মতামত

দেবী মহিষাসুরমর্দ্দিনী এবং বিন্ধ্যবাসিনী আগমন দোলায়

মৃত্যুঞ্জয় সরদার

দেবী মহিষাসুরমর্দ্দিনী এবং বিন্ধ্যবাসিনী আগমন দোলায় - West Bengal News 24

এ পৃথিবীতে আমরা মাতৃগর্ভে থেকে জন্ম নিয়ে, ধরণীর বুকে, ধরাধামে মায়ার সংসারে লীলা খেলায় মেতে আছি!ভুলে গেছি সেই আরদ্ধ দেবদেবীর কথা ,যিনি আমাকে এই পৃথিবীর বুকে মনুষ্যরূপ দিয়েছিল। আমার আমার মধ্যে জড়িয়ে গিয়েছি এবং ভুলে গেছি আদি সত্যার কথা।তারপরও আমরা ভেবে দেখি না, কি নিয়ে এসেছি আর কি নিয়ে যাবো, এই পৃথিবী ছেড়ে দুনিয়ার ওপারে।তাই সৃষ্টিকর্তা বারবার মনে করাতে বিভিন্ন ভাবে আগমন হয়েছিল এই পৃথিবীর বুকে।আমরা সেই স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ,বছরে একবার তাকে অন্তত যাকযোগ্য করে আগমনের ঘটায়।

দেখতে দেখতে এসে গেছে দুর্গাপুজো এখনো আমাদের মনের অন্তরে ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে। মা আসছেন সেই আনন্দে উদ্বেল বঙ্গবাসী। নতুন পোশাক, সাজগোজ, ঘর সাজানো সবই অনেকের সারা হয়ে গেছে। বঙ্গজীবনের শ্রেষ্ঠ উৎসব শুরু থেকে শেষ হয় দেবী দুর্গার বাপের বাড়ি আগমন থেকে স্বামীগৃহে গমন পর্যন্ত।

তো কৈলাস থেকে ৪ সন্তানকে নিয়ে মা তো আর হেঁটে আসবেন না পিতৃগৃহে। তাই যানবাহন প্রয়োজন। দেবী কিন্তু আদিঅনন্তকাল ধরে ৪টি যানেই গমনাগমন করেন। প্রতিটি যানবাহনে গমনাগমনের আবার প্রভাবও পড়ে জগত সংসারে, মানব জীবনে। ফলে প্রতি বছরই বাঙালির কমন প্রশ্ন হল মা কিসে আসছেন আর কিসে ফিরছেন?

এবার মা আসছেন ৬ই কার্তিক ১৪২৭, ২৩অক্টোবর ২০২০ শুক্রবার সপ্তমীতে। দেবীর এবার দোলায় আগমন। অর্থাৎ দোলায় বা পালকি আসছেন মা। মণ্ডপে দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন হয়ে থাকে সপ্তমী তিথিতে। ওই তিথিতেই দেবীকে আবাহন অর্থাৎ সাদরে আমন্ত্রণ এবং অনুরোধ করা হয় পুজো গ্রহণের। সপ্তমীর দিনটিই দেবী দুর্গার মর্তে আগমনের দিন, ষষ্ঠী তিথিতে নয়।

এবার মায়ের দোলায় আগমন। আর কিসে মা আসছেন বা ফিরছেন তার ওপর নির্ভর করে জগত সংসারের ভালমন্দ। দোলায় আগমনের ফল হল ‘মড়ক’। সেই কারণেই পৃথিবীতে এত মহামারী করোনাভাইরাস এর কারণে মৃত্যুবরণ করছে কেন দেবী দুর্গা তো বাপের বাড়িতে পালকি বাজারে আসছে আর তারপর তো মৃত্যু অনিবার্য।মা আসার আগে তার নমুনা এভাবে দেখিয়ে যাবে আমরা কেউ ভাবতে পারিনি ।পৌরাণিক তথ্য ও পুরাণিক কাহিনী সত্যতার মধ্যে বাস্তব রূপ এ বছরই দেখা দিচ্ছে, এটা কে অস্বীকার করার মতন ক্ষমতা আমাদের মত ব্যক্তিত্বদের নেই।

