জানা-অজানা

কীটপতঙ্গের যৌনাঙ্গের যত অদ্ভুতুড়ে ব্যবহার

কীটপতঙ্গের যৌনাঙ্গের যত অদ্ভুতুড়ে ব্যবহার - West Bengal News 24

প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য প্রাণীরা নিজেদের শরীরে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন আনে। কেউ ত্বককে ব্যবহার করে শ্বাস-প্রশ্বাস নেবার জন্য, কেউ বা পায়ের পাতা দিয়ে স্বাদ গ্রহণ করে। তবে কিছু প্রাণী, বিশেষত বিভিন্ন কীটপতঙ্গ আবার এক কাঠি বাড়া। নিজেদের যৌনাঙ্গ ব্যবহার করে এরা শুধু বংশবৃদ্ধিই নয় বরং অন্যান্য বিভিন্ন কাজে। মিলনের জন্য সঙ্গীকে আকৃষ্ট করা থেকে শুরু করে শিকারি প্রাণীকে দূরে তাড়িয়ে দেবার জন্যেও এদের যৌনাঙ্গ ব্যবহৃত হয়। অদ্ভুত, নয় কি?

হক মথ
বেশ বড়সড় এবং ভূতুড়ে দেখতে এই মথ এমনিতেই বেশিরভাগ শিকারিকে নিরুৎসাহিত করার জন্য যথেষ্ট। তার পরেও কিছু সময়ে দেখা যায়, বাদুড় এদেরকে ধরে খেয়ে ফেলে। শিকার ধরার জন্য বাদুড়ের রয়েছে বিশেষ সোনার বা শব্দভিত্তিক একটি প্রক্রিয়া। তারা আল্ট্রাসনিক শব্দ সামনে ছুঁড়ে দেয় এবং সেই শব্দ প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসার সময়ে তারা বুঝতে পারে সামনে কি আছে। এই প্রক্রিয়াকে এলোমেলো করে দেওয়ার কাজটি করতে পারে হক মথ। নিজেদের যৌনাঙ্গ একসাথে ঘষে তারা আল্ট্রাসনিক শব্দ উৎপাদন করে। যার ফলে বাদুড় ঠিক বুঝে উঠতে পারে না সামনে কি আছে এবং শিকার ধরতে ব্যর্থ হয়। ব্যাপারটা অনেকটা মানুষের চোখে ধুলো ছুঁড়ে দিয়ে পালিয়ে যাবার মত।

ফ্ল্যাটওয়ার্ম
সামুদ্রিক ফ্ল্যাটওয়ার্ম (Pseudobiceros hancockanus) নামের পোকাগুলো হলো উভলিঙ্গ অর্থাৎ এদের সবার শরীরেই রয়েছে পুং এবং স্ত্রী যৌনাঙ্গ। মিলনের আগে এরা নিজেরাই ঠিক করে নেয় কে পুরুষের ভূমিকা পালন করবে আর কে নারীর ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু পুরুষের ভূমিকা পালন করতে শক্তি কম খরচ হয়। এই কারণে দুই জনই মিলনের আগে একটা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এই যুদ্ধের হাতিয়ার কী? সেটা হলো তাদের পুরুষাঙ্গ। পুরুষাঙ্গ ব্যবহার করে একে অপরের শরীরে শুক্রাণু ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা করে। যে বিফল হয়, সন্তান ধারণ অর্থাৎ মায়ের ভূমিকা তাকেই পালন করতে হয়।

আরও পড়ুন : পিটার প্লোগোজোয়িটজ- একজন সত্যিকারের ভ্যাম্পায়ার?

কীটপতঙ্গের যৌনাঙ্গের যত অদ্ভুতুড়ে ব্যবহার - West Bengal News 24 ছারপোকা
ছারপোকা বংশবিস্তার করে “ট্রমাটিক ইনসেমিনেশন” নামের একটি প্রক্রিয়ায়। এক্ষেত্রে অনেকটা ইঞ্জেকশনের সুঁইয়ের মত নিজের পুরুষাঙ্গ ব্যবহার করে পুরুষ ছারপোকা। একে সুঁইয়ের মতই সে মেয়ে ছারপোকার শরীরের বহিঃকংকাল ভেদ করে পেটের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয় আর এই ক্ষতস্থানের ভেতর দিয়ে শুক্রাণু প্রবেশ করে। মেয়ে ছারপোকার সারা শরীরে এই শুক্রাণু ছড়িয়ে যায় আর কোনও এক সময়ে জরায়ুতে প্রবেশ করে।

