উঃ ২৪ পরগনা

সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের যোগ‍্য উত্তরসূরি কি হয়ে উঠতে পারবে বাইগাছি? সামনে কঠিন লড়াই

শুভাশিস ঘোষ

সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের যোগ‍্য উত্তরসূরি কি হয়ে উঠতে পারবে বাইগাছি? সামনে কঠিন লড়াই - West Bengal News 24

উন্নয়নের প্রতিশব্দ কি কান্না!হতাশা,অত‍্যাচার নির্যাতন?কেন জানি না এর থেকে ভাল কোন বিশেষন এই মুহূর্তে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। হ‍্যা এমনই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হল গত ৮ জানুয়ারি উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগর এলাকার বাইগাছি অঞ্চলে গিয়ে। এখানেই কেন্দ্রীয় সংস্থা ওয়েল এন্ড ন‍্যাচারাল গ‍্যাস কমিশনের উদ‍্যোগে শুরু হয়েছে তেল ও গ‍্যাস খননকার্য।

বৈজ্ঞানিকদের অভিমত প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক গ‍্যাস ও তৈল সমৃদ্ধ এই অঞ্চলের কয়েকশো একর জমি যা আগামী দিনে রাজ‍্য তথা গোটা দেশের পক্ষে এক শুভ লক্ষণ,যা তেল উৎপাদন ও শোধনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার এক সর্ববৃহৎ শিল্পক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে আগামী দিন।যারই শুভ সূচনা করে গেছেন গত ২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রসাদ। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রজেক্টের উন্নতি সাধনের জন‍্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমাদের রাজ‍্য সরকার। মাননীয়া মুখ‍্যমন্ত্রী সম্প্রতি প্রেস কনফারেন্স করে বলেছেন বাইগাছির ওই প্রজেক্টের সফল রূপায়নে বর্তমান রাজ‍্য সরকার সব রকম ভাবে সাহায্য করবে শুধু তাই নয় প্রয়োজনে রাজ‍্য এই সংস্হাকে বিনা পয়সায় জমিও দেবে।

এপর্যন্ত এতটাই ঠিক ছিল কিন্তু বাদ সেধেছে জমি অধিগ্রহণের কথায়। কারণ জমি অধিগ্রহণ করতে হলে প্রজেক্ট এলাকার লাগোয়া কয়েকশো একর জমি দখল করতে হবে বর্তমানে যার দখলী সত্বে প্রায় চার পাঁচশো মানুষ সেই জমিতে চাষবাস করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। স্বাধীনতার উষাকালে দেশভাগের দগদগে ঘা নিয়ে যে সমস্ত ওপার বাংলার মানুষগুলো ভিটেমাটি ছেড়ে কপর্দকহীন অবস্থায় এক কাপড়ে এদেশে একটু আশ্রয়ের জন‍্য চলে এসেছিলেন তাদের জন‍্য তখন উত্তর ২৪ পরগণার বাইগাছি মৌজার প্রায় কয়েকশো একর জমিতে সরকার বসতি ও চাষবাসের জন‍্য অনুমোদন সাপেক্ষ জমি তুলে দেওয়া হয়েছিল। যারই নিশর্ত ভোগদখলের মধ‍্য দিয়ে এই এলাকার প্রায় শ’পাঁচেক পরিবার চাষবাস করে সংসার প্রতিপালন করে এসেছেন এতদিন।

আরও পড়ুন : ক্যানিং-এ পুলিশের হাতে মাদক সহ ধৃত তিন মাদক কারবারি

এক সময় যে এলাকায় শেয়ালের ডাক আর জলা জঙ্গল ছাড়া কোন প্রাণের স্পন্দন ছিল না আজ সেই জায়গায় জলজঙ্গল সাফ করে উন্নতমানের বসতি থেকে দুই ফসলী তিন ফসলী কৃষিকার্য করে ধান,সর্ষে,মুসুর ডালের চাষ করে জমিকে উর্বর শস‍্যশ‍্যামলা করে তুলেছেন এখানকার কৃষক ভাইরা। এমনটাই শোনালেন সোমোলক্ষী কলোনির তপন দাস,নারায়ণ দাস ও সাথী দাসেরা।তাদের বক্তব‍্য বাপ ঠাকুরদার আমল থেকেই এই জমিতে আমরা চাষাবাদ করে আসছি যেখানে জমির ফসল বেচেই চলে আমাদের জীবনজীবিকা। তাদের কথায় উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দপ্তরের রেজিস্ট্রিকৃত সার্টিফিকেট ছাড়াও তাদের কাছে জমির অ্যালটমেন্ট পেপার আছে যাতে স্পষ্টই জমির চাষাবাদের জন‍্য সরকারি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার পরিবর্তে ল‍্যান্ড এন্ড রেভিনিউ দপ্তরে তারা নিয়মিত খাজনাও পরিশোধ করে এসেছেন এতদিন।