দেবী দুর্গা যদি দোলায় চড়ে আগমন করেন, তার ফল মর্ত্যে বহু মৃত্যু৷ এই বহু মৃত্যু হতে পারে প্রাকৄতিক দুর্যোগের কারণে কিংবা যুদ্ধ হানাহানির কারণে।দোলা হল পালকির মতো একটি যান ৷ যার স্থিরতা কম, সদা দোদুল্যমান, অল্পে ভঙ্গুর এবং অনেক সময়ই বিপদের কারণ৷ তাই দুর্গার দোলায় গমনাগমনে মর্ত্যভূমির স্থিরতা ব্যাহত হতেই পারে।সেটা আমরা এই বছরে এসে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রমাণ স্বরূপ পেয়েছি।ফলে আজকের দিনে অনেক মানুষের কাছে প্রশ্ন চিহ্ন দাঁড়িয়ে রয়েছে, যে দেবী মা দুর্গা আসার আগে যেভাবে মৃত্যু মতন ঘটনা মহামারী তৈরি করে গেল করোনাভাইরাস কে সামনে রেখে।

দূর্গা পূজার পরে কি তাহলে করোনাভাইরাস পৃথিবীর বুক থেকে অটোমেটিক নিস্তেজ হবে তার কোন উপায় দেবী দুর্গা করে গেলেন।এমনটাই হতো ইঙ্গিত বাস্তবে দেখা যাবে সেটা অপেক্ষায় রয়েছে অনেক মানুষ।দুর্গাপূজার পরেই মা দুর্গার নিজেই হয়তো ব্যবস্থা করে যাবেন আমার আপনার মত মানুষের মধ্যে দিয়ে, করনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রকৃত বাস্তবে কার্যকারিতা দেখতে পাবো। এমনটাই বিশ্বাস করছেন ধর্মগুরুর একাংশ।মা দুর্গা আসার পরেই করোনা যে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেবে এমনটা বিশ্বাস করতে পারছে না, বৈজ্ঞানিক মহলের একাংশ।

ভগবান বলে কোন একটি শব্দ পৃথিবীতে আজও ভিরাজমন, প্রাকৃতিক শক্তি কে অস্বীকার করার মতো ক্ষমতা আমাদের কারণ নেই।পৃথিবীতে এমন ব্যক্তি আছে তারা একটা স্থানে বসে আর একটা স্থানে কি ঘটনা ঘটছে পত্র-পত্রিকা না পরে অ্যান্ড্রয়েড যুগে ও ধ্যানযোগে বলে দিতে পারেন। এই কথার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে ভগবান পৃথিবীতে আছে আজো বিরাজমান।এই কথাটি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রমাণ খুঁজতে গিয়ে। জগতে প্রথম দুর্গাপূজা করেছিলেন পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ।

দেবী মহিষাসুরমর্দ্দিনী এবং বিন্ধ্যবাসিনী আগমন দোলায় - West Bengal News 24

ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে আছে, পরমাত্মা কৃষ্ণ সৃষ্টির প্রথম কালে মহারাসমণ্ডলে এই আরাধনা করেন। তার পর ব্রহ্মা। মধু ও কৈটভ নামক দুই অসুরের হাত থেকে ত্রাণ পাওয়ার উদ্দেশ্যে। তৃতীয় পূজা করেন শিব, ত্রিপুর নামে এক অসুরের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য। ত্রিপুর আসলে তিন রকমের – তারকাক্ষ, কমলাক্ষ ও বিদ্যুন্মালী। চতুর্থবার আরাধনা করেন দেবরাজ ইন্দ্র। লক্ষ্মীকে ফিরে পাওয়ার জন্য।

মহাভারতে দুর্গাপূজার কথা বিস্তৃতভাবে রয়েছে। কপট পাশা খেলায় শকুনির কাছে দ্বিতীয়বার পরাজিত হয়ে পাণ্ডবদের বারো বছর বনবাস ও এক বছরের অজ্ঞাতবাস হয়। অজ্ঞাতবাসের সময়টি ছিল বেশ কঠিন। কারণ, এই সময় পাণ্ডবরা দুর্যোধনাদি কৌরবদের কাছে ধরা পড়ে গেলে তাঁদের আবারও লুকিয়ে লুকিয়ে কাটাতে হবে। এমন করে তো অনন্তকাল চলতে পারে না। এই চক্র থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যুধিষ্ঠির দেবী দুর্গার শরণ নিলেন। অজ্ঞাতবাস বড় কঠিন সময়। খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি আছে নানারকমের দুঃখ। সবচেয়ে বড় যেটা, তা হল – এই বুঝি ধরা পড়ে গেলাম, এই আশঙ্কা।

