ঝাড়গ্রাম কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের কৃতী সৌরিশ হতে চায় অধ্যাপক
স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: এত মিষ্টি খেতে কী ভাল লাগে! অধৈর্য হয়ে উঠছিল শান্ত ছেলেটি। ভাল ছবির জন্য সংবাদমাধ্যমের আলোকচিত্রীরাও নাছোড়। কৃতী ছাত্রের মাকে তাঁরা বলছেন, ‘আর একটা মিষ্টি খাওয়ান’। সৌরিশ দে-র মা মণিকাদেবীও উৎসাহে কখনও কালোজাম তো কখনও কলাকাঁদ খাওয়াচ্ছেন ছেলেকে।
এবার বিরক্ত হয়ে মাধ্যমিকে জেলার কৃতী ছাত্রটি বলে ওঠে, ‘‘এত মিষ্টি খেয়ে মুখটা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। ভাল্লাগে না।’’ একটু হাসিহাসি মুখের অনুরোধে এবার সৌরিশ সোজাসাপ্টা ‘সোনার কেল্লা’র মুকুলের মতো জানিয়ে দিল ‘‘আমার হাসি পাচ্ছে না।’’ অগত্যা ভাল ফলের সোনার ছেলে গম্ভীর মুখের ছবিতেই তুষ্ট থাকতে হল আমাদের। ঝাড়গ্রাম শহরের সত্যবানপল্লীতে বাবা-মা, দুই দিদি আর ঠাকুমার সঙ্গে থাকে সৌরিশ।
আরও পড়ুন : নিরক্ষর বাবা-মা চান, ছেলে হোক ইঞ্জিনিয়র, স্বপ্ন পূরণে বাধা অভাব
ঝাড়গ্রাম কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের কৃতী ছাত্র সৌরিশ এ বার মাধ্যমিকে ৬৭৪ নম্বর পেয়ে স্কুলের মধ্যে তো প্রথম হয়েইছে, সেই সঙ্গে জেলায় যুগ্মভাবে প্রথম হয়েছে সে। সৌরিশের বাবা শোভনলালবাবুর মুদির দোকানের ব্যবসা। দুই মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন। সৌরিশের বড়দি শেলি আইটি সেক্টরে কাজ করেন। ছোড়দি শানু ভুবনেশ্বরে বায়োটেকনোলজি-র স্নাতকস্তরের ছাত্রী।
শোভনলালবাবু বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অভাবের সঙ্গে অনেক লড়াই করে এখন সুখের মুখ দেখতে শুরু করেছি। তবে একটাই আক্ষেপ, আমার বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মনোরঞ্জন দে দু’মাস আগে প্রয়াত হয়েছেন। নাতির ভাল ফল তিনি দেখে যেতে পারলেন না।’’ স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী থেকে প্রথম হয়ে আসছে সৌরিশ। সৌরিশ জানায়, দিনে সে গড়ে আট ঘন্টা পড়ত।
আরও পড়ুন : দরজা খোলেননি বৃদ্ধ, লক ভেঙে ফ্ল্যাটে ঢুকল পুলিশ!!
সময় পেলে ক্রিকেট খেলে, অ্যাডভেঞ্চার গল্পের বই পড়তে ভালবাসে। গৃহশিক্ষকেরা সাম্মানিক ছাড়াই সৌরিশকে পড়িয়েছেন। স্কুলের সব শিক্ষকদের কাছেই কৃতজ্ঞ সে। বিশেষভাবে স্কুলের শুভজিৎ জানা স্যারের সাহায্য তাকে ভাল ফল করতে আরও উৎসাহিত করেছে। উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় সৌরিশ। পছন্দের বিষয় ভৌত বিজ্ঞান। তবে চিকিৎসক বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় না সে। সৌরিশ বলে, ‘‘অধ্যাপনাই বেশি পছন্দের। তবে কী হতে পারব সেটা ভবিষ্যতই বলবে।’’