বলিউডের আলোচিত ৭ নারী নির্মাতা
কথায় আছে, যে রাধে সে চুলও বাধে! যার উদ্যম আছে,কিছু করার মানসিকতা আছে শত প্রতিবন্ধকতা স্বত্বেও তিনি তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেনই। পৃথিবীর নানান পেশায় তাই বীরদর্পে বিচরণ করছে নারী।
নারীরা এখন শুধু আর ঘরকুনো হয়ে সংসারই সামলাচ্ছেন না! বরং বাহিরের পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়েও চলতে শিখেছেন। নারী আজ আকাশে উড়ছে, যুদ্ধ করছে, জাহাজ নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে গহীন সমুদ্রে। পেশাদারিত্বের সব জায়গাতেই নিজেদের সামর্থ জানান দিচ্ছে। শিল্প, সাহিত্য, কলাবিদ্যায়ও তারা এখন সিদ্ধহস্ত।
সিনেমা নির্মানেও রাখছেন নিজেদের স্বাক্ষর। ডিরেক্টর মানে এখন শুধু আর পুরুষ পরিচালককেই বোঝায় না! কারণ নারীরাও এখন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতে শিখে গেছেন লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশান! পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দেয়া বলিউডের এমন সাত নারী নির্মাতার কথাই জানাচ্ছেন দেশে বিদেশে।
১। কিরণ রাও
সহকারি পরিচালক হিসেবে কিরণ রাও-এর প্রথম অভিষেক ঘটে আমির খান অভিনীত জনপ্রিয় সিনেমা ‘লগান’-এর মাধ্যমে। এরপর ‘মনসুনওয়েডিং’ (২০০১), ‘সাথিয়া ’(২০০২), ‘স্বদেশ’ (২০০৪) সহ বেশ কিছু সিনেমায় সহপরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ২০১১ সালে প্রথম পরিচালনায় হাত দেন কিরণ। আমির খানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ছবি ‘ধোবি ঘাট’ এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পরিচালনায় আসেন তিনি। ‘ধোবি ঘাট’ ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে ততটা সফল না হলেও বক্তব্য ও বিষয়বস্তুর বিচারে সমালোচকদের প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছে।
২। ফারাহ খান
বলিউডের অন্যতম সফল পরিচালক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে ফারাহ খানকে। ২০০৪ সালে ‘ম্যায় হু না’ দিয়ে বলিউডে পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন ফারাহ খান। এরপর ‘ওম শান্তি ওম’ (২০০৭) ‘তিস মার খান’ (২০১০) ও ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’(২০১৪)- একে একে উপহার দেন দর্শকপ্রিয় সব সিনেমার।
ফারাহ খান পরিচালিত চারটি ছবির সব ক’টিই বক্স অফিসে ভালো ব্যবসা করেছে। সে কারণেই বলিউডের অন্যতম সফল নারী পরিচালক হিসেবে প্রথমেই উঠে আসে তার নাম।
৩। নন্দিতা দাস
অভিনেত্রী হিসেবে নন্দিতা দাস সুখ্যাতি পেয়েছেন অনেক আগেই। পরিচালনায় এসেছেন খুব বেশিদিন নয়। ২০০৮ সালে ‘ফিরাক’ সিনেমার মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটে তার। তবে প্রথম ছবিতেই বাজিমাৎ করেছেন এ বঙ্গললনা! বাণ্যিজিকভাবে সফলতা না পেলেও দেশে বিদেশে পুরস্কৃত হয়েছে রাজনৈতিক থ্রিলারধর্মী এছবিটি।এ মুহূর্তে উদু সাহিত্যের জনপ্রিয় কবি সাদাত হোসেন মান্টো’র জীবনীভিত্তিক সিনেমা ‘মান্টো’র কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি।
