ঝাড়গ্রাম: এক মুমূর্ষু রোগীর ডায়ালিসিসের জন্য রক্তের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু শুক্রবার ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের ভাঁড়ার ছিল শূন্য। বিষয়টি জানতে পেরে ওই রোগীর জন্য রক্তদান করলেন ঝাড়গ্রাম থানার কর্তব্যরত কনস্টেবল সমীরকুমার পাল।
শুক্রবার একটি ময়নাতদন্তের কাজে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের পুলিশ মর্গে এসেছিলেন সমীরবাবু। তখনই বিষয়টি জানতে পেরে সোজা চলে যান ব্লাড ব্যাঙ্কে। তারপর রক্তদান করেন। এমন ঘটনায় সমীরবাবুকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ওই রোগীর পরিবার।
খড়্গপুর গ্রামীণ থানার খেলাড় গ্রামের প্রকাশ মিশ্র দুরারোগ্য কিডনির অসুখে আক্রান্ত। বছর পঞ্চাশের প্রকাশবাবু খড়্গপুর শহরের গোলবাজারে সব্জি আড়তে কাজ করতেন। কিডনির সমস্যার জন্য নিয়মিত ডায়ালিসিস করাতে হয়।
প্রকাশবাবুর স্ত্রী অপর্ণাদেবী বলেন, ‘‘স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংসার তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। দুই স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েছি। বেসরকারি নার্সিংহোমে ডায়ালিসিস করানোর মতো আর্থিক ক্ষমতা নেই। সেই কারণে স্বামীকে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটিতে ডায়ালিসিসের জন্য ভর্তি করাই।
আরও পড়ুন: মাটি খুঁড়ে মিলছে ‘হিরা’, গুঞ্জনে গ্রামে তোলপাড়
কিন্তু হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত ছিল না। ডায়ালিসিস করানো যাচ্ছিল না। ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ডোনার জোগাড় করে আনতে বলেন। কিন্তু পরিচিতি না থাকায় ‘এ পজিটিভ’ রক্তদাতা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।’’ অপর্ণাদেবী জানান, সাদা পোষাকের সমীরবাবু যে পুলিশ কর্মী সেটা তিনি বুঝতে পারেননি।
মর্গের কাছে অপর্ণাদেবীকে ঘুরে বেড়াতে দেখে সমীরবাবু জানতে চান তিনি কোনও সমস্যায় পড়েছেন কি-না। সমীরবাবুরও রক্তের গ্রুপ ‘এ পজিটিভ’। অপর্ণাদেবীর কাছে বিষয়টি জানতে পেরে তিনি ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে এক ইউনিট রক্তদান করেন। এরপরে প্রকাশবাবুর ডায়ালিসিস হয়।
সমীরবাবু বলেন, ‘‘অপর্ণাদেবীর মলিন মুখ দেখে মনে হয়েছিল উনি কোনও সমস্যায় পড়ে হাসপাতাল চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। উনি সমস্যার কথা বলতেই সঙ্গে সঙ্গে রক্ত দিয়েছি। ফের প্রয়োজন হলে দাতা জোগাড় করে দেব বলেছি।’’ কলকাতার বালিগঞ্জের বাসিন্দা ছত্রিশ বছরের সমীরবাবু ঝাড়গ্রাম থানার কনস্টেবল।
কর্মসূত্রে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঝাড়গ্রাম শহরে থাকেন তিনি। এর আগেও লকডাউনের সময়ে রক্তের সঙ্কট মেটাতে রক্তদান করেছিলেন তিনি।