অভাবী অসুস্থ বৃদ্ধের কাছে ওষুধ পৌঁছে দিলেন ঝাড়গ্রামের দুই শিক্ষক
স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: লকডাউনে মুম্বইয়ে আটকে রয়েছেন ঝাড়গ্রামের যুবক স্বদেশ চক্রবর্তী। এদিকে ঝাড়গ্রামের বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন স্বদেশের বৃদ্ধ বাবা পরিতোষ চক্রবর্তী। অসুস্থ পরিতোষবাবুর কাছে ওষুধ কেনার টাকা ছিল না। ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রে স্বদেশের আবেদনে সাড়া দিয়ে তাঁর বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধ বাবার কাছে ওষুধ পৌঁছে দিলেন দুই প্রাথমিক শিক্ষক। শুধু ওষুধ পৌঁছে দেওয়াই নয়, ওই বৃদ্ধের রক্তের রুটিন সুগার পরীক্ষাও নিজেদের খরচে করিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা ওই দুই তরুণ শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতায় দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেছেন পরিতোষবাবু।
ঝাড়গ্রাম শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বামুনঝরিয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন বৃদ্ধ পরিতোষ চক্রবর্তী। তিনি ঠোঙা বানিয়ে সংসার চালান। তাঁর ছেলে স্বদেশ মুম্বইয়ে একটি সংস্থার কাজ করেন। লকডাউনে ওই সংস্থার কাজ বন্ধ। স্বদেশও মুম্বইয়ে আটকে পড়েছেন। তাঁর হাতে তেমন টাকাও নেই। এদিকে ঝাড়গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ। তার ওষুধ ফুরিয়ে গিয়েছে। টাকাও নেই। এই পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে স্বদেশ বিভিন্ন জনের কাছে ফেসবুক মেসেঞ্জারে মেসেজ করে আবেদন জানিয়েছিলেন। তেমন সাড়া না মেলায় হতাশায় বাবার ফোন ধরাও বন্ধ করে দেন তিনি। কী বলবেন? কাছে টাকা নেই। ওদিকে ওষুধের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন পরিতোষবাবু।
শেষ পর্যন্ত মেসেঞ্জারে ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক সুদীপ্ত চক্রবর্তীকে সমস্যার কথা জানান স্বদেশ। বিষয়টি জানতে পেরেই সুদীপ্ত ও তাঁর বন্ধু আর এক প্রাথমিক শিক্ষক উজ্জ্বল পাত্র বামুনঝরিয়ায় পরিতোষবাবুর কাছে গিয়ে প্রেশক্রিপশন নিয়ে আসেন। তারপরে প্রয়োজনীয় সুগার ও প্রেসারের ওষুধ কিনে পৌঁছে দেন সুদীপ্ত ও উজ্জ্বল। ওই দুই শিক্ষকের উদ্যোগে ঝাড়গ্রামের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মী পরিতোষবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর রক্তের নমুনা নিয়ে আসেন সুগার পরীক্ষার জন্য। সেই রিপোর্ট পরিতোষবাবুর কাছে পৌঁছে দিয়ে আসেন সুদীপ্ত ও উজ্জ্বল। সুদীপ্ত চক্রবর্তী বিনপুর-১ চক্রের শুটপিপুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর উজ্জ্বল পাত্র হলেন মানিকপাড়া চক্রের রাজাবাসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। দুই শিক্ষক বলছেন, ‘‘মানুষ তো মানুষের জন্যই। কী আর এমন কাজ করেছি! স্বদেশ না ফেরা পর্যন্ত তাঁর বাবার জন্য নিয়মিত ওষুধ পৌঁছে দেব।”