এই প্রক্রিয়াটি মেয়ে ছারপোকার জন্য অনেক ক্ষতিকর হবার কথা, তাই না? এই ক্ষতস্থানে ইনফেকশন হতে পারে, শরীরে বিভিন্ন রোগজীবাণু প্রবেশ করতে পারে। তবে এই ক্ষতি কমানোর জন্য মেয়ে ছারপোকা নিজেদের পেটের অংশে স্পার্মালেজ নামের এক ধরণের অঙ্গ তৈরি করেছে। পুরুষ ছারপোকা এই অঙ্গের মধ্য দিয়ে পুরুষাঙ্গ ঢুকিয়ে দিলে ক্ষতিটা বেশী হয় না।

মাকড়সা
বিভিন্ন পোকামাকড়ের মাঝে “সেক্সুয়াল ক্যানিবালিজম” অর্থাৎ মেয়ে মাকড়সা তার সঙ্গী ছেলে মাকড়সাকে খেয়ে নেবার ঘটনা দেখা যায়। এটা অর্ব-উইভার স্পাইডার (Nephilengys malabarensis) এর মাঝেও দেখা যায়। আর তাই মোটামুটি প্রাণ হাতে নিয়েই মিলন করতে হয় বেচারা পুরুষ মাকড়সাকে। তবে মেয়ে মাকড়সা যাতে একে খেয়ে না ফেলে, তার জন্য একটা কৌশল অবলম্বন করে এই পুরুষ মাকড়সাগুলো। “পাল্প” নামের একটি অঙ্গ ব্যবহার করে এরা মেয়ে মাকড়সার শরীরে শুক্রাণু সরবরাহ করে থাকে। আর মিলনের সময়ে যদি ক্ষুধার্ত দৃষ্টিতে পুরুষটির দিকে তাকায় মেয়েটি, তবেই বেগতিক বুঝে নিজের শরীর থেকে এই পাল্প খসিয়ে দিয়ে সে পুরুষটি পালিয়ে যায়। সে পালিয়ে যাবার পরেও কিছু সময় ধরে মেয়েটির শরীরে শুক্রাণু সরবরাহ করতে থাকে এই পাল্প। আর মেয়েটির যৌনাঙ্গ আটকে রাখে এই পাল্প, ফলে সে অন্য কোনও পুরুষের সাথে মিলিত হতে পারে না।

কীটপতঙ্গের যৌনাঙ্গের যত অদ্ভুতুড়ে ব্যবহার - West Bengal News 24অক্টোপাস
অনেকটা এই মাকড়সার মতই অঙ্গ খসিয়ে দেবার কৌশল রয়েছে আর্গোনট অক্টোপাসের পকেটে। পুরুষ অক্টোপাসের রয়েছে হেক্টোকটাইলাস নামের এক ধরণের বিশেষায়িত শুঁড় বা কর্ষিকা, যেখানে তারা শুক্রাণু জমিয়ে রাখে। আশেপাশে মেয়ে অক্টোপাস দেখলে শরীর থেকে এই হেক্টোকটাইলাস খসে যায় এবং নিজে থেকেই মেয়েটির কাছে সাঁতরে চলে যায়। মেয়ে অক্টোপাসের ম্যান্টলের ভেতরে শুক্রাণু প্রবেশ করিয়ে দিতে থাকে এই হেক্টোকটাইলাস। এমনকি পুরুষ অক্টোপাস অন্যদিকে চলে গেলেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে।

ওয়াটার বোটম্যান
মিঠাপানির ছোট্ট একটা পোকা হলো এই ওয়াটার বোটম্যান (Micronecta scholtzi) । কিন্তু ছোট হলে কি হবে, এই পোকা এত উচ্চ স্বরের শব্দ তৈরি করে যা এত ছোট কোনও প্রাণীর পক্ষে সম্ভব হবার কথা না। মোটামুটি ৯৯ ডেসিবেল শব্দ উৎপাদন করতে পারে ২ মিলিমিটার লম্বা এই পোকা, আর সেই কাজটা করে তার পেটের একটা অঙ্গের সাথে নিজের পুরুষাঙ্গকে ঘষে। এভাবে “সঙ্গীত” তৈরি করে পুরুষ পোকা, আর তা শুনে মিলনে আকৃষ্ট হয় মেয়ে পোকাটি।

আরও পড়ুন ::

Back to top button