মালদা

সমকামী সম্পর্কের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকির জেরে খুন, যাবজ্জীবন সাজা খুনির

সমকামী সম্পর্কের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকির জেরে খুন, যাবজ্জীবন সাজা খুনির - West Bengal News 24

সমকামী সম্পর্ক তৈরি করে ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত মোবাইল ফোনে ভিডিও রেকর্ডিং করা এবং সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করেছিলেন রেলের এক কর্মী। শেষপর্যন্ত তাঁর ওই সঙ্গীর হাতেই খুন হতে হয় তাঁকে। শেষরক্ষা করতে পারেনি খুনি। ধরা পড়ে। বৃহস্পতিবার মালদা জেলা আদালত দোষী মোবারক ও তার অপরাধের সঙ্গী জাকিরকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০,০০০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেয়। এই মামলার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উঠে এসেছিল ইলেকট্রনিক্স এভিডেন্স।

সরকারি কৌঁসুলি বিভাস চ্যাটার্জি বলেন, খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল গত বছর দুর্গাপুজোর দশমীর দিন। মালদা রেলওয়ে কলোনির একটি ঘরে রেলকর্মী হনুমান রাইয়ের (৬০) নগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রেলের এক কর্মী তাঁর কাছে এসেছিলেন। দরজা ঠেলে ঢুকে তাঁর সহকর্মীর দেহ পড়ে আছে দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন এবং পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে। তদন্তে পুলিশ দেখে মৃতের মোবাইল ফোনটি পাওয়া যাচ্ছে না।

সেই সঙ্গে ঘটনাস্থলে একটি নীল রঙের জামার বোতাম পায় পুলিশ। খুনিরা শ্বাসরোধ করে খুন করেছিল হনুমান রাইকে। গলা এবং মুখ এত জোরে চেপে ধরা হয়েছিল যে চাপের চোটে মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে মেঝেতে পড়েছিল বলে সরকারি কৌঁসুলি জানিয়েছেন। আর মাত্র চারদিন পরেই হনুমান রাই অবসর নিতেন।

আরও পড়ুন : মোদী ম‍্যাজিক এখন অতীত, গোটা রাজ‍্যেই মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের উন্নয়ন চলছে, মন্তব্য সায়নীর

খুনের ক’দিন বাদেই পুলিশ জানতে পারে ওই ফোনটিতে একটি অন্য সিম ব্যবহার হচ্ছে। টাওয়ার লোকেশন দেখে পুলিশ ফোন ব্যবহারকারী জাকিরকে ধরে। জেরায় জাকির জানায় মোবারক তাকে এই ফোনটি দিয়েছে। মোবারককে ধরা হয়। ইতিমধ্যেই রেল কলোনির কাছেই একটি হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছিল পুলিশ। সেখানে দেখা গেছিল মোবারক ওই রাস্তা দিয়ে ঘটনার আগে যাচ্ছে।

একইসঙ্গে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ যখন মোবারকের মোবাইল নম্বর পরীক্ষা করে তখন দেখে ঘটনার দিন দুপুরে হনুমান রাইয়ের ফোনে শেষ কলটি করেছিল মোবারক। এরপরেই কিছুক্ষণের জন্য সে ফোন বন্ধ করে দেয়। পুলিশ দেখে মোবারকের হাতে একটি দাঁতের কাটা দাগ রয়েছে।

মেডিক্যাল টেস্টের জন্য তাকে চিকিত্‍সকের কাছে পাঠালে মোবারক স্বীকার করে সে আর জাকির যখন মারার জন্য চেপে ধরেছিল তখন বাঁচার তাগিদে হনুমান তাকে কামড়ে দেয়। পাশাপাশি সে এটাও স্বীকার করে ঘটনার দিন সে হনুমান রাইকে শারীরিক সম্পর্ক তৈরির ছলনায় খুন করেছিল।

আরও পড়ুন : বসিরহাটে ধারালো অস্ত্রের কোপ ও গুলি করে খুন দাপুটে তৃণমূল নেতাকে, এলাকায় চাঞ্চল্য

সরকারি কৌঁসুলি জানিয়েছেন, পুলিশ মোবারকের বাড়ি তল্লাশি করে একটি নীল রঙের জামা পায়। যার একটি বোতাম ছেঁড়া ছিল। এরপর ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া বোতাম এবং ওই জামা সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠালে সেখানকার বিশেষজ্ঞরা জানান, বোতামটি ওই জামারই। ইতিমধ্যে পুলিশ জানতে পারে হনুমান রাইয়ের মোবাইল ফোন থেকে ভিডিওটি মুছে দিয়ে মোবারক সেটি জাকিরকে ব্যবহার করতে দেয়। খুনে সাহায্য করতেই জাকিরকে সে সঙ্গে নিয়ে এসেছিল।’

এবছর জুলাই মাসে বিচার শুরু হয় এবং সাক্ষী ও অন্যান্য তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার আদালত সাজা ঘোষণা করে। বিভাস চ্যাটার্জি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে যখন জামিনের শুনানি হতেও বিলম্ব হচ্ছে সেখানে মাত্র দু’মাস ১১ দিনে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেল। মামলার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ইলেকট্রনিক্স এভিডেন্স।’

সূত্র: আজকাল

আরও পড়ুন ::

Back to top button