উত্সব মরশুমেই বাংলায় ফের লকডাউনের সম্ভাবনা
গত বছরের দুর্গাপুজো বাঙালির কার্যত কেটেছিল ঘরে বসেই। কারন কোভিডের ঝড় ঠেকাতে কলকাতা হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের দরুন মণ্ডপে দর্শনার্থীদের তো বটেই, পাড়ার লোক মায় পুজোকর্তাদেরও ঢোকা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। যদিও কিছু হুজুগে পাবলিক রাস্তায় নামতে দ্বিধাবোধ করেনি। তবে সিংহভাগ বাঙালির পুজো কেটেছিল বাড়িতে বসেই। তাই অনেকেরই এবারে আশা ছিল ২০২১ এর পুজো তাঁরা কাটাবেন বাড়তি উত্সাহে।
যে নতুন জামাকাপড় গতবছর ভাঙা হয়নি সেসব তো পড়ে বার হওয়ার প্ল্যান পরিকল্পনা ছিলই, এমনকি অনেকেই এখন থেকেই প্রাক পুজো কেনাকাটাও শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা কী খবর রাখেন এবারের পুজোটাও বাঙালির আরও বিশ্রী ভাবে কাটতে পারে। মানে গোটা উত্সব মরশুমটাই এবার কাটতে পারে ঠিক এখনকার মতো এক বিধিনিষেধের বেড়াজালে যা কার্যত লকডাউনেরই নামান্তর! যদি না জেনে থাকেন তো জেনে নিন।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশে আগামী ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যেই কোভিডের তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে যাবে। মানে আগস্ট মাসের মধ্যেই দেশে কোভিডের ঢেউ আছড়ে পড়বে। আর সেই সময় কার্যত মৃত্যুর তাণ্ডবলীলা চালাতে পারে কোভিডের নয়া মিউটেড ভাইরাস ‘ডেল্ট্রা স্রেইন’।
কোভিডের এই মিউটেড ভাইরাসটি যেমন ক্ষিপ্রগতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে ঠিক তেমনি দ্রুত জীবন কাড়তেও পারে। সেই হিসাবে আগস্ট মাসের মধ্যে দেশে এই ভাইরাস তাণ্ডব শুরু করে দিলে বাংলায় তা হানা দিতে বেশি সময় লাগাবে না। অনুমান করা হচ্ছে সেপ্টেমর মাসের মধ্যেই তা বাংলার বুকে ভেলকি দেখাতে শুরু করে দেবে। আর তার জেরেই রাজ্য সরকার জীবনহানি ও সংক্রমণ ঠেকাতে বাধ্য হবে এখনকার মতোই আবারও কড়া বিধিনিষেধের জালে রাজ্যবাসীকে বেঁধে রাখতে। যা কার্যত লকডাউনেরই নামান্তর হয়ে উঠবে। তবে তাতে এখনকার মতো কিছু ছাড়ও থাকবে।
এবারে দুর্গাপুজো পড়েছে অক্টোবর মাসে। ৬ অক্টোবর মহালয়া। ১০ অক্টোবর পঞ্চমি। ১২ অক্টোবর সপ্তমি। বিজয়া দশমী পড়েছে ১৫ অক্টোবর। ২০ অক্টোবর লক্ষ্মীপুজো। ২ নভেম্বর ধনতেরাস, ৪ নভেম্বর কালিপুজো। ভাইফোঁটা ৬ নভেম্বর। ১০ নভেম্বর ছটপুজো, ১৩ নভেম্বর জগদ্ধাত্রী পুজো, ১৭ নভেম্বর কার্তিক পুজো, পরেরদিন ১৮ নভেম্বর রাসযাত্রা।
মানে বাঙালির উত্সব মরশুম শুরু হচ্ছে ৬ অক্টোবর থেকে আর শেষ হচ্ছে ২০ নভেম্বর রাসযাত্রা সমাপণের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দিয়েছেন, কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আগস্ট মাসের মধ্যেই দেশে চলে আসবে। সেপ্টেম্বর জুড়ে তা তাণ্ডব চালাবে। বাংলায় সেই সময়েই কার্যত মৃত্যু মিছিল শুরু হয়ে যেতে পারে। আর তা ঠেকাতে হয়তো রাজ্য সরকার বাধ্য হবে অক্টোবর মাসের শুরুর দিকেই কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে দিতে।
সেক্ষেত্রে অক্টোবর ও নভেম্বর মাস বাঙালিকে লকডাউনের মধ্যেই কাটাতে হতে পারে। আর এই লকডাউনের মধ্যেই পড়ে যাচ্ছে উত্সবের মরশুম। গতবছর মণ্ডপে ঢোকার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকলেও বাড়ির বাইরে কিন্তু বার হওয়া যাচ্ছিলো। সেই সুবাদে অনেকেই পুজোর দিনগুলি পারিবারিক পুজো, বন্ধুবান্ধবদের বাড়ি, আত্মীয়পরিজনদের বাড়িতে গিয়েছিলেন ছুটি আর পুজো কাটাতে।
অনেকে আবার বাইরে ঘুরতেও গিয়েছিলেন। এবারে কিন্তু সেই সুবিধাও থাকবে না। অর্থাত্ বাঙালি শুধু যে গৃহবন্দিই হবে তাই নয়, সম্ভবর রাজ্যে এবার বেশির ভাগ পুজোই হয়তো হয়ে উঠবে না। বিশেষজ্ঞরা এটাও জানিয়েছেন, এখন কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ শেষের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে, বিধিনিষেধ উঠবে, লকডাউন উঠবে।
আর তারপরে আমজনতা যদি কোভিড বিধি না মানেন তাহলে কিন্তু কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আরও মারাত্মক আরও দ্রুত ধেয়ে আসবে। বাংলা কী করবে সেটা বাংলার মানুষকেই ঠিক করতে হবে। তাঁরা কোভিডবিধি মেনে চলবেন না সেই সব এড়িয়ে মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানাবেন সেটা তাঁদেরই ঠিক করতে হবে। তবে পুজো এবারও গেল।
সূত্র : এই মুহুর্তে