রাজ্য সরকারকে ‘দুর্নীতিশ্রী’ খেতাব দেব, বললেন ভারতী ঘোষ
স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: করোনা নিয়ে রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করলেন রাজ্য বিজেপির সহ সভানেত্রী তথা প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ। সেই সঙ্গে তিনি জানালেন, দুর্নীতিবাজ তৃণমূলের সরকারকে তিনি ‘দুর্নীতিশ্রী’ খেতাব দেবেন।
অথচ মঙ্গলবার বেলপাহাড়ির শিলদায় বিজেপি-র দলীয় কর্মসূচিতে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি না-মানার অভিযোগ উঠল। ভিড়ে ঠাসা জমায়েতে অনেকের মুখে মাস্ক দেখা গেল না। তবে করোনা আবহেও এদিন ভাল জমায়েত করে চমক দিলেন বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা নেতৃত্ব।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বিপুল জমায়েত দেখে অভিভূত বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় আপ্লুত হয়ে বলেই ফেললেন, ‘‘এই অবস্থাতেও কত মানুষ মাঠে বসে আমাদের কথা শুনছেন!’’ আর বিজেপি-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় দাবি করলেন, ঝাড়গ্রামে চিকিৎসার কোনও পরিষেবাই নেই। এখানে কোনও চিকিৎসা হয় না।
ভারতী বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রামে করোনার ও সাধারণ চিকিৎসার কোনও পরিষেবা পাচ্ছেন না এলাকার মানুষ। রোগীদের রেফার করে দেওয়া হচ্ছে।’’ একসময় যে মুকুল তৃণমূলে থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে সুর মিলিয়ে বলতেন, ‘উন্নয়নে জঙ্গলমহল ভাসছে, হাসছে’, এদিন তিনিই সভায় দাবি করলেন, ঝাড়গ্রামে কোনও উন্নয়নই হয়নি।
কৈলাস ও ভারতী অভিযোগ করেন, ঝাড়গ্রামে আদিবাসীরা অবহেলিত। রেশন থেকে আবাস যোজনা, আয়ুষ্মান যোজনা থেকে আদিবাসী এলাকা উন্নয়ন– কেন্দ্রের সমস্ত প্রকল্প থেকে ঝাড়গ্রামের আদিবাসীদের তৃণমূলের সরকার বঞ্চিত করে রেখেছে বলে দাবি করেন বিজেপি-র নেতা-নেত্রীরা।
আরও পড়ুন : আজ থেকে কলকাতার রাজপথে ফের নামছে দোতলা বাস
এদিন বিজেপি-র সভার ঘোষক বলতে থাকেন, ‘‘কিছু সংবাদমাধ্যম মাঠের ফাঁকা অংশ দেখিয়ে প্রচার করবে সভায় লোক হয়নি।’’ এদিন সভার ধার্যসময় ছিল সকাল ১১ টা। ১২ টাতেও মাঠের অর্ধেকের বেশি খালি ছিল। পরে অবশ্য বাসে, পিকআপভ্যানে ও বিভিন্ন গাড়িতে করে লোকজন আসেন।
মাঠ ভরিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু থিকথিকে ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় কোনও চিহ্নই চোখে পড়ল না। বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলে বিজেপি-র প্রথম ‘যোগদান মেলা’য় অবশ্য ছিলেন না রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। অসুস্থতার জন্য তিনি আসেননি। তবে ক্ষমতায় এলে ঝাড়গ্রাম জেলার আদিবাসীদের জন্য বিজেপি কী-কী করতে চায়, তার দীর্ঘ ফিরিস্তি দিলেন কৈলাস ও ভারতী।
সিধু-কানু, তিলকা মাঝি, বিরসা মুন্ডার নামে ঘন-ঘন জয়ধ্বনি দিলেন বিজেপি-র নেতারা। কৈলাস জানালেন, এই জেলার লক্ষাধিক যুবক ভিন রাজ্যে কাজ করছেন। বিজেপি রাজ্যের ক্ষমতায় এলে তাঁদের এলাকায় ফিরিয়ে এনে কাজ দেওয়া হবে। ভারতীও জানান, বিজেপি ক্ষমতায় এলে শিক্ষিত বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করে ভারতী বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু উনি ‘প্রতিশ্রুতি না রাখার দেবী’। রাজ্য সরকার কন্যাশ্রী, পথশ্রীর মতো অনেক শ্রী বাজারে এনেছে, আমরা এই সরকারকে ‘দুর্নীতিশ্রী’ ও ‘নির্লজ্জশ্রী’ খেতাব দেব।’’
এদিন প্রাক্তন তৃণমূলের কয়েকজন নেতা-কর্মী বিজেপিতে যোগ দেন। ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের ঝাড়গ্রাম তল্লাটের ‘গডেৎ’ পালহান সরেনও এদিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।