সাহিত্য

সর্ষে ক্ষেতের উপর একগুচ্ছ কবিতা:: এ কে সরকার শাওন

এ কে সরকার শাওন

সর্ষে ক্ষেতের উপর একগুচ্ছ কবিতা:: এ কে সরকার শাওন

হলুদ-ছোঁয়া

এ কে সরকার শাওন 

 

কেউ বলে হলুদ

কেউ বলে সোনালী

আমি বলি…….

হলুদ রং সবচেয়ে প্রভাবশালী !

আবেগ-অনুভূতিকে করে উদ্বেলিত

কবিকে করে খেয়ালী!

 

কেউ বনে যায় হিমু

হলুদ পান্জাবী পরে

রক্তলাল পদ্ম হাতে নিয়ে

বনে বাদাড়ে ঘুরে ফিরে মরে!

 

হলুদ মিশে যায় সবখানেই

সবাইকে ভালবাসে;

হলুদের কাছ নেই ভেদাভেদ

সবারই যে কাজে আসে।

 

অঘ্রাণে পাকা ধানের

হলুদের সমারেহে

সবার মন-প্রাণ কেড়ে যায়,

কৃষাণ-কৃষাণীর মুখে ফোটে হাসি

তাঁরা ভাসে খুশীর বন্যায়।

 

বর-কনে আশীর্বাদ লভে

তাজা হলুদের ছোঁয়ায়।

বসন্তরাজ পূর্ণ হয়

হলুদের আভায়,

প্রিয়ার খোঁপা সার্থক হয়

হলুদ গাঁদা ফুলের শোভায়।

 

—————————————————————————-

শর্ষে ক্ষেতের আঁচলে

এ কে সরকার শাওন 

 

শর্ষে ফুলে হলদে পুরী,

বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত!

মন চায় সব ফেলে

হয়ে যাই অনিকেত!

 

বাতাসের সাথে আড়াআড়ি

নাচে সোনালি হলুদ ফুল!

শ্যামল কচি ডগার কর্ণে

দোলে যেন বাহারী দুল!

 

পড়ন্ত বিকেলের আলো

ফুলের বাড়ায় জ্যোতি!

মৌ-ভ্রমরের নাচে গানে

শিহরিত হয় জরতী!

 

দূর সীমান্তে নীলাকাশ

ঝুঁকে  চুমুতে হারায়!

সবুজ পত্র বৃক্ষরাজি

ইশারায়  স্বাগত জানায়!

 

প্রেয়সীর হাসিমাখা মুখ

স্মরি ফুলে চুপিসারে;

তীরের ফলার হাসি বিঁধে

হরিষে বিষাদ অন্তরে!

 

——————————————————————————-

 

শর্ষে ক্ষেতের ইশারা 

এ কে সরকার শাওন 

 

কিউকেনহফ-হলস্ট্যাট নয়,

এসো সরিষা ক্ষেতের আলে;

যেথায় হলদে রোদ ঝলমলায়

চকে দীপ্তির ঢেউ খেলে !

 

বঙ্গ ললনা, শীতে অনন্যা,

হলুদ বিস্তৃত প্রান্তর!

সবুজ পাড়ে হলুদ শাড়ী

সরিষা ক্ষেত কাটে অন্তর!

 

ফুলে ফুলে ঢেউ খেলে

বাতাস চুৃমোয় নেচে!

সুনীল আকাশ ঝুঁকে সকাশ

মিতালী পাতায় যেচে!

 

সবুজে হলুদ, আকাশে নীলে

চাক্ষুষ রূপকথা উদ্ভাসে!

রূপচ্ছটায় চোখ ধাঁধায়

জগলুর প্রিয় বাংলাদেশে!

 

ফুলে ফুলে উড়ে প্রজাপতি

মৌমাছি গুনগুনায়!

এমন দৃশ্যে বিশ্ব বিস্মে

লিখা আছে কবিতায়।

 

শর্ষে ফুলের শৈল্পিক নৃত্যে

চকে চকে পড়ে সাড়া!

নানান মানুষ ছবি তোলে

নির্মল আনন্দে আত্মহারা!