অথচ সেই সবকেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বর্তমান মা মাটি মানুষের সরকার ও তার প্রতিনিধিরা জমি অধিগ্রহণের জন‍্য চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন। স্বইচ্ছায় জমি ছেড়ে না দিলে সরকার বল প্রয়োগ করতেও পিছপা হবে না এমনটাই তাদের বলা হয়েছে। এই ব‍্যাপারে এদিন প্রজেক্ট এলাকায় দাঁড়িয়ে দুদিকের বিস্তৃণ চাষযোগ্য জমি দেখিয়ে তপন দাস বললেন,আজ সত্তর বছর ধরে আমরা এই জমির ভোগদখল করে আসছি, গ্রামের প্রায় চার পাঁচশো পরিবার যাদের প্রধান উপার্জনই হল জমিতে চাষাবাদ করা। দিনের পর দিন জমিতে সার দিয়ে সেচ করে এই জমির উর্বরতা বাড়িয়েছি অথচ সেই উর্বরা জমি এখন তুলে দিতে হবে প্রজেক্ট ম‍্যানেজারদের হাতে। না দিলে চলছে হুমকি শাসানি।

এ নিয়ে তাদের বক্তব্য আলোচনার জন‍্য আমাদের চেয়ারম্যান ডেকে দীর্ঘক্ষণ তার অফিসে বসিয়ে রাখেন তারপর সন্ধ‍্যা নাগাদ আমাদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করাতে চান। আমরা রাজি না হলে আমাদের সাথে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়,বলে দেওয়া হয় কোন পূর্ব শর্ত ছাড়াই ওই জমি অধিগ্রহণ করা হবে। বাধা দিলে জেলে যেতে হবে। তপনবাবুর বক্তব‍্য উক্ত প্রজেক্ট এলাকার কয়েকশো একর জমি যদি খাসই হবে তাহলে এই জমিতে ভুমি ও ভুমি রাজস্ব দপ্তর কিভাবে খাজনা আদায় করলো এতদিন? কিভাবে জমির রেজিস্ট্রেশন হয়! কারণ বহু জমির মালিক তারা জমি হস্তান্তর করে দিয়েছেন যা রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে এল আর ও দপ্তর থেকে।

আরও পড়ুন : তৃনমূলের বিরোধিতা করে বামফ্রন্টের প্রশংসায় পঞ্চমুখ শুভেন্দু অধিকারী

তাহলে এই জমি খাস হয় কিভাবে?যদিও এত তর্কবিতর্কের মধ‍্যে নাকি যেতেই রাজি নয় জেলা প্রশাসন। এমনটাই বললেন সোমোলক্ষী উদ্বাস্তু কলোনীর আরো এক বাসিন্দা নারায়ণ দাস। তার কথায় জেলার এডিএম সাহেব আমাদের বলেই দিয়েছেন জমি তাদের ছেড়ে দিতেই হবে। অন‍্যথায় জোরজবরদস্তি ওইসব এলাকার জমি দখল নেওয়া হবে। যাই এখন সিঁদুরে মেঘ দেখাচ্ছে এখানকার চার পাঁচশো কৃষক পরিবারদের। যাদের বক্তব্য আমরা কেউ উন্নয়নের বিরোধী নই। কিন্তু সরকার আমাদের জন‍্য কিছু একটা ভাবুন। নাহলে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাব?

এমনই যুক্তি দিলেন বাইগাছি এলাকার জমি রক্ষা আন্দোলনের অন‍্যতম প্রতিবাদী মুখ সাথী দাস। তার কথায় এই রাজ‍্যের মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় একদিন সিঙ্গুর,নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ২০১১ সালে রাজ‍্যের মুখ‍্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। আর আজ তারই প্রশাসন রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে জমি ছেড়ে দেওয়ার জন‍্য। অথচ এই লড়াইতে তাদের পাশে এখনো সেভাবে কোন সংগঠনকে দেখা যাচ্ছে না। পারতপক্ষে উন্নয়নের ঢাক্কানিনাদে যাদের কান্না এই মহুর্তে ঢাকা পড়েছে বলেই আমাদের মনে হল।

আরও পড়ুন ::

Back to top button

দয়া করে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিন

দেখে মনে হচ্ছে আপনি কোনও বিজ্ঞাপন ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমরা বিজ্ঞাপনের উপর ভরসা করি ওয়েবসাইটের ফান্ডের জন্য