নদীয়া

কৃষ্ণনগরের দুর্গাপুজোয় আইসল্যান্ডের হলগ্রিমস চার্চ

দীপাঞ্জন দে

কৃষ্ণনগরের দুর্গাপুজোয় আইসল্যান্ডের হলগ্রিমস চার্চ

২০২২ সালের দুর্গাপুজোয় কৃষ্ণনগর জনজোয়ারে ভাসলো। উৎসব উন্মাদনার কথা বলতে গেলে কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর কথাই সকলে বলবেন। প্রতিবছর সে এক অন্য মাত্রা ছোঁয়। কিন্তু এই বছর দুর্গাপুজোতেই কৃষ্ণনগর সেই উন্মাদনা দেখলো। কৃষ্ণনগরে আইসল্যান্ডের বিখ্যাত হলগ্রিমস চার্চ দেখার জন্য অষ্টমী, নবমীর রাত্রিতে দর্শনার্থীদের প্রায় দেড় কিলোমিটার লাইন দেখা গেল। এই বিশাল আয়োজনের উদ্যোক্তা কৃষ্ণনগরের ক্লাব ‘একান্নবর্তী’। তাদের তৃতীয় বর্ষের দুর্গাপুজোয় বড় চমক হল আইসল্যান্ডের হলগ্রিমস চার্চ নির্মাণ।

ইউরোপের নিও-গথিক স্থাপত্যশৈলীর এক জলজ্যান্ত উদাহরণ হল হলগ্রিমস চার্চ, যার সুন্দর অনুকরণে তাদের মণ্ডপ তৈরি করেছে কৃষ্ণনগরের একান্নবর্তী ক্লাব। মণ্ডপের সামনে লেইফ এরিকসনের মূর্তিটিও বসানো হয়েছে। সুউচ্চ হলগ্রিমস চার্চ হল আইসল্যান্ডের অন্যতম পরিচয়। হলগ্রিমস চার্চ তৈরি হতে প্রায় ৪১ বছর সময় লেগেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির বছরে অর্থাৎ ১৯৪৫ সালে এর নির্মাণকার্য শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৯৮৬ সালে। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই চার্চের উচ্চতা ২৪৪ ফুট (৭৪.৫মিটার)। গির্জার ইতিহাস থেকে পাওয়া যায় প্রথমে গির্জাটি কম লম্বা হবে বলেই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু চার্চ অফ আইসল্যান্ডের নেতারা একটি বড় চূড়া চেয়েছিলেন, যেটি আইসল্যান্ড ক্যাথেড্রালকে ছাড়িয়ে যায়। অবশেষে এর উচ্চতা এমনই হয় যে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হলগ্রিমস চার্চকে দেখা যায়। হলগ্রিমস চার্চ কৃষ্ণনগরে দেখতে পেয়ে দুর্গাপুজোর দর্শনার্থীরা খুবই আনন্দিত।

কৃষ্ণনগরের দুর্গাপুজোয় আইসল্যান্ডের হলগ্রিমস চার্চ

উল্লেখ্য, হলগ্রিমস চার্চ একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারও। সেখানে একজন পর্যটক ভিউয়িং ডেকে উঠতে পারেন এবং আশেপাশের পাহাড় দেখতে পারেন। গির্জার ভিতরের অংশ প্রায় ১৮ হাজার বর্গফুট। হলগ্রিমস একটি বিখ্যাত লুথারিয়ান প্যারিস চার্চ। কৃষ্ণনগরের একান্নবর্তীর পুজোয় এহেন হলগ্রিমস চার্চেরই দেখা মিলল। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে এসেছেন এই চার্চ দেখতে। আয়োজকরা এতে খুবই খুশি। এই পুজো ইতিমধ্যে একাধিক পুরস্কারও জিতে নিয়েছে। চায়ের দোকানের ঠেক থেকে এই পুজোর ভাবনা। কয়েকজন বন্ধু বড় করে দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। বাঙালি পরিবারকে একসঙ্গে বেঁধে রাখার ভাবনা থেকে ‘একান্নবর্তী’ নাম দেওয়া হয়।

২০২০ সাল থেকে শুরু হয় একান্নবর্তীর দুর্গাপুজো। প্রথম বছর তাদের বাজেট ছিল ৯ লক্ষ টাকা, দ্বিতীয় বছর যা বেড়ে হয় ১৫ লক্ষ টাকা। আর তৃতীয় বর্ষে অর্থাৎ ২০২২ সালে একান্নবর্তীর দুর্গাপুজোর বাজেট এক লাফে বেড়ে হয় ৩৪ লক্ষ টাকা। এবার তাদের বিশাল বড় আয়োজন। দুর্গাপুজোয় এত বড় আয়োজন কৃষ্ণনগর আগে কখনো দেখেনি। আইসল্যান্ডের হলগ্রিমস চার্চকে তারা হাজির করেছেন। মণ্ডপের আলোকসজ্জাও বেশ সুন্দর। মণ্ডপের ভিতরটিও গির্জার আদলেই গড়া। আর বিশাল গর্ভগৃহে রয়েছে মহাদেবের একাধিক রূপ। দুর্গা প্রতিমাটিতেও রয়েছে চমক। সেটি আনা হয়েছে কলকাতার কুমারটুলির বিখ্যাত শিল্পী মোহনবাঁশী রুদ্র পালের ওয়ার্কশপ থেকে। ২০২২ সালে একান্নবর্তীর পুজোর একাধিক চমকের মধ্যে অন্যতম হল ক্লাবের নিজস্ব পুজোর গানের এলবাম। বাংলা গানের প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের নিয়ে তারা এই অ্যালবামটি করেছেন। সব মিলিয়ে এবছরের দুর্গাপুজো কৃষ্ণনগরে এক অন্য মাত্রা পেল। এই উচ্চতাকে ধরে রাখাই এখন আগামীর বড় চ্যালেঞ্জ।

লেখক: অধ্যাপক, চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়, নদিয়া।

আরও পড়ুন ::

Back to top button