 

প্রকৃতি নারী হলদে পরী

শীতের বাংলাদেশে!

শর্ষে ফুলের গুনকীর্তনে মাতে

পর্যটক নির্বিশেষে!

 

ক্ষেতের আলে দাড়িয়ে কৃষক

সোনালী স্বপ্ন বোনে!

মন প্রজাপতি ডানা মেলে

খুশীর সুনীল গগনে!

 

কবিতাঃ শর্ষে ক্ষেতের ইশারা

কাব্যঃ আপন-আভাস

কবিঃ এ কে সরকার শাওন

শাওনাজ ভিলা, উত্তরখান, ঢাকা।

 

——————————————————–

 

হলুদ সায়রে

এ কে সরকার শাওন 

 

পদ্মার কোলে রাওথায় ঢালে,

শর্ষে ক্ষেতের কোটি সোনা ফুলে;

নিজেকে গিয়েছিলাম বেমালুম ভুলে

সেদিনের সোনাঝরা পড়ন্ত বিকেলে!

 

হঠাৎ দৃষ্টি থমকে যায়,

মর্ত্যে এ কোন শশী অনতিদূরে!

আনত নয়নে হাসছে মিটিমিটি

শ্যামলী তম্বী ফুল-সায়রে!

সুবিন্যস্ত মেঘ কালো ঘন চুল;

অনন্ত রহস্যময়ী সেই উর্বশী!

দন্তমালার মুক্তার ঝিলিকে

তপোভঙ্গে নিঃস্ব হবেই ঋষি!

 

অঙ্গে জড়ানো নকশা খচিত

কলাপাতা সবুজ শাড়ী!

লাল আঁচল সুগ্রীবায় উড়ে

দিতে চায় আকাশে পাড়ি!

 

হঠাৎ হাত নেড়ে বারে বারে

ঈশারায় কাছে ডাকে মোরে!

আলোর আহ্বানে মন্ত্রমুগ্ধ

পতঙ্গের মত ছুটি তাঁর ধারে!

 

তাঁর যাদুকরী ছন্দবদ্ধ বাণী

মায়াবী চোখের তীর্যক তীর;

চারপাশের মিষ্টি মৌ মৌ ঘ্রাণে

সম্মোহিত আমি চুপচাপ স্থীর!

 

অবাক কান্ড, কোথায় দেখেছি,

তাঁকে খুব চেনা চেনা মনে হয়!

যেন তাঁর সাথে আছে গেথে

জন্ম জন্মান্তরের পরিচয়!

 

কিন্নরী কন্ঠে সুধাময়ী শুধালো,

“তুমি চিনোনি প্রাণ সজনীরে?

গত জনমে হারিয়েছো হেলায়

পৌষের শেষে এই প্রান্তরে!

 

ফুলে ফুলে ছেয়েছে চারপাশ

সেজেছে আকাশ সেজেছে ধরনী!

কান পেতে শোন সানাইয়ের সুরে

মিলনের প্রহর গুনছে শুভ যামিনী!

 

তাঁর হাতে হাত রেখে যবে

খোঁপায় গুঁজি ফুল ভালোবেসে!

“এবার আসি, ভালো থেকো;” বলে

হাওয়ায় মিলায় সে মৃদু হেসে!

 

সম্বিৎ ফিরে দেখি একাকী

শুনশান বিজন প্রান্তরে!

তরঙ্গে শিহরিত তনুমন

ভালোলাগায় গিয়েছে ভরে!

 

যে আছে অন্তরের অন্তরে

শত কোটি বছর ধরে;

জানি না সে কেমন করে

মুর্তিমান হলো ক্ষনিকের তরে!

 

যাকে হারিয়েছি পৌষের শেষে

রাওথার বিস্তীর্ণ হলুদ সায়রে!

তাঁকেই খুঁজে মরি বিশ্ব ঘুরে,

মেরু মরু গিরি প্রান্তরে!

 

কবিতা: হলুদ সায়রে

কাব্যগ্রন্থ: আলো-ছায়া

এ কে সরকার শাওন

শাওনাজ ভিলা, উত্তরখান, ঢাকা।

আরও পড়ুন ::

Back to top button