দ্রৌপদীসহ পাণ্ডবরা যখন মৎস্যনগরে ঢুকছেন, তখন মনে মনে যুধিষ্ঠির ত্রিভুবনেশ্বরী দুর্গার স্তুতি করেছিলেন। সেই স্তুতি থেকে জানা যায়, দুর্গার উদ্ভব। দুর্গার জননী মা যশোদা। তিনি যশোদাগর্ভসম্ভূতা। তাঁর পিতা নন্দ।অত্যাচারী রাজা একদিন দৈববাণী শুনতে পান যে দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান তাঁকে বধ করবেন। তখন তিনি দেবকী ও তাঁর স্বামী বসুদেবকে মথুরার কারাগারে বন্দি করে রাখেন। বন্দি অবস্থায় তাঁদের ছয়টি সন্তান হয়, এবং প্রত্যেকটি সন্তানকে কংস হত্যা করেন। সপ্তম সন্তান বলরাম দেবকীর গর্ভ থেকে প্রতিস্থাপিত হলেন রোহিণী দেবীর গর্ভে।

রোহিণী বসুদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী, তিনি থাকেন গোকুলে। ভাদ্রমাসের পূর্ণিমায় বলরামের আবির্ভাব। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণাষ্টমী তিথিতে গভীর রাতে কৃষ্ণের আবির্ভাব। সেই শিশুকে পিতা বসুদেব গোপনে নিয়ে যান গোকুলে, নন্দের ঘরে। ওই রাতে যশোদার গর্ভে জন্মান কন্যাসন্তান যোগমায়া। তিনি আসলে দেবী মহাশক্তি।পুত্রসন্তানকে মা যশোদার কাছে রেখে কন্যাটিকে নিয়ে মথুরায় ফেরেন বসুদেব। যোগমায়াকে দেবকীর ক্রোড়ে দেখতে পান কংস। ভাবেন, এই সন্তান দেবকীর অষ্টম গর্ভজাত। তখন কংস তাকে শিলাতলে আছাড় মারেন। সদ্যোজাতা আকাশে মিলিয়ে যায়।

এই যোগমায়াই দেবী দুর্গা – দিব্যমাল্যবিভূষিতা, দিব্যাম্বরধরা ও খড়্গখেটকধারিণী। তাঁর বর্ণ বালার্কসদৃশ, তাঁর আনন পূর্ণচন্দ্রনিভ এবং তিনি চতুর্ভূজা ও চতুর্ব্বক্ত্রা। আবার তিনি কৃষ্ণবর্ণা ও অষ্টভূজারূপেও পূজিতা হন। তাঁর আট হাতে রয়েছে – বর, অভয়, পানপাত্র, পঙ্কজ, ঘন্টা, পাশ, ধনু ও মহাচক্র। তাঁর কুণ্ডল দিব্য, মাথায় উৎকৃষ্ট কেশবন্ধ ও দিব্য মুকুট। বেণী কটিসূত্র পর্যন্ত লম্বিত। দেবী মহিষাসুরমর্দ্দিনী এবং বিন্ধ্যবাসিনী।অজ্ঞাতবাসে যুধিষ্ঠির সেই দেবীকে স্মরণ করলেন এবং তাঁর শরণাপন্ন হলেন। যুধিষ্ঠিরের স্তবে তুষ্ট দেবী দুর্গা তাঁকে নির্বিঘ্নে অজ্ঞাতবাসের বর দান করে অন্তর্হিতা হলেন।

