আইফোনের ‘সিরি’ আসলে কে এই নারী?
পৃথিবীর লক্ষ কোটি আইফোন ব্যবহারকারী তার কন্ঠের সঙ্গে পরিচিত। ‘আবহাওয়া কেমন, ভালো পিজ্জা কোথায় পাবেন, আজ কার জন্মদিন’ এমন সাধারণ প্রশ্নতো বটেই, অসাধারণ, অস্বাভাবিক প্রশ্নের উত্তর মুহুর্তেই আপনাকে দিচ্ছেন তিনি। ভালো খারাপ যে কোনো মন্তব্যের জবাব দিচ্ছেন সহাস্য কন্ঠে। হ্যা সিরির কথা বলছি।
আইফোনের ভার্চুয়াল সহকারী সিরিকে চেনেন না এমন আইফোনের মালিক খুব কমই আছেন। এই সিরির সঙ্গে কথা বলাটা সবাই দারুণ উপভোগ করে। বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দেয় সে। কেউ কি কখনো ভেবেছেন, ‘সিরি’ আসলে কে?
এ্যাপলের নারী কণ্ঠের ভারচুয়াল এ্যাসিস্ট্যান্ট সিরি। বাস্তবে তার নাম সুজান বেনেট। বেনেটের কন্ঠেই আমরা শুনতে পাই সিরির কন্ঠ। ২০১১ সালে আইফোন ৪ চালু হওয়ার পর থেকে সিরির কন্ঠ পরিচিত হতে শুরু করে আইফোন ব্যবহারকারীদের মাঝে।
২০০৫ সালের আগে স্ক্যানসফটের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছিলেন সুজান। এক ডেটাবেজের জন্যে কণ্ঠ দেন তিনি, যা উক্তি সৃষ্টি করবে। তাকে কিছু অদ্ভুত বাক্যাংশ এবং বাক্য পড়তে হয়। স্ক্যানসফট সেই বাক্যকে ভেঙে ভাওয়েল, কনসোনেন্ট আর অনুচ্ছেদ তৈরি করে। এর সবই পরে সিরির কথায় রূপ নেয়।
সুসান জানতেন না যে তার কণ্ঠ অ্যাপলের আইফোনে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু পরে আইফোনে নিজের কণ্ঠ পেয়ে চমকে যান তিনি। একটা পর্যাযে ঠিক করেন, এই কণ্ঠ যে তার তা প্রকাশ করবেন তিনি। আসলে বুঝতেই পারেননি যে এক বিশাল মাপের বাণিজ্যের সাম্রাজ্যের অংশ হয়েছেন তিনি। কেবল আইফোনে কণ্ঠ দিয়েই ধনী হয়েছেন তিনি।
অনেকের ধারণা, সুসান বেনেট ৫.৫ মিলিয়ন ডলারের মালিক।
সত্যিকার অর্থে ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত এসআরআই ইন্টারন্যাশনালে প্রযুক্তিবিদদের একটি দল ফোনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জুড়ে দেয়ার প্রস্তাব করে। মানুষ ভয়েস কমান্ড দেবে আর ফোন তা পালন করবে। এইসব পরিকল্পনা থেকে ক্রমেই সিরির জন্ম। আর সেখানে ব্যবহৃত হয় সুসানের কণ্ঠ।
বাক্য চর্চার পর নানাভাবে রেকর্ডিং করা হতো; সেগুলো থেকে ভাওয়েল বা স্বরধ্বনি, কন্সোনেন্ট বা ব্যাঞ্জনবর্ণ, সিলেবল বা শব্দাংশ, ডিপথংস বা সন্ধ্যাক্ষর আলাদা করে শোনানো হতো। রেকর্ডিং এর পিচ (মাত্রা) এবং স্পিড (গতি) নিয়ে পুংখানুপংখ ব্যাখ্যা করা হতো।
ষ্পষ্ট সুন্দরভাবে শব্দ উচ্চারণের এই পদ্ধতির নাম ‘কনকেটেনেশন’ (concatenation)। আর এভাবেই চর্চা করতে করতে সিরির উদ্ভব। বেনেটের কন্ঠের শব্দ ও বাক্য গবেষণা করতে করতেই সিরির তৈরী। জিপিস বা টেলিফোনের মতো ডিজিটাল যন্ত্রে সেই শব্দই আমরা শুনি।
এখন সিরিকে যদি প্রশ্ন করেন, তুমি কে? সেক্ষেত্রে কিন্তু এসব ইতিহাস বলবে না সে। তবে তার কয়েক ধরনের জবাব মিলবে। যেমন :
১. আমি সিরি, আপনার ভার্চিয়াল অ্যাসিস্টেন্ট,
২. আমি সিরি, সাহায্যের জন্যে আছি,
৩. আমি সিরি, কিন্তু নিজের সম্পর্কে বলতে পছন্দ করি না,
৪. আমি সিরি, তবে আমার সম্পর্কে বলা এটাই যথেষ্ট যে, আপনাকে কীভাবে সহায়তা করতে পারি?
আবার যদি প্রশ্ন করেন, সিরি, তুমি কোথা থেকে এসেছো? সিরি বলতে পারে :
১. আমি, সিরি, ক্যালিফোর্নিয়ায় অ্যাপলের করা ডিজাইন,
২. বক্সে যেভাবে বলা হয়েছে, আমি ক্যালিফোর্নিয়ায় অ্যাপলের ডিজাইন।