Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
জানা-অজানা

তাজমহলের ২০ হাজার শ্রমিকের হাত কি শাহজাহান সত্যিই কেটে নিয়েছিলেন

তাজমহলের ২০ হাজার শ্রমিকের হাত কি শাহজাহান সত্যিই কেটে নিয়েছিলেন
প্রতীকি ছবি

কথিত আছে, সম্রাট শাহজাহানের নির্দেশে তাজমহল তৈরি করা ২০ হাজার শিল্পী-শ্রমিকের হাত (মতান্তরে হাতের আঙুল) কেটে নেয়া হয়েছিল। এই দাবির কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে এই গুঞ্জনের পিছনে রয়েছে একটি কারণ। তাজমহল পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম।

ভারতের শুধু নয় ভারতবর্ষের গর্ব। গর্ব সারা বিশ্বেরও। নীল আকাশের বুকে ফুটে থাকা আশ্চর্য সাদা রঙের সেই শোক-সৌধ। তবু তার শরীরেও লেগে আছে বিতর্কের রেশ। দাবি করা হয়েছে, তাজের ভেতরে বন্ধ ঘরে নাকি রয়েছে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি! কেউ কেউ দাবি করেন এখানে নাকি ছিল শিব মন্দির।

তাজমহলের ২০ হাজার শ্রমিকের হাত কি শাহজাহান সত্যিই কেটে নিয়েছিলেন
নীল আকাশের বুকে ফুটে থাকা আশ্চর্য সাদা রঙের সেই শোক সৌধ

জয়পুরের রাজপরিবারের সদস্যদের দাবি, তাদের জমিতেই তৈরি হয়েছিল তাজমহল। বিতর্ক অনেক রকম আছে, একটি সত্য খুঁজে দেখা যাক, সম্রাট শাহজাহানের নির্দেশে তাজমহল তৈরির সঙ্গে যুক্ত থাকা ২০ হাজার শিল্পী-শ্রমিকের আঙুল কি সত্যিই কেটে নেয়া হয়েছিল কি-না।

আরও পড়ুন :: শিশুদের ‘কলিজা’ খাওয়াই ছিল বাংলার প্রথম নবাবের কন্যার নেশা

উইকিপিয়াতে উল্লেখ আছে, ১৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে শাহজাহান, যিনি মুঘল আমলের সমৃদ্ধশালী সম্রাট ছিলেন, তার দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ মহল-এর মৃত্যুতে প্রচণ্ডভাবে শোকাহত হয়ে পড়েন। মমতাজ মহল তখন তাদের চতুর্দশ কন্যা সন্তান গৌহর বেগমের জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তাজমহলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আনুমানিক ৩২ মিলিয়ন রুপি খরচ হয়েছিল এই স্থাপত্য নির্মাণে। কিন্তু শ্রমিকের খরচ, নির্মাণে যে সময় লেগেছে এবং ভিন্ন অর্থনৈতিক যুগের কারণে এর মূল্য অনেক, একে বলা হয় অমূল্য।

তাজমহলের ২০ হাজার শ্রমিকের হাত কি শাহজাহান সত্যিই কেটে নিয়েছিলেন
সম্রাট শাহজাহান

কথিত আছে, মমতাজের প্রয়াণে আকাশছোঁয়া সৌধ নির্মাণ করা শাহজাহান নাকি তাজমহল তৈরি করা ২০ হাজার শিল্পী-শ্রমিকের আঙুল কেটে নিয়েছিলেন। যাতে তারা আরেকটা তাজমহল বানাতে না পারে। শুনলেই যে কেউ শিউড়ে উঠবেন, মনে হবে এও কি সম্ভব!

আরও পড়ুন :: যৌনকর্মী থেকে জলদস্যু! নিজস্ব আইনে সাগরের বুকে সাম্রাজ্য ছিল তার

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকার ‘দ্য গার্ডিয়ান’ কিংবা ব্রিটেনের ‘ওয়্যারড’ও এই দাবি করেছিল। কিন্তু সত্য়িই এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন শাহজাহান? সত্য বলতে, ইতিহাসের সমান্তরালে বহু মিথ তৈরি হয়। তেমনই এটাও একটি মিথ। এর কোনো সত্যতা কোনো ইতিহাসবিদ দেখাতে পারেননি। স্রেফ মুখ থেকে মুখে ছড়িয়ে পড়তে পড়তে মিথে পরিণত হয়েছে।

তাজমহলের ২০ হাজার শ্রমিকের হাত কি শাহজাহান সত্যিই কেটে নিয়েছিলেন
মমতাজ

১৯৭১ সালে রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘জার্নাল অফ হিস্টোরিক্যাল রিসার্চে’ও একই ভাবে একে নিছক ‘মিথ’ বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। তিনটি প্রশ্ন করে-এই গুঞ্জনকে মিথ্যা প্রমাণ করা যায়। তাজমহলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, প্রথমত অতজন শ্রমিকের হাত কেটে ফেলা হলো, অথচ তাদের কারও কাটা হাতের কঙ্কালজাতীয় কোনো রকম প্রমাণ মিলল না?

দ্বিতীয়ত, ঐ সময়ে ভারত ভ্রমণে আসা কোনো পর্যটকের বিবরণ কিংবা সমসাময়িক কোনো বই কোথাও এমন কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই।

আরও পড়ুন :: সৌন্দর্য রক্ষায় রানি ক্লিওপেট্রাও খেতেন এই শাক

তৃতীয়ত, শাহজাহানের শাসনামল ছিল ‘নির্মাণের স্বর্ণযুগ’। এমন নয় যে, তাজমহল ছাড়া আর কোনো স্মরণীয় স্থাপত্যকীর্তি শাহজাহানের আমলে নির্মিত হয়নি। সে সময় আগ্রায় তাজমহল ছাড়াও রয়েছে মতি মসজিদ, দিল্লিতে নির্মাণ হয়েছে জামা মসজিদ ও লালকেল্লা। পরে শাহজাহানাবাদ নামে একটা শহর গড়ে তোলেন তিনি। যদি তিনি ২০ হাজার শ্রমিকের সঙ্গে ঐ কাণ্ড করতেন, তাহলে বাকি শ্রমিকরা তার নির্দেশ মানতেন না।

তাজমহলের ২০ হাজার শ্রমিকের হাত কি শাহজাহান সত্যিই কেটে নিয়েছিলেন
রাতের আঁধারে তাজমহল

তবে যে কোনো গুঞ্জনের পেছনে কোনো না কোনো কারণ থাকে। এই গুজবের পিছনেও রয়েছে। শাহজাহান তাজমহলের শ্রমিকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তারা যেন অন্য কোনো সম্রাট-বাদশাহদের হয়ে কাজ না করেন। সোজা কথায়, এটা ছিল একটা চুক্তির মতো। অর্থাৎ ‘হাত কেটে নেয়া’ কথাটা আসলে একটা রূপক।

আরও পড়ুন ::

Back to top button