এদিকে মহাভারতের বনপর্বে আছে, সকল প্রকার দুর্গতি থেকে তিনি উদ্ধার করেন বলে তাঁর নাম দুর্গা। তিনি আসলে ভগবতী। বিরাটপর্বে তিনি নন্দগোপকূলজাতা ও যশোদাগর্ভসম্ভূতা। কিন্তু শল্যপর্বে দেবী দুর্গা শৈলপুত্রী, হিমালয়ের কন্যা। মহাভারতের অন্যত্র তিনি মহাদেবের পত্নী। অনুশাসনপর্বের উমামহেশ্বর-সংবাদে সে কথা স্পষ্টভাবে বলা আছে।তাই দেবী দুর্গার এই যে আরাধনা, তা শুধু সঙ্কটকালের জন্য করি। অজ্ঞাতবাসের কঠিন সময়ে যুধিষ্ঠির যেমন দুর্গার শরণ নিয়ে মুক্তি পেলেন, তেমনি আর এক কঠিন সময়ে অর্জুনকে আশ্রয় নিতে হল দেবীর।

মহাভারত যাঁরা পড়েছেন বা দেখেছেন, তাঁরা প্রায় সকলেই জানেন যে ভীষ্মপর্বের শুরুতে অর্জুন যুদ্ধক্ষেত্রে এসে চারপাশে স্বজন-বান্ধবদের দেখে যুদ্ধ করতে চাননি। তার পর শ্রীকৃষ্ণ দীর্ঘ উপদেশ দেন অর্জুনকে। যুদ্ধক্ষেত্রে জন্ম হয় শ্রীমদ্ভগবৎগীতা নামক স্মৃতিপ্রস্থানের। তবে বর্তমান যুগে আমরা যতটুকু জানি দেবী দুর্গা সম্পর্কে সে কথাগুলো বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে পড়ে তার অনুভূতি বা জ্ঞান লাভ করেছি। দেবী দুর্গার স্বামী মহাদেব, শিব। বনপর্বে আছে, শিবের বাসস্থান কৈলাস পর্বত। তাঁর সহস্রনাম। মজার কথা হলো, মহাভারতের অংশাবতরণ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, অশ্বত্থামা হলেন শিবের অবতার।

শতরুদ্রীয় অধ্যায়ে ব্যাসদেব অর্জুনকে বলছেন – তিনি মহোদর, মহাকায়, ত্রিশূলপাণি, পিনাকী, সহস্রাক্ষ প্রভৃতি। তাঁর অনেক পার্ষদ আছেন। তাঁরা জটিল মুণ্ড, বিকৃতানন, বিকৃতপাদ ও বিকৃতবেশ।দেবী দুর্গার চারজন পুত্রকন্যা। তাঁদের মধ্যে বড় গণেশ হলেন মহাভারতের লেখক। গণেশের জন্ম-উপাখ্যান বড়ই বিচিত্র। গণেশ ছিলেন শূদ্রদের দেবতা, এমন আখ্যান পাওয়া যায়। এক বার শূদ্র ও নারীদের মিছিল দেখে ভয় পেয়েছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র। তিনি দেবী দুর্গার শরণ নিলে বিঘ্নেশ্বর গণেশকে সৃষ্টি করা হয়। পরবর্তীকালে ভারতীয় পুরাণের বহু পথ পেরিয়ে সেই গণেশ হয়ে ওঠেন বিঘ্ননাশক।

শাস্ত্রে তাই তিনি দ্বিদেহক। তাঁর দুই স্ত্রী – ঋদ্ধি ও সিদ্ধি।গণেশের ভ্রাতা দেবসেনাপতি কার্তিকেয়। কোথাও তিনি মহাদেবের পুত্র, তাই পার্বতীরও সন্তান। আবার কোথাও অগ্নির পুত্র, তাঁর নাম স্কন্দ। কখনও তাঁর মাতা গঙ্গা বা স্বাহা; কখনও হিমালয়, কাঞ্চনকুণ্ড কিংবা ছয় কৃত্তিকা। বেশ জটিল বিষয়। মহাভারতে আছে, স্কন্দ বা কার্তিকেয় হলেন সহস্রশীর্ষ, অনন্তরূপ, ঋতস্য কর্তা ও সনাতনানামপি শাশ্বত – যে শব্দগুলি পরমব্রহ্মেরই বাচক। কার্তিক বা স্কন্দ শুধু তারকাসুরকে নয়, মহিষাসুরকেও বধ করেছিলেন। দেবতা ‘শ্রী’ হলেন লক্ষ্মী – সর্ববিধ ঐশ্বর্যের অধিষ্ঠাত্রী।