৪। মীরা নায়ার
১৯৭৮ সালে ‘জামা স্ট্রিট মসজিদ জার্নাল’ দিয়ে প্রথমবারের মতো পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আন্তজার্তিক খ্যাতি সম্পন্ন নির্মাতা মীরানায়ার। পরবর্তীতে ‘সালাম মুম্বাই’ ছবির জন্য খ্যাতিলাভ করেন তিনি। ১৯৮৯ সালে অস্কারে বিদেশি ভাষার ছবির জন্য মনোনিত হয়েছিল এছবিটি।ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই মার্কিন পরিচালকের বিখ্যাত ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘মনসুন ওয়েডিং’, ‘মিসিসিপি মাসাল্লা’, ‘অ্যামেলিয়া’, ‘দ্যরিল্যাকট্যান্ট ফ্যান্ডামেন্টালিস্ট’ ইত্যাদি।
৫। দীপা মেহতা
দীপা মেহতাকে পুরোপুরি বলিউড পরিচালক বলা না গেলেও বেশ কিছু নামকরা হিন্দি ছবির নির্মাতা হিসেবে সুপরিচিত এ ইন্দো-কানাডিয়ানপরিচালক। ১৯৯১ সালে কানাডিয়ান ছবি ‘স্যাম অ্যান্ড মি’-এর মাধ্যমে পরিচালনায় আসেন তিনি। এরপর একে একে নির্মাণ করেছেন কামিল্লা(১৯৯৪), ফায়ার (১৯৯৬), আর্থ (১৯৯৮), বলিউড/হলিউড (২০০২), ওয়াটার (২০০৫) সহ বেশ কিছু সিনেমা। সিনেমা বানিয়ে প্রসংশার পাশাপাশি বিতর্কেও জড়িয়েছেন দীপা মেহতা। শাবানা আজমি ও নন্দিতা দাশ অভিনীত ‘ফায়ার’ সিনেমায় সমকামীতাদেখানোর অভিযোগে ভারতে তোপের মুখে পড়েছিলেন তিনি। এছাড়া ‘ওয়াটার’ ছবির জন্যও ভারতে হয়েছে প্রতিবাদ। তবে সেরা বিদেশি ভাষারসিনেমার জন্য অস্কারে মনোনিত হয়েছিলো ‘ওয়াটার’।
৬। অপর্না সেন
একাধারে অভিনেত্রী, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক হিসেবে সুপরিচিত অপর্ণা সেনকে বাঙ্গালি নির্মাতা হিসেবেই অভিহিত করা হয়েথাকে। বলেউডের ছবির চেয়ে ভারতীয় আর্ট ফিল্মেই তার মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায় বেশি। অপর্ণা সেন পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘৩৬ চৌরঙ্গী লেন’ মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৮১ সালে। প্রথম ছবিতেই প্রশংসিত হন তিনি। এরপর ‘পরমা’, ‘পারমিতার একদিন’, ‘দ্য জাপানিজ ওয়াইফ’, ‘ইতি মৃণালিনী’ সহ বেশ কিছু দর্শকনন্দিত ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি।
৭। লীনা যাদব
ভারতীয় তরুণ পরিচালক হিসেবে অল্প ক’দিনেই নাম কুড়িয়েছেন লীনা যাদব। ২০০৫ সালে ‘শব্দ’ ছবির মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে বলিউডে অভিষিক্ত হন তিনি। সঞ্জয় দত্ত ও ঐশ্বরিয়া রাই অভিনীত লীনার প্রথম ছবিটি সমালোচকদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়। ২০১০ সালে দ্বিতীয় ছবি অমিতাভ বচ্চন ও রাইমা সেন অভিনীত ‘তিন পাত্তি’ দিয়ে সমালোচকদের পাশাপাশি দর্শককেও তুষ্ট করেন তিনি।২০১৬’তে প্রকাশিত ‘পার্চড’ ছবিটিও আলোড়ন তুলেছে বলিউডে। এতে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন রাধিকা আপ্তে ও তনিষ্ঠা চ্যাটার্জী।