জানা-অজানা

আমাজনের গহীনে যে নদীর জল ফুটন্ত!

আমাজনের গহীনে যে নদীর জল ফুটন্ত! - West Bengal News 24

পেরুর আমাজনের গহিন অরণ্যে এক রহস্যময় নদীর খোঁজ মিলেছে। তার ভেতরে যা পড়ে সব কিছুকে গ্রাস করে নেয় সেই নদী। ইনকাদের কাছে সেই নদী ছিল সূর্যদেবের জলস্রোত। তারা এই জলস্রোতের নাম দিয়েছিল ‘শানায় টিম্পিসখা’।

কিন্তু বহু বছরের অজানা রয়েছে ছিল কীভাবে এই নদীর জল সবসময় ফুটতে থাকে। আরও অনেকের মতো লোককথা রূপকথার এই নদীর কথা শুনেছিলেন আন্দ্রে রুজোও। কিশোর আন্দ্রে ভেবেছিলেন, বড় হয়ে তিনি এই নদীর রহস্যভেদ করবেন। দশক পেরিয়ে পেরুর ছেলে আন্দ্রে গেলেন টেক্সাস। সাদার্ন মেথডিস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হতে। বিষয় ছিল, জিয়োফিজিক্স।

আমাজনের গহীনে যে নদীর জল ফুটন্ত! - West Bengal News 24

কোর্স চলাকালীন আবার আন্দ্রের মনে ফিরে আসে কৈশোরের স্বপ্ন। পেরু জুড়ে বিস্তৃত জিয়ো থার্মাল বৈশিষ্ট তাকে বিস্মিত করে। আন্দ্রে বুঝতে পারেন ফুটন্ত নদীর অস্তিত্ব আছে। সে নদী ফুটছে পৃথিবীর ভ‚ভাগের অভ্যন্তরস্থ তাপে। নিজের চোখে রহস্যভেদ করতে ২০১১-এর নভেম্বরে পেরুর মধ্য অংশে অভিযানে গেলেন আন্দ্রে। শানায়া টিম্পিসখা নদীর নিকটবর্তী শহর হলো পুকালপা। সেখান থেকে শুরু হলো আন্দ্রের যাত্রা।

দুই ঘণ্টা গাড়িতে, এক ঘণ্টা যন্ত্রচালিত ডিঙি-এর পরে আরও ঘণ্টা খানেক ঘন আমাজনের কাদাপথে ট্রেকিং। তার পরে দেখা মিলল ফুটন্ত নদীর। কিন্তু শেষ মুহূর্তেও বাধা। নদীর কাছেই আছে মায়ানটুয়াকু গ্রাম। সেই গ্রামের পুরোহিতরা নদীর কাছে যেতে দেন না বহিরাগতদের। কারণ ওই নদীর জল তারা ব্যবহার করেন ওষুধ হিসেবে।

বহু কাঠখড় পুড়িয়ে স্থানীয় পুরোহিত বা শামানকে বোঝালেন আন্দ্রে। মিলল নদীর কাছে যাওয়ার অনুমতি। পুরোহিত তার সঙ্গে দিয়ে দিলেন নিজের প্রতিনিধিকে। ছয় মাইল লম্বা এই নদীকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে ঘন গাছের সবুজ প্রাচীর। নদীর সর্বোচ্চ গভীরতা ১৬ ফুট পর্যন্ত। উষ্ণ প্রস্রবণের মতো নিজের খেয়ালেই সে বেরিয়েছে পাথরের চাঁইয়ের ফাঁক দিয়ে। তারপর নিজের যাত্রাপথ শেষ করে সে মিশে গেছে আমাজনের সঙ্গে।

আমাজনের গহীনে যে নদীর জল ফুটন্ত! - West Bengal News 24

নদীর জলের সর্বোচ্চ উষ্ণতা পৌঁছায় ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। আন্দ্রে দেখতে পান, ধোঁয়া ওঠা ফুটন্ত সেই স্রোত বেয়ে ভেসে চলেছে প্রাণীদের ঝলসে যাওয়া দেহ। বিরল হলেও ফুটন্ত নদী আরও আছে পৃথিবীতে। আমাজনের শানায় টিম্পিসখা নদী থেকে নিকটবর্তী সক্রিয় আগ্নেয়গিরির দূরত্ব ৪০০ কি.মি.। এই নদীর জল ফুটন্ত হলো কী করে? আন্দ্রে ও তার সহকারী গবেষকদের মত, এর কারণ ভূগহ্বরের তাপমাত্রা।

তাদের মতে, পেরুর আমাজন অরণ্যের এই গভীরে শিলাময় ভূভাগে চ্যুতি বা ফাটল অনেক বেশি। সেখান দিয়ে বৃষ্টির জল প্রবেশ করে ভূভাগের ভিতরে। তার পর আবার ওই জলধারা উঠে আসে ভূভাগের উপরে। তখন তার তাপমাত্রা বেড়ে যায় কয়েকশো গুণ। অর্থাৎ জিয়োথার্মাল বা হাইড্রোথার্মাল চক্রের বিক্রিয়াই ফুটন্ত নদীর রহস্য। নিজের অভিজ্ঞতা আন্দ্রে লিখেছেন ‘দ্য বয়েলিং রিভার: অ্যাডভেঞ্চার অ্যান্ড ডিসকভারি ইন আমাজন’ বইয়ে। তার আবেদন, ফুটন্ত নদীর বিস্ময়কে বাঁচাতে আমাজন অরণ্যে বৃক্ষনিধন বন্ধ হোক।

আরও পড়ুন ::

Back to top button

দয়া করে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিন

দেখে মনে হচ্ছে আপনি কোনও বিজ্ঞাপন ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমরা বিজ্ঞাপনের উপর ভরসা করি ওয়েবসাইটের ফান্ডের জন্য