বাহ্যিক রং ব্যবহার করে জটিল অস্ত্রোপচার কলকাতা মেডিকেলে, অসাধ্যসাধন চিকিৎসকদের
ওয়েস্ট বেঙ্গল নিউজ ২৪
যে কোনও রং শরীরে জন্য ক্ষতিকারক। তাই প্রতিবছর চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে রঙ যাতে কোনওভাবেই পেটে না যায় সেই সাবধানতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এ বার ঘটল আজব কাণ্ড। চিকিৎসা করতেই ব্যবহার হল বাহ্যিক রঙ। তা কাজে লাগিয়েই হল অস্ত্রোপচার। কলাপাতার মতো অতি উজ্জ্বল এই সবুজ রংকে কাজে লাগিয়ে অপারেশন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ব্রেস্ট ও এন্ডোক্রাইন ক্লিনিকে হয়েছে এই অস্ত্রোপচার। সেখানকার চিকিৎসকরা ফ্লুরোসেন্ট ডাই ব্যবহার করে গলার প্যারাথাইরয়েড গ্ল্যান্ডগুলি চিহ্নিত করার পাশাপাশি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রন্থিগুলি খুঁজে বের করে অপারেশন করেছেন।
বর্ধমানের এক বাসিন্দার কিডনিতে বার বার স্টোনের সমস্যা হচ্ছিল। পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাঁর রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা অত্যধিক বেশি। চিকিৎসকরা সন্দেহ করেন, সম্ভবত হাইপার প্যারাথাইরয়েডিজমের সমস্যায় ভুগছেন তিনি। এই সমস্যায় প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থিগুলি অতিরিক্ত কাজ করে বলে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা হু হু করে বাড়ে। সময়ে চিকিৎসা না হলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট পর্যন্ত হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত ও ফুলে ওঠা গ্রন্থিগুলি বাদ দেওয়া হয় শরীর থেকে। রোগীর রক্তে কমতে থাকে ক্যালসিয়ামের মাত্রা।
গত সোমবার বর্ধমানের বাসিন্দা এক যুবকের চিকিৎসায় নয়া এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন এখানকার ব্রেস্ট ও এন্ডোক্রাইন ক্লিনিকের ইনচার্জ ডাঃ ধৃতিমান মৈত্র ও তাঁর টিম। শুধু সরকারি নয়, কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল ধরলেও এই ধরনের অস্ত্রোপচারে ফ্লুরোসেন্ট টেকনোলজির ব্যবহার এই প্রথম।মানব শরীরে গলার থাইরয়েড গ্রন্থির চারপাশে চারটি প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি থাকে। কারও ক্ষেত্রে একটি বা দু’টি বেশি বা কম থাকে।
অনেকের ক্ষেত্রে এই গ্রন্থি থাকে বুকের খাঁচার ভিতর। এই রোগীর ক্ষেত্রে কোথায় আছে এই গ্রন্থি ? ক’টি আছে ? এবং কোনটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ? এগুলো জানাটাই ছিল চিকিৎসার প্রাথমিক ধাপ।
ইউএসজি , সেস্টামিবি স্ক্যান , ফোর ডি সিটি এবং এমআরআই—একের পর এক পরীক্ষা করানো হয় তাঁর। কিন্তু তারপরও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রন্থি চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির শিকার হতে হয় চিকিৎসকদের। কোনটি বাদ দেবেন, তা নিয়ে চিকিৎসকরা ফাঁপরে পড়েন।
এই পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয় ফ্লুরোসেন্ট প্রযুক্তি। এন্ডোসায়ানাইন গ্রিন ডাই ও নিয়ার ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। ডাই দেওয়ায় ফ্লুরোসেন্ট ছড়িয়ে পড়ে দেহের বিভিন্ন অংশে। তখন ইনফ্রা রেড ক্যামেরায় ধরা পড়ে প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি এবং সেগুলির মধ্যে কোন কোনটি টিউমার আক্রান্ত। তারপর আর তেমন সমস্যা হয়নি চিকিৎসায়। ক্ষতিগ্রস্ত ও ফুলে ওঠা গ্রন্থিগুলি বাদ দেওয়া হয় শরীর থেকে।