জীবন যাত্রা

জীবনসঙ্গী নির্বাচনের সময় যে গুণগুলো আমরা মোটেও খেয়াল করি না!

জীবনসঙ্গী নির্বাচনের সময় যে গুণগুলো আমরা মোটেও খেয়াল করি না!

জীবন সঙ্গী নির্বাচনে আমরা সবসময় কিছু গৎবাঁধা গুণের দিকেই নজর দেই। কারণ আমাদের পরিবার, সমাজ থেকে সেভাবেই শেখানো হয়ে থাকে। পড়ালেখায় ভালো হলে অথবা ভালো চাকরি করলে আমরা ধরে নেই উক্ত ব্যক্তি জীবনসঙ্গী হিসেবে সঠিক হবেন। এছাড়া থাকে আরও কিছু ধরাবাঁধা ‘ভালো গুণ’ এর লিস্ট।

তবে সত্যি ব্যাপারটি হল, গৎবাঁধা এই সকল গুণ দিয়ে জীবন সঙ্গী হিসেবে একজন মানুষকে কখনোই সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। ছেলে হোক অথবা মেয়ে, জীবন সঙ্গী নির্বাচন করার ব্যাপারটি খুবই স্পর্শকাতর। জীবনের উপরে যার প্রভাব পড়ে অনেকখানি। প্রথাগত কিছু গুণের বাইরেও চারিত্রিক কিছু গুণাবলী একজন মানুষের মাঝে থাকা উচিৎ। রিলেশনশীপ এক্সপার্ট, ম্যারেজ থেরাপিষ্ট এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবন সঙ্গী নির্বাচনে সঙ্গীর মাঝে এই সকল চারিত্রিক গুণ থাকা উচিৎ। যে সকল গুণ আমরা সাধারণত খেয়াল না করে অথবা নগন্য ভেবে এড়িয়ে যাই।

ট্রাফিক জ্যামের সময়ে অস্থির হয়ে পড়েন না
ম্যারেজ এন্ড ট্রাফিক থেরাপিষ্ট এবং ‘ইট টেকস ওয়ান টু ট্