প্রথমে ফেরালেও মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর হস্তক্ষেপে ঝাড়গ্রামের এক গুরুতর অসুস্থ শিশুকে ভর্তি নিল কলকাতার হাসপাতাল
স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: জঙ্গলমহলের মানুষের বন্ধু তিনি ফের বোঝালেন পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। মন্ত্রীর উদ্যোগে ঝাড়গ্রামের এক গুরুতর অসুস্থ শিশুকে দীর্ঘ গড়িমসির পরে কলকাতার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হল। ঝাড়গ্রামের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অভিরূপ পাত্র নামে আড়াই বছরের ওই শিশুটির সিটিস্ক্যান করে মস্তিষ্কে ক্ষত ধরা পড়ে।
অভিরূপের বাড়ি ঝাড়গ্রাম ব্লকের আগুইবনি পঞ্চায়েতের একতাল গ্রামে। ঝাড়গ্রামের এক বেসরকারি নার্সিংহোমের চিকিৎসক শিশুটিকে দ্রুত মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করানোর জন্যে কলকাতার সরকারি হাসপাতালে রেফার করে দেন। শিশুটির বাবা সৌমেন পাত্র পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার। সৌমেন জানান, ছেলেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশ-প্রশাসনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে গাড়িতে করে শনিবার কলকাতার ওই হাসপাতালে পৌঁছন তিনি ও তাঁর স্ত্রী। চিকিৎসকের রেফারের কাগজপত্র ও মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখানো সত্ত্বেও শিশুটিকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এমন অবস্থায় চরম সমস্যায় পড়েন তাঁরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কাতর অনুনয়-বিনয় করতে থাকেন ওই দম্পতি। কিন্তু হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এই পরিস্থিতিতে বাইরে থেকে আসা রোগীকে এভাবে ভর্তি নেওয়া সম্ভব নয়। এর পরেই সৌমেন গ্রামে পরিচিতজনদের ঘটনাটি জানান। সৌমেনের এক আত্মীয় একতাল গ্রামের বাসিন্দা বিমা কর্মী শুভেন্দু ভুই বিভিন্ন জনের কাছে সারাদিন ধরে অনুরোধ জানাতে থাকেন। কিন্তু কেউই সাহায্যের জন্যে এগিয়ে আসেননি।
শেষ পর্যন্ত শুভেন্দু ভুই ঝাড়গ্রামের তরুণ সমাজসেবী স্নেহাশিস ভকতকে ঘটনাটি জানান। মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর বিশেষ স্নেহভাজন স্নেহাশিস সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত স্নেহাশিস সরাসরি বিষয়টি মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে জানান। শিশুটির বিষয়ে জেনে শনিবার রাতেই প্রতিনিধি মারফত হাসপাতালে যোগাযোগ করেন মন্ত্রী। শুভেন্দু অধিকারীর এক প্রতিনিধি শনিবার রাতে পৌঁছে যান ওই হাসপাতালে। এর পর শিশুটির প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়। রবিবার দুপুরে শিশুটিকে ওই হাসপাতালের নিউরো সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি নেওয়া হয়। শিশুটির বাবা সৌমেন পাত্র বলেন, “ভাবতেই পারিনি ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারব।
শনিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত জরুরি বিভাগের বাইরে ছেলেকে নিয়ে আমি ও স্ত্রী ঠায় বসেছিলাম। কী হবে ভেবে পাচ্ছিলাম না। অবশেষে মাননীয় মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর হস্তক্ষেপে আমার ছেলের প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা হয় এবং প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরে রবিবার দুপুরে ছেলেকে ভর্তি নেওয়া হয়। মন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।” শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে জঙ্গলমহলের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ঝাড়গ্রামের মানুষ তাঁকে ‘জঙ্গলমহলের কুটুম’ (আত্মীয়) নামে অভিহিত করেন। রাজনৈতিক ভাবে কয়েকমাস ধরে তিনি জঙ্গলমহলে প্রকাশ্যে আসছেন না। তবে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিতে এবং রামকৃষ্ণ মিশনের অনুষ্ঠানে প্রায়ই তিনি ঝাড়গ্রামে আসেন। কেউ সমস্যায় পড়েছেন জানতে পারলে সাহ্যায্যের হাতও বাড়িয়ে দেন মন্ত্রী। ছোট্ট অভিরূপের ঘটনায় ফের প্রমাণ হল ঝাড়গ্রাম জেলাবাসীর পাশেই আছেন ‘জঙ্গলমহলের কুটুম’ শুভেন্দু অধিকারী।