কিডনি মানুষের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্ত পরিশোধন করে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। কিন্তু সামান্য অসচেতনতা কিংবা ভুল অভ্যাসের কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির ক্ষতি হতে পারে ধীরে ধীরে, যা একপর্যায়ে প্রাণঘাতী কিডনি ব্যাধিতে রূপ নিতে পারে। চিকিৎসকদের মতামত ও স্বাস্থ্য গবেষণার ভিত্তিতে কিডনির ক্ষতির ১০টি প্রধান কারণ তুলে ধরা হলো:
১. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া:
প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ কিডনির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়, যা কিডনি রোগের অন্যতম কারণ।
২. পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া:
শরীরে পানির ঘাটতি কিডনিতে বিষাক্ত পদার্থ জমতে দেয়। পর্যাপ্ত পানি না খেলে ইউরিন ঘন হয়ে যায় এবং পাথর বা ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩. অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ সেবন:
অনেকেই নিয়মিত প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করেন যেকোনো ব্যথা হলেই। এসব ওষুধ দীর্ঘদিন সেবনে কিডনি কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।
আরও পড়ুন :: রান্নার যেসব ভুল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ানোর কারন
৪. অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ:
বাংলাদেশে কিডনি রোগের সবচেয়ে বড় দুই কারণ হলো ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন। নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনির রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ধীরে ধীরে কিডনি অকেজো হয়ে যায়।
৫. ধূমপান ও মদ্যপান:
ধূমপান কিডনির রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয় এবং কিডনি টিস্যু নষ্ট করে। মদ্যপানে শরীরে পানিশূন্যতা হয় এবং অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়ে পাথরের আশঙ্কা বাড়ে।
৬. অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ:
বিশেষ করে অতিরিক্ত লাল মাংস বা প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে কিডনির ফিল্টারিং ক্ষমতার ওপর চাপ পড়ে। এতে কিডনি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৭. বিনা পরামর্শে হারবাল বা ভেষজ ওষুধ সেবন:
অনেকে মনে করেন ভেষজ ওষুধ ক্ষতিকর নয়, কিন্তু এসব ওষুধে থাকা সিসা বা ভারী ধাতু কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
আরও পড়ুন :: কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখবে যে খাবার
৮. মূত্র চেপে রাখা:
দীর্ঘ সময় প্রস্রাব আটকে রাখলে মূত্রথলি ও কিডনিতে ইনফেকশন বা ইউরিনারি রিফ্লাক্স হতে পারে। এটি কিডনির স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।
৯. অপর্যাপ্ত ঘুম ও অতিরিক্ত স্ট্রেস:
অনিয়মিত ঘুম ও মানসিক চাপ কিডনির হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করে এবং শরীরের রক্তচাপ বাড়ায়, যার বিরূপ প্রভাব পড়ে কিডনির ওপর।
১০. পর্যাপ্ত ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি না থাকা:
শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনকে ত্বরান্বিত করে, যা কিডনি রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
চিকিৎসকদের মতে, কিডনি নীরব ঘাতক। ক্ষতি হতে থাকলেও প্রথম দিকে কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। তাই নিয়মিত চেকআপ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং কিডনি-বান্ধব অভ্যাস বজায় রাখা জরুরি।