মে দিবসে পেশা বদলে বেঁচে থাকার নতুন লড়াই ঝাড়গ্রাম শহরের দুলাল বিশালের
স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: ছিলেন ইডলি বিক্রেতা, লকডাউনে পেশা বদলে এখন ফল বিক্রি করছেন ঝাড়গ্রাম শহরের দুলাল বিশাল। শুক্রবার আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের সকালে খদ্দেরের আশায় ফলের ঠেলাগাড়ি নিয়ে চাতক-চোখে দুলাল দাঁড়িয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম শহরের শিব মন্দির চকে।
করোনা ভাইরাস ঠেকাতে দেশজুড়ে চলা লকডাউন বদলে দিয়েছে এই ইডলি বিক্রেতার ভাগ্য। ঝাড়গ্রাম শহরের সুভাষপল্লীতে স্ত্রী ও দুই স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে থাকেন ৪২ বছরের দুলাল। বছর পনেরো আগে প্রথম ভাগ্য বিপর্যয়ের শিকার হন তিনি। আগে ছিলেন সিনেমা হলের অপারেটর। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত তখন বুঁদ হয়ে থাকতেন রুপোলি মায়ার জগতে। দুলাল জানালেন, সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার বেকার হয়ে পড়েন তিনি। সংসার চালানোর জন্য বছর পনেরো আগে চালু করেন ঠেলাগাড়িতে দক্ষিণ ভারতীয় প্রাতঃরাশের খাবার দোকান। ক্রমে শিবমন্দির চকে দুলালের ঠেলাগাড়ির ইডলি ও বড়ার সুখ্যাতি শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
দুলাল জানালেন, লকডাউনের আগে পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার টাকার ইডলি বিক্রি করতেন। লকডাউনের নিষেধাজ্ঞায় ইডলি বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। দুলাল বলেন, “কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। শেষ পর্যন্ত সপ্তাহ খানেক আগে পাইকারি ফল কিনে বিক্রি করছি। কিন্তু সেভাবে খদ্দের পাচ্ছি না।” দুলাল জানান, যাঁরা ইডলি খেতে আসতেন, তাঁরা বেশিরভাগ ছিলেন আশেপাশের ব্যবসায়ী ও বাজারে আসা লোকজন। প্ৰাতঃরাশের টানে সকাল সাতটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হত। কিন্তু এখন ফল কিনতে সেভাবে কেউ আসছেন না।
বাজারে ও রাস্তার ধারে অনেক ফলের দোকান রয়েছে। প্রতিযোগিতার ফলের বাজারে তাই সেভাবে কিছু করে উঠতে পারছেন না দুলাল। তবে পুরোনো জায়গায় মাটি কামড়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দুলাল জানান, লকডাউনের মে দিবসের দিনটি তাঁর কাছে নতুন করে শপথ নেওয়ার দিন, অসম জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার জন্য নতুন করে লড়াই শুরুর দিন! দুলাল বলেন, “লকডাউন আমাকে ফের ভাগ্য বিপর্যয়ে ফেলল। তবে পরিবারের জন্য লড়াইটা চালিয়ে যাব।”