছিলেন একজন জার্মান ইহুদি। লেহম্যান আরও বলেন, আমি একেবারে স্বস্তি অনুভব করছিলাম। কারণ হিটলার আমার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু থেকে বিবিসি মনিটরিংয়ে কাজ করতেন কার্ল লেহম্যান। তার কাজ ছিল জার্মানি ও তাদের সহযোগী দেশগুলোর রেডিও অনুষ্ঠান শোনা, অনুবাদ করা ও ব্রিটিশ সরকারকে জানানো।

তিনি বলেন, ব্রিটেনে আমরাই প্রথম বাসিন্দা, যারা হিটলারের মৃত্যুর ঘোষণাটি শুনি। পুরো ভবনের লোকজন আনন্দে চিৎকার করছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম, ঘোষণাটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এর মানে হলো, জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধের সমাপ্তি।

তবে এর অন্তত ছয়দিন পরে জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিল। হিটলার আর জীবিত নেই- এটা নিশ্চিত হওয়া গেলেও, অনেক পরে জানা যায় যে, তিনি আসলে আত্মহত্যা করেছিলেন।

লেহম্যান বলেন, খবরে যেভাবে বলা হয়েছিল, তার মানে যেন তিনি সরাসরি লড়াই মারা গেছেন- যা ছিল বড় একটি মিথ্যা। তার আত্মহত্যার কথাটি তারা স্বীকার করেনি, কারণ তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই সবকিছু শেষ হয়ে যেতো। তবে জার্মানরা তাদের রেডিওতে মৃত্যুর ঘোষণাটি জানিয়েছিল, যা আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পেরেছিলাম। ওই ঘোষণায় বার্তা ঘোষক আরো বলেন, কার্ল ডোনিৎজকে উত্তরসূরি মনোনীত করে গেছেন হিটলার।

হিটলারের মৃত্যুর ঘোষণাটি দ্রুত অনুবাদ করেন জার্মান মনিটরিং টিমের তত্ত্বাবধায়ক আর্নেস্ট গোমব্রিচ। এক টুকরা কাগজে দ্রুত তিনি সেটি লিখে ফেলেন। এরপর তিনি লন্ডনের ক্যাবিনেট অফিসে ফোন করে সরকারকে বিষয়টি জানান। বিবিসি নিউজ রুমকেও জানানো হয়। এরপরই সারা বিশ্ব সেই খবরটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

৯৭ বছর বয়সী লেহম্যান এখনও পরিষ্কার মনে করতে পারেন, ইংল্যান্ডের মানুষের সেই উল্লাস। তিনি বলেন, মনে হয়েছিল, এখন আমি আবার আমার বাবা-মাকে দেখতে পাব। সূত্র: বিবিসি।

আরও পড়ুন ::

Back to top button

দয়া করে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিন

দেখে মনে হচ্ছে আপনি কোনও বিজ্ঞাপন ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমরা বিজ্ঞাপনের উপর ভরসা করি ওয়েবসাইটের ফান্ডের জন্য