জানা-অজানা

শিশুদের ‘কলিজা’ খাওয়াই ছিল বাংলার প্রথম নবাবের কন্যার নেশা

Tomb Of Azimunnisa Begum :শিশুদের ‘কলিজা’ খাওয়াই ছিল বাংলার প্রথম নবাবের কন্যার নেশা - West Bengal News 24

বাংলার প্রথম নবাব ছিল মুর্শিদ কুলি খান। তার একমাত্র কন্যা ছিল আজিমুন্নেসা। অনেকেই তার নাম জিন্নাতুন্নেসা বলেও জানেন। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, আজিমুন্নেসাকে জীবন্ত সমাধি দেওয়া হয়েছিল। তার বাবা নিজেই তার মেয়েকে জীবন্ত কবর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কি ভাবছেন, নবাব অনেক নৃশংস ছিলেন, আর এ কারণেই হয় তো তিনি নিজের মেয়েকে জীবন্ত কবর দিয়েছেন! বিষয়টি আসলে তেমন নয়!

Tomb Of Azimunnisa Begum :শিশুদের ‘কলিজা’ খাওয়াই ছিল বাংলার প্রথম নবাবের কন্যার নেশা - West Bengal News 24
আজিমুন্নেসার জীবন্ত সমাধি

জানা যায়, আজিমুন্নেসা কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। কবিরাজ তাকে দৈনিক একটি মানব শিশুর কলিজা দিয়ে ওষুধ তৈরি করে খাওয়াতেন। এরপর ঐ ব্যাধি থেকে মুক্তি পেলেও নবাবকন্যা মানব শিশুর কলিজায় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। চুরি করে হলেও তিনি শিশুদের কলিজা বের করে খেতেন। এই ঘটনা মুর্শিদ কুলি খান জানতে পেরে তাকে জীবন্ত কবর দেওয়ার নির্দেশ দেন।

যদিও আজিমুন্নেসার মৃত্যু ও তার সমাধি নিয়ে নানা কল্পকাহিনির প্রচলিত আছে। অনেকের মতে, ১৭৩০ সালে আজিমুন্নেসাকে মুর্শিদাবাদের মহিমাপুরে জীবন্ত সমাধি দেওয়া হয়। সেখানে ১৭৩৪ সালে তৈরি করা হয় একটি মসজিদ যেটি বর্তমানে পুরোই ধবংসপ্রাপ্ত। শুধু একটি দেওয়ালের অংশবিশেষ আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে। মুর্শিদাবাদে পর্যটকরা ভিড় জমান আজিমুন্নেসার জীবন্ত সমাধি দেখার জন্য।

Tomb Of Azimunnisa Begum :শিশুদের ‘কলিজা’ খাওয়াই ছিল বাংলার প্রথম নবাবের কন্যার নেশা - West Bengal News 24
১৭৩০ সালে আজিমউন্নিসাকে ভারতের মুর্শিদাবাদের মহিমাপুরে জীবন্ত সমাধি দেওয়া হয় বলে সেখানে ১৭৩৪ সালে তৈরি করা হয় একটি মসজিদ

মুঘল স্থাপত্যে গড়া প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকলে সোজা একটি পথ উঠে গেছে উঁচু একটি মঞ্চের মতো ঢিবির উপর। এই ঢিবির উপর আছে ফুলের বাগান। সিঁড়ি বেয়ে এই ঢিবি বা বাগানে উঠতে হয়। সিঁড়িতে না উঠে বামদিক দিয়ে সিঁড়ির নিচের দিকে একটু এগিয়ে গেলেই দেখা যাবে একটি সমাধি। এটিই আজিমুন্নেসার সমাধি।

নবাব মুর্শিদ কুলি খানের মতো তার মেয়ে আজিমুন্নেসার সমাধিও প্রবেশ সোপানের তলদেশে সমাহিত। সিঁড়ির নিচে সমাধি হলেও সেখানে আছে প্রশস্ত কক্ষ। ঐ কক্ষেই আজিমুন্নেসার সমাধি।

Tomb Of Azimunnisa Begum :শিশুদের ‘কলিজা’ খাওয়াই ছিল বাংলার প্রথম নবাবের কন্যার নেশা - West Bengal News 24
ঐ কক্ষেই আজিমউন্নিসার সমাধি

কথিত আছে, সাধারণ মানুষের পদধূলিতে তার শিশু হত্যার পাপমোচনের জন্য মসজিদে ওঠার সিঁড়ির নিচে তাকে জীবন্ত সমাহিত করা হয়। আজিমুন্নেসার সমাধির উপরে আরো একটি সমাধি দেখতে পাওয়া যায়। তবে সেটি কার সমাধি তা কারো জানা নেই। অনেকেই বলেন, সমাধিটি সেই হাকিমের। আবার কারো মতে, বেগমের বিশ্বস্ত এক অনুচরের।

২৯২ বছর ধরে আজও এই ঘটনাটি অমীমাংসিত রহস্য হিসেবেই আছে। মুর্শিদাবাদের আনাচে-কানাচে এই কাহিনি আজও ঘুরে বেড়ায়। আজিমুন্নেসা বেগমের মসজিদটি প্রবল ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায়, তবে এর কারুকার্য করা একটি দেওয়াল এখনো রয়েছে। এই মসজিদটির সঙ্গে মুর্শিদ কুলি খানের নির্মিত কাটরা মসজিদের অনেক মিল পাওয়া যায়।

Tomb Of Azimunnisa Begum :শিশুদের ‘কলিজা’ খাওয়াই ছিল বাংলার প্রথম নবাবের কন্যার নেশা - West Bengal News 24
আজিমউন্নিসা বেগমের মসজিদটি প্রবল ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায়

১৯৮৫ সালে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ এই ভগ্নপ্রায় মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ করে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়। নবাব কন্যা আজিমুন্নেসার জীবন্ত কবর দেখতে এরপর থেকে আজও মানুষের ভিড় লেগেই থাকে সমাধিস্থলে। আজিমুন্নেসার জীবন্ত কবরের প্রচলিত কাহিনী শুনে সবাই শিহরিত হয়ে ওঠেন।

আরও পড়ুন ::

Back to top button