পদে নেতা নয়, দলকে যাঁরা জেতান সেই কর্মীরাই নেতা
স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: পদ হারিয়ে কেউ নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন। কেউ আবার মনোমত পদ না পেয়ে ইস্তফা দিয়েছেন। ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম ব্লকের তরুণ নেতা সুমন সাহু জানিয়ে দিলেন পদ পেলেই নেতা হওয়া যায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে সৈনিকেরা নির্বাচনে দলকে জেতাতে রাতদিন এক করে দেন, তাঁরাই প্রকৃত নেতা।
তাঁরাই দলের সৈনিক। এবার নয়াগ্রাম ব্লকের সভাপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন সুমন। পিকে টিমের পছন্দও ছিলেন তিনি। যদিও ব্লকের এক নেতার দাবিতে শ্রীজীবসুন্দর দাস নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি হয়েছেন। তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছে সুমনকে।
রবিবার কলমাপুখুরিয়া গ্রামে সুমনের বাড়ির প্রাঙ্গণে বিপুল সংবর্ধনা দিলেন দলের কর্মীরা। সেই সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও আদিবাসী সংগঠনের পক্ষ থেকেও সুমনকে অভিনন্দন জানানো হল। সংবর্ধনার জবাবে অজস্র ফুলের মালা গলায় সুমন কর্মীদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘‘কে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেলেন, কে সহ সভাপতি হলেন, কে ব্লকের সভাপতি হলেন, সেটা বড় কথা নয়, আমরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক।
দলের শ্রীবৃদ্ধি বাড়াতে কে কতটা কাজ করছি, সেটাই বড় কথা। পদ নয়, সংগঠন পোক্ত করতে যে কর্মীরা দিনরাত এক করে থাকেন, তাঁরাই দলের প্রকৃত কারিগর।’’ ২০২১ সালের আসন্ন ভোটে জেলার চারটি বিধানসভা আসনে পুনরায় জয়ী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কর্মীদের এগোনোর কথা বলেন সুমন।
কর্মীদের উদ্দেশ্যে সুমন জানান, বিপদে আপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। রাত ১২টাতেও বিপন্ন মানুষের ডাক পেলে তাঁর পাশে গিয়ে যথাসাধ্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। কর্মীদের উদ্দেশ্যে সুমনের বার্তা, ‘‘আপনারাই দলের ‘মুখ’। তাই আপনাদের সুকর্মের মধ্য দিয়েই তৃণমূলের জমির মাটি আরও মজবুত হবে। আমিও একজন কর্মী হিসেবে সেই চেষ্টা করে চলেছি।’’
ঘটনা হল, সুমনের পরিবার তৃণমূল সমর্থক। কিন্তু তৃণমূলের ব্লক নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে মন কষাকষির জেরে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। বিজেপি-র যুব মোর্চার জেলা সভাপতি ছিলেন এক সময়ে। তৃণমূলের দায়ের করা ভুয়ো অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করার অভিযোগও ওঠে। পরে জামিনে মুক্ত হন।
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ২০১৬ সালে গোরুয়া শিবির ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন সুমন। সুদর্শন ও সুবক্তা সুমনকে পছন্দ করেন দলের তরুণ প্রজন্ম। পিকে টিম সমীক্ষার সময়ে সুমনের নাম ব্লক সভাপতি হিসেবে আলোচনার মধ্যে এনেছিল।
পরে অবশ্য ব্লকের এক নেতার হস্তক্ষেপে রাজ্য নেতৃত্ব সুমনকে আর ব্লক সভাপতি করেননি। এদিন সুমনের বক্তব্যে সে ব্যাপারে প্রচ্ছন্ন ঊষ্মার আভাস পাওয়া গিয়েছে বলেই মনে করছেন দলীয় কর্মীদের একাংশ। সুমন অবশ্য জানাচ্ছেন, পদ নিয়ে তিনি লালায়িত নন। বিধানসভায় দলকে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরানোর জন্য কাজ করে চলেছেন তিনি।