জাতীয়

ধ্বংসের মুখে যোশীমঠ? দায়ী কি তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প? উঠছে প্রশ্ন

ওয়েস্ট বেঙ্গল নিউজ ২৪

Joshimath Sinking: ধ্বংসের মুখে যোশীমঠ? দায়ী কি তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প? উঠছে প্রশ্ন - West Bengal News 24

যোশীমঠের (Yoshi Math) বাড়ি গুলিতে আগেই ধরেছিল ফাটল। একে একে বাড়ি খালি করায় শীতের মধ্যেই ঘর ছাড়া হয়েছে এক একটা পরিবার। দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে ফাটল ধরেছে শঙ্করাচার্য মঠে (Sanarachaya Math)। পরিস্থিতি সামাল দিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর (Prime Minister Office) ।

প্রায় ৫০০ বাড়িতে ফাটল। ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বাসিন্দারা।
গত ৫ জানুয়ারি এনটিপিসি এবং হিন্দুস্থান কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে (Hindustan Construction Limited) একটি চিঠি লেখেন চামোলির জেলাশাসক অভিষেক ত্রিপাঠী (Abhishek Tripathi) । চিঠিতে তাদের ২০০০ বাড়ি তৈরির কথা বলেন। জানান, জোশীমঠে যাঁদের বাড়িতে ফাটল ধরেছে, তাঁদের সেখানে পুনর্বাসন দেওয়া হবে।

২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে এই তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৪৪.৫৯ হেক্টর জমির উপর তৈরি হয়েছিল প্রকল্প। তার মধ্যে ৮২.৭৩ হেক্টর জমি ছিল সরকারের। বাকি ৬১.৮৬ হেক্টর জমি ১০টি গ্রামের ৬৩০ জন মালিকের থেকে নেওয়া হয়েছে। বদলে তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। আশ্রয় হারিয়ে এখন বাসিন্দারা দায়ী করছেন তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে। তাঁদের দাবি , পাহাড়ের বুকে বেআইনি ভাবে এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে বলেই এই বিপর্যয়।

Joshimath Sinking: ধ্বংসের মুখে যোশীমঠ? দায়ী কি তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প? উঠছে প্রশ্ন - West Bengal News 24

সত্যিই কি তাই ? ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (National Thurmal Power Corporation) এর তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করে তদন্তের দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে অনেকেই মনে করছেন , বিশেষজ্ঞদের এই দাবি একেবারে অযৌক্তিক নয়। যদিও এনটিপিসি এই অভিযোগ মানতে চায়নি।

অন্য দিকে, কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও এখনও কার্যকর হয়নি এই বিদ্যুৎ প্রকল্প। বারবার আটকেছে কাজ। কখনও প্রকৃতি বাদ সেধেছে। কখনও স্থানীয়রা। আবারও কি বিপাকে পড়তে চলেছে এই প্রকল্পের কাজ ? তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ বন্ধের নির্দেশিকা জারি করেন ত্রিপাঠী Abhishek Tripathi) । তার আগে জোশীমঠ (Yashmath) থেকে আউলি যাওয়ার রোপওয়ে বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। এটি এশিয়ার বৃহত্তম রোপওয়ে।

জোশীমঠের (Yashimath) এক থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৬১টি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। চার নম্বর ওয়ার্ডের দু’টি হোটেল ফাটলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দু’নম্বর ওয়ার্ডে মাটির তলা থেকে বেরিয়ে আসছে কাদাজল। স্থানীয়দের ধারণা, পাহাড়ের উপরের অংশে নির্মীয়মাণ টানেল থেকেই আসছে জল।

জোশীমঠ (Yashimath) থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই তপোবন। তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের টানেল শেষ হয়েছে সেলাঙে। জোশীমঠ থেকে সেলাঙের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। ২০০৪ সালে ধউলিগঙ্গা নদীর উপর এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির জন্য চুক্তি সই হয়। ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় প্রকল্পের।

সুড়ঙ্গ খননের জন্য আনা হয় টানেল বোরিং মেশিল। পাহাড়ের ভিতর সেই যন্ত্র ঢোকাতে গিয়ে ভূগর্ভস্থ জলাধার ফেটে যায়। ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বহু কর্মীর। বিশেষজ্ঞদের মতে , ভূগর্ভস্থ জল বেরিয়ে যাওয়া ফাঁপা হয়ে গিয়েছে মাটি। তার জেরেই বার বার আসছে বিপর্যয়। স্থানীয়দের দাবি , ওই ঘটনার কারণ ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়ায় জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে। মাটির নীচে বিস্ফোরণের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি।

স্থানীয়দের অনুরোধে অধ্যাপক সতী (Professor Sati) জোশীমঠের বাড়িগুলির ফাটল পরখ করতে গিয়েছিলেন। তিনি অবশ্য অতীতেও এই তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। ২০১৩ সালে সেই নিয়ে সরব হয়েছিলেন সতী সহ স্থানীয় বহু বিশেষজ্ঞ। মনে করা হয় , সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এখনও কার্যকর হয়নি। পাশাপাশি বার বার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রকৃতি।

আরও পড়ুন ::

Back to top button