দেবী মহিষাসুরমর্দ্দিনী এবং বিন্ধ্যবাসিনী আগমন দোলায় - West Bengal News 24

তিনিই সম্পদ, শুভ আদর্শ। সরস্বতী বাক্যের অধিষ্ঠাত্রী, তিনি বিদ্যার দেবী। চার বিদ্যা – আন্বীক্ষিকী (যুক্তিশাস্ত্র), ত্রয়ী (তিন বেদ), বার্তা (অর্থবিদ্যা) ও দণ্ডনীতি (রাজনীতি)। তাঁর কাছেও প্রণত হন ভক্তকুল। তিনিই রাজনীতির সৃষ্টি করেছিলেন – ‘সসৃজে দণ্ডনীতিং সা ত্রিষু লোকেষু বিশ্রুতা’ (শান্তিপর্ব)।সেই কারনে মহাভারত পেরিয়ে বাংলার কৃত্তিবাসী রামায়ণের হাত ধরে দেবীর অকাল বোধন হয় শরৎকালে। ঘুম ভাঙানো হয় সবার। দেবী দুর্গা আসেন ভক্তদের উদ্ধার করতে। ভক্ত কখনও যুধিষ্ঠির, কখনও অর্জুন, কখনও রামচন্দ্র, আবার কখনও স্বয়ং ভগবান।

‘দুর্গা’ কথাটি ‘দুর্গ’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ। যেখানে সহজে শত্রু প্রবেশ করতে পারে না, তাই দুর্গ। দুর্গ আবার রাষ্ট্রের সপ্তাঙ্গের অন্যতম। দুর্গ মানে হল অশক্যগমন বা অসাধ্যগমন। সত্যি কি দেবী দুর্গা করোনাভাইরাস কে সঙ্গে নিয়ে গমন করতে চলেছে পৃথিবীতে ,এমন ইঙ্গিত দুর্গার আরদ্ধ ভক্তবৃন্দ দের মুখ থেকে শোনা যাচ্ছে।বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক তিনি তিনি হচ্ছেন বিপদের রক্ষা কর্তা, তিনি হচ্ছেন বিনাশিনী মা দুর্গা করোনাকে বিনাশ করে গমন করবেন ৯ই কাত্তিক ১৪২৭, ২৬ অক্টোবর ২০২০ সোমবার দেবীর বিসর্জন, বিজয়া দশমী।

সপরিবারে লটবহর, বাপের বাড়ির তরফে সিনথেটিক আর পাড়ার পুজো মণ্ডপ থেকে পাওয়া দশহাতি লালপেড়ে বস্তা নিয়ে শ্বশুরবাড়ি কৈলাসে গমনের বারটিই নির্দেশ করে দেবীর যান কোনটা হবে। এবার তা পড়েছে সোমবার। শ্রাস্ত্র আছে, দেবীর গমনাগমন যদি রবিবার বা সোমবার হয়, তা হলে তাঁর বাহন হয় গজ৷গমনও গজে। ফল শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা।তাই দেবী যদি গজে গমনাগমন করেন, তা হলে পৃথিবীতে জলের সমতা বজায় থাকে এবং ফলন ভাল হয়৷ সুখ সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ থাকে মর্ত্যভূমি৷হাতি হল অন্নপূর্ণা এবং দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার বাহন৷ অন্নপূর্ণার আশীর্বাদে শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠে বসুন্ধরা।

বিশ্বকর্মার বাহন যেমন গজ, তেমনই বিশ্বকর্মা হলেন শিল্পের দেবতা৷ তাই গজে গমনাগমনের ফলে পৃথিবীতে কৃষিকাজের পাশাপাশি শিল্পের উন্নতি ও প্রসার হয়৷তবে মা দুর্গার গমন করার সাথে সাথে আবার ফিরে আসে এক অন্যরূপে জগধাত্রী হয়ে।দুর্গার সঙ্গে জগদ্ধাত্রীর এই বিকল্পের সংযোগ বুঝতে গেলে আমাদের একবার ভাল করে তাকাতে হবে দেবীর দিকে। তখন আমরা ধ্যানমন্ত্র অনুসরণ করে দেখব- এই মহাদেবী জগদ্ধাত্রী সিংহের স্কন্ধে আরূঢ়া, নানা অলঙ্কারে ভূষিতা ও নাগরূপ যজ্ঞোপবীতধারিণী।

