মুখ রক্ষায় আবারও মিথ্যের আশ্রয়! ‘যুদ্ধ জিতেছি’ দাবি করে ভারতের উদ্দেশে শরিফের ‘শান্তির বার্তা’
ওয়েস্ট বেঙ্গল নিউজ ২৪
ভারতের হামলায় বিপর্যস্ত পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা কাঠামো। তবু দেশবাসীর কাছে আত্মসম্মান রক্ষায় ফের মিথ্যার আশ্রয় নিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। শুক্রবার ইসলামাবাদে আয়োজিত এক ‘যুদ্ধজয়’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শরিফ বলেন, “যুদ্ধ জিতেছি আমরাই। তবে স্থায়ী শান্তির জন্য একজন ভালো প্রতিবেশী দরকার। আমরা শত্রুদের যথেষ্ট কড়া জবাব দিয়েছি। আমরা বিশ্বের এই অংশে শান্তি চাই। সেটা সম্ভব তখনই যখন প্রতিবেশীরা ভালো হয়।” একই সঙ্গে তিনি কাশ্মীর সমস্যা এবং সিন্ধু জলচুক্তি নিয়েও মত প্রকাশ করেন। কার্যত ভারতের দিকেই শান্তির বার্তা ছুড়ে দিলেন শরিফ! বিষয়টি দেখে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ হাস্যরসের সুরে মন্তব্য করেন — কে কাকে শান্তি শেখাচ্ছে?
পাক প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার ‘ইউম-ই-তাশাকুর’ বা ধন্যবাদজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশের সেনাপ্রধান, বিভিন্ন বাহিনীর উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ও সামরিক কর্তা। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় কোরানের আয়াত পাঠ, কুচকাওয়াজ এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। ভারতীয় অপারেশন ‘সিঁদুরে’র ধাক্কায় বিধ্বস্ত হলেও পাকিস্তান নিজেদের দুর্দশা স্বীকার করতে নারাজ। বরং সাম্প্রতিক সংঘর্ষে নিজেদের জয় বলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এই ধন্যবাদজ্ঞাপন অনুষ্ঠান আসলে সেই প্রচারকেই আরও জোরালো করতে একটি প্রচেষ্টা, যা বাস্তব থেকে দূরে এবং একপ্রকার আত্মপ্রবঞ্চনার নামান্তর।
পাকিস্তানি সংবাদপত্র ‘দ্য ডন’ অনুষ্ঠান সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে। সেখান থেকে জানা যায়, ভাষণে শরিফ বলেন, “ভারত যা করেছিল, তার সঙ্গে কড়া টক্কর দিয়েছে আমাদের সেনাবাহিনী। যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে। এভাবেই সেনা আমাদের রক্ষা করবে। গোটা দেশ, পেশোয়ার থেকে করাচি, সবাই সেনার সঙ্গে আছে। তাঁরা সফল হবেনই। আমি সেনাবাহিনীর সকলকে এই সাফল্যের জন্য কুর্নিশ জানাই।” এর পরে তিনি জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে মুখ খোলেন। শরিফের ভাষায়, “এই সংঘর্ষ থেকে আমরা যা বুঝেছি, তা হল প্রতিবেশীর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসে জম্মু-কাশ্মীর সহ একাধিক বিষয় সমাধান করতে হবে। তা নইলে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। স্থায়ী শান্তি তখনই আসবে, যখন জম্মু-কাশ্মীর আর জলচুক্তি নিয়ে স্থায়ী সমাধান আমরা পাব। হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই বাণিজ্য, সীমান্ত সমন্বয় বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করতেই পারি। সন্ত্রাস দমন নিয়েও আলোচনা হতে পারে। তবে কাশ্মীর ও সিন্ধুর জল আমাদের প্রাথমিক দাবি।”
এই পরিস্থিতিতে যখন দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে, তখন আমেরিকা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে উৎসাহ দেয়। তবে ভারতের জবাব ছিল স্পষ্ট— কেবল পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও সন্ত্রাস দমন নিয়েই আলোচনা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বহুবার বলছেন, “আলোচনা আর সন্ত্রাস একসঙ্গে হতে পারে না, রক্ত আর জল একসঙ্গে বইতে পারে না। সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দিলে পাকিস্তানও তার শিকার হবে একদিন। তাই সন্ত্রাস বিরোধিতায় সদর্থক পদক্ষেপ নিক পাকিস্তান।” এর জবাবে শরিফ তার শুক্রবারের ভাষণে একের পর এক মিথ্যার স্তূপ সাজিয়ে সেই বার্তাকেই যেন পালটা দিলেন।