দঃ ২৪ পরগনা

পাড়ার ‘‌কাকিমা’‌কে খুন করে গাড়িতে রক্ত মাখা দেহ নিয়ে শহর ঘুরেছিল শিবশঙ্কর !

পাড়ার '‌কাকিমা'‌কে খুন করে গাড়িতে রক্ত মাখা দেহ নিয়ে শহর ঘুরেছিল শিবশঙ্কর !

 

ওয়েবডেস্ক : সুভাষগ্রামে দাদার নতুন বাড়ি দেখতে যাওয়ার কথা ছিল বোনের। সেই মতো বোন ও ভগ্নিপতিকে কামালগাজি থেকে নিজের গাড়িতে তুলেও নেয় দাদা। কিছু দূর যাওয়ার পরে বোনের কাছে স্বীকার করে কিছু ক্ষণ আগে সে ওই গাড়িতে খুন করেছে লক্ষ্মী দাস নামের এক মহিলাকে। বাবা-মায়ের বাড়ির প্রতিবেশী ওই মহিলাকে চিনতেন বোন। এমন কথা শুনে ভাইবোনের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। মাঝপথেই বোন এবং ভগ্নিপতিকে নামিয়ে দেয়

দাদা। সটান দেশপ্রাণ শাসমল রোডের বাপের বাড়িতে পৌঁছে যান বোন। সেখানেই মুখোমুখি বাড়ি লক্ষ্মীর। দীর্ঘ সময় ধরে লক্ষ্মী না-ফেরায় উদ্‌ভ্রান্ত পরিজনেরা তত ক্ষণে চারু মার্কেট এবং টালিগঞ্জ থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও করে ফেলেছেন। সব জানিয়ে লক্ষ্মীর স্বামীকে নিয়ে ওই দম্পতি হাজির হন টালিগঞ্জ থানায়।

দাদার কীর্তি পুলিশকে নিজে জানান বোন। তারই ভিত্তিতে শুক্রবার গভীর রাতে গ্রেফতার হয়েছে সেই চালক শিবশঙ্কর দাস (৩৫)। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বোন এবং ভগ্নিপতিকেও। বোন পুলিশকে বলেছেন, ‘দাদা এমন অপকর্ম করেছে শুনে সহ্য করতে পারিনি। দাদাকে এর শাস্তি পেতেই হবে। তাই থানায় সব জানাতে এসেছি।’

ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মৃত মহিলার খোঁজ পায় পুলিশ। দেহটি উদ্ধার করা হয়েছে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালের পিছনের খাল থেকে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতা লক্ষ্মী দাসের (৪৫) বাড়িতে দুই মেয়ে এবং স্বামী রয়েছেন। দুই মেয়েরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার ছিল ছোট মেয়ের জন্মদিন। তাই মায়ের কাছে এসেছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, লক্ষ্মী মুদিয়ালি এলাকায় পরিচারিকার কাজ করতেন। পাশাপাশি সুদের কারবারও

আরও পড়ুন : লকডাউনে আকাশপথে অক্ষয়ের বিশেষ ‘ট্রিপ’ নিয়ে বিতর্ক শুরু !

করতেন। সেই সূত্রেই দীর্ঘ দিন আগে শিবশঙ্করকে তিরিশ হাজার টাকা ধার দেন। সেই টাকা শোধ না করে ফের পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার চায় শিবশঙ্কর। সে তিনটি গাড়ি খাটাত এবং সম্প্রতি কেনা চতুর্থ গাড়িটি নিজে চালাত। তারই মাসিক কিস্তি শোধ করতে না-পারায় সম্প্রতি ব্যাঙ্ক থেকে তাগাদা দিতে লোক আসে। এর পরেই প্রতিবেশী লক্ষ্মীর দ্বারস্থ হয় শিবশঙ্কর। আগের টাকা শোধ না করলে আর টাকা দেবেন না বলে জানিয়ে দেন ওই মহিলা।

তদন্তকারীরা জানান, শুক্রবার টাকা মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে লক্ষ্মীকে সকাল ১১টায় মুদিয়ালির এক জায়গায় দেখা করতে বলে সে। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ সেখানে যান লক্ষ্মী। গাড়ির পিছনের আসনে বসেই টাকা চান তিনি। এর পরেই দু’জনের মধ্যে ফের শুরু হয় বচসা। তদন্তে জানা গিয়েছে,

সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের কাছে একটি স্কুলের সামনে সুনসান জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে চালক পিছনে আসে। আচমকা দুই আসনের ফাঁকে লক্ষ্মীকে ফেলে গলা টিপে ধরে শিবশঙ্কর। এর পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ছুরি চালিয়ে গলার নলি কেটে খুন করা হয়। দেহ নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে সন্ধ্যার দিকে বাইপাসের ওই খালে ফেলে দেয় সে।

লালবাজারের এক কর্তা জানান, কুঁদঘাটে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ভাড়ায় থাকে ধৃত। তার বাবা-মায়ের পাড়ার বাসিন্দা লক্ষ্মী। এই ঘটনায় ধৃতের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীকে খুনের অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। যে গাড়িতে খুন করা হয়েছে সেটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

এক পুলিশ আধিকারিক জানান, সম্প্রতি গাড়িটি অ্যাপ-ক্যাবে ভাড়া খাটানোর আবেদন করেছিল ধৃত। অভিযুক্তকে এ দিন আদালতে তোলা হলে ১৪ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

 

 

 

 

সুত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

আরও পড়ুন ::

Back to top button