দেবীর বাম হস্তদ্বয়ে শঙ্খ ও শার্ঙ্গধনু, দক্ষিণ হস্তদ্বয়ে চক্র ও পঞ্চবাণ। রক্তবস্ত্রপরিহিতা সেই ভবসুন্দরী প্রভাতসূর্যের ন্যায় রক্তবর্ণা। নারদাদি মুনিগণ তাঁর নিত্যসেবা করে থাকেন- “সিংহস্কন্ধসমারূঢ়াং নানালঙ্কারভূষিতাম্/চতুর্ভুজাং মহাদেবীং নাগযজ্ঞোপবীতিনীম্/শঙ্খশার্ঙ্গসমাযুক্তবামপাণিদ্বয়ান্বিতাম্/চক্রঞ্চ পঞ্চবাণাংশ্চ দধতীং দক্ষিণে করে/রক্তবস্ত্রাপরিধানাং বালার্কসদৃশীতনুম্/নারদাদ্যৈর্মুনিগণৈঃ সেবিতাং ভবসুন্দরীম্।”

দুর্গার সঙ্গে সংযোগটি তাহলে কোথায়? এ তো যেমনটি মূর্তিতে দেখে থাকি, প্রায় তেমন রূপবর্ণনাই! দুর্গার সঙ্গে জগদ্ধাত্রীর সংযোগ তাই যদি মন্ত্রের সূত্র ধরে খুঁজতে হয়, তবে তাকাতে হবে জগদ্ধাত্রীস্তোত্রের দিকে। তার তিন নম্বর শ্লোকে বলা হয়েছে- “জয়দে জগদানন্দে জগদেক প্রপূজিতে/জয় সর্ব্বগতে দুর্গে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে।” আবার কিছু কিছু পুরাণ বলছে, মহিষাসুর বধের পর দেবতাদের উল্লাসের কথা। তাঁরা ভেবেছিলেন, দুর্গা যেহেতু তাঁদেরই সম্মিলিত শক্তির প্রকাশ, তাই অসুর বধ হয়েছে তাঁদেরই যুগ্ম শক্তিতে।

ব্রহ্মার বরের সম্মানরক্ষা করতে কেবল ওই নারীদেহটির আবশ্যিকতা। তাঁদের ওই গর্ব দেখে পরমেশ্বরী দেবী একটি তৃণখণ্ড অলক্ষ থেকে নিক্ষেপ করলেন দেবতাদের দিকে। পরীক্ষা করতে চাইলেন তাঁদের শক্তি। ইন্দ্র বজ্রদ্বারা সেই তৃণটি ধ্বংস করতে ব্যর্থ হলেন। অগ্নি সেই তৃণ দহন করতে পারলেন না, বায়ু অসমর্থ হলেন তা উড়িয়ে নিয়ে যেতে। বরুণের শক্তি সেই তৃণটুকুর একটি অংশও জলস্রোতে প্লাবিত করতে পারল না।

দেবতাদের এই দুরবস্থা দেখে তাঁদের সামনে আবির্ভূতা হল এক পরমাসুন্দরী সালঙ্কারা চতুর্ভুজা মূর্তি। তিনিই জগদ্ধাত্রী। জগদ্ধাত্রী এভাবে আবির্ভূতা হয়ে দেবতাদের জ্ঞানচক্ষুটি উন্মীলিত করলেন। বুঝিয়ে দিলেন, তিনিই এই জগতের ধারিণী শক্তি।

লেখক:- মৃত্যুঞ্জয় সরদার

 

 

আরও পড়ুন ::

Back to top button

দয়া করে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিন

দেখে মনে হচ্ছে আপনি কোনও বিজ্ঞাপন ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমরা বিজ্ঞাপনের উপর ভরসা করি ওয়েবসাইটের ফান্ডের জন্য