বঙ্গোপসাগরে চার দেশের শুরু নৌ-মহড়া

ভারতের মালাবার উপকূলে যৌথভাবে শুরু হলো বিশ্বের শক্তিশালী চার দেশের নৌবাহিনীর সামরিক মহড়া। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার নৌসেনারা একসঙ্গে এই মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনকে টক্কর দিতেই এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
কয়েক সপ্তাহ আগে জাপানে মিলিত হয়েছিল ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান। বর্তমান পরিস্থিতিতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের শক্তি কমাতে কী কী কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া যায়, মূলত সে বিষয়েই আলোচনা হয়েছিল তাদের মধ্যে। ওই বৈঠকের তীব্র বিরোধিতা করেছিল চীন।
চীন বিবৃতি জারি করে জানিয়েছিল, আন্তর্জাতিক কূটনীতির নিয়ম লঙ্ঘন করে ওই বৈঠকের আয়োজন হয়েছে। কিন্তু চারটি দেশই চীনের হুমকিকে যে গুরুত্ব দেয়নি, মঙ্গলবার শুরু হওয়া মালাবার মহড়া তারই প্রমাণ।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই যৌথ নৌ-মহড়ায় অংশ নেয়। ১৩ বছর আগে অস্ট্রেলিয়া শেষ এই যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছিল। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল নেভি এই মহড়া থেকে বিরত থেকেছিল কারণ, চীনের চাপ কাজ করেছিল তাদের ওপর। দীর্ঘদিন পর তারা এ বছর এই মহড়ায় যোগ দিল।
আরও পড়ুন: ভারতীয় বিমান বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি, আরও তিন রাফালে আসছে আম্বালায়
ভারতীয় সামরিক বাহিনী সূত্র জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, মূলত দুই ভাগে এই মহড়ার আয়োজন হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে চারটি দেশ মহড়ায় অংশ নেবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরব সাগরে মহড়া অনুষ্ঠিত হবে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে।
ভারতীয় নৌবাহিনী, মার্কিন নেভি, জাপান মেরিটাইম সেল্ফ ডিফেন্স ফোর্স এবং রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান নেভির যুদ্ধ জাহাজ পৌঁছে গেছে বঙ্গোপসাগরে। গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়্যার, লং রেঞ্জ ফ্রিগেটস, এমএইচ ৬০ হেলিকপ্টার, ইন্টিগ্রাল এসএইচ-৬০ হেলিকপ্টার দেখা যাবে এই মহড়ায়।
সাবমেরিন, এয়ার কেরিয়ার জাহাজসহ বিভিন্ন আধুনিক যুদ্ধজাহাজও নিয়ে এসেছে প্রতিটি দেশ। ভারতের পক্ষ থেকে এই মহড়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন রিয়ার অ্যাডমিরাল সঞ্জয় বাৎসায়ন। ভারতীয় নৌসেনাও সমস্ত আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করবে এই সামরিক মহড়ায়।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্যের মতে, এটি রুটিন মহড়া হলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিচার করলে এ বছর এর গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি বলছেন, যেভাবে জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো আলোচনা করে এই সামরিক মহড়ায় যোগ দিয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তার বক্তব্য, ‘এই অঞ্চলে চীনের নৌবাহিনীর ক্ষমতা অপরিসীম। তারা বিপুল অস্ত্রে সজ্জিত। বলা যায়, এশিয়া প্যাসিফিকে, বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের একাধিপত্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত এক জোট হয়ে সেই ক্ষমতাকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এবারের মালাবার মহড়া তাই এত গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও পড়ুন: বিহারে দ্বিতীয় দফার ভোটপ্রচারে ‘পরিবারতন্ত্র’ নিয়ে খোঁচা প্রধানমন্ত্রীর
তবে এর বিরোধিতা করে চীন বলছে, এতে আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। সবশেষ ভারত-যুক্তরাষ্ট্র প্লাস টু বৈঠকেও চীনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ শক্তি গড়ে তোলার আলোচনা হয়েছে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের। এর পরই মালাবার মহড়া আন্তর্জাতিক মহলে অন্য বার্তা বহন করছে।