সরকারের ওপরে কৃষকদের বিশ্বাস নেই, তাই আলোচনা ফলপ্রসূ হচ্ছে না: অভিজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়
এখন কৃষি আইন নিয়ে আলোচনা করার উপযুক্ত সময় নয়। কারণ এখন করোনা অতিমহামারী চলছে। সোমবার এমনই মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিত্ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, কৃষকরা সরকারকে একবারেই বিশ্বাস করেন না।
তাই বারবার আলোচনা ব্যর্থ হচ্ছে। অভিজিত্বাবু পরামর্শ দেন, সরকার সাময়িকভাবে কৃষি আইন প্রত্যাহার করুক। বিষয়টি নিয়ে সংসদে আরও আলোচনা হোক। যে কৃষকরা ভয় পাচ্ছেন যে, নতুন কৃষি আইনে তাঁদের ক্ষতি হবে, সরকার তাঁদের সঙ্গেও আলোচনা করুক।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের কথায়, ‘অতিমহামারীর সময় নতুন কৃষি আইন নিয়ে আলোচনা করা ঠিক নয়। অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। মানুষ জানে না কৃষিজ পণ্যের কী দাম পাওয়া যাবে। সারা বিশ্ব জুড়েই অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের ধারণা, অর্থনীতির অবস্থা দ্রুত আরও খারাপ হচ্ছে।
এর ফলে মানুষের অনিশ্চয়তাবোধ বৃদ্ধি পেয়েছে।’ অভিজিত্বাবুকে প্রশ্ন করা হয়, কৃষকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের আলোচনা বার বার ব্যর্থ হচ্ছে কেন? তিনি দু’টি কারণ দেখান। প্রথমত, সরকার তাঁর প্রস্তাব স্পষ্ট করে জানাচ্ছে না।
কৃষকদের ধারণা, নতুন কৃষি আইন চালু হলে তাঁরা কর্পোরেটদের দয়ার ওপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন। সরকারের জানানো উচিত, সত্যিই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তারা কী করবে। তারা কি হস্তক্ষেপ করবে? অর্থনীতিবিদের মতে, দ্বিতীয় কারণটি আরও গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণভাবে কৃষকরা সরকারকে বিশ্বাস করেন না। তাঁরা মনে করেন না যে, সরকার তাঁদের ভাল চায়। অভিজিত্বাবুর মতে, কৃষকদের ভাবনা যে অযৌক্তিক, তা বলা যায় না। পরে অধ্যাপক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এবছর বিপুল পরিমাণে ফসল হয়েছে।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে হাজিরা দিলেন না মুখ্যসচিব- ডিজি
সেই তুলনায় চাহিদা কম। এই অবস্থায় সরকারের উচিত ছিল কৃষকদের বলা, আমরা তোমাদের কথা শুনছি। আমরা তোমাদের সব দাবির সঙ্গে একমত নই বটে, কিন্তু তোমাদের কথা শুনছি। আমরা কৃষি আইন প্রত্যাহার করছি। সংসদে বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা হবে।’
নভেম্বরের শেষ দিক থেকে কেন্দ্রের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন হাজার হাজার কৃষক। প্রতিদিনই তা বাড়ছে। এর মধ্যেই বিক্ষোভ আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। এখনও পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে পাঁচবার বৈঠক করেছেন কৃষক সংগঠনগুলি।
তাতে কোনও সমাধান সূত্র বের হয়নি। কেন্দ্র জানিয়েছে, কৃষকদের দাবি মেনে কৃষি আইনে কিছু সংশোধনী করতে রাজি আছে তারা। কিন্তু কৃষক সংগঠনের দাবি, এই আইন পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে। যতদিন না সেটা প্রত্যাহার করা হচ্ছে ততদিন তারা আন্দোলন চালাবে বলেই জানিয়েছে।
শুধু তাই নয় আরও বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। ১৪ ডিসেম্বর থেকে দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। তারপরে দেশ জুড়ে রেল রোকো কর্মসূচিও নিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। আর তার জন্যই দিল্লি আসছে আরও বেশ কিছু কৃষক সংগঠন।
সুত্র: দ্য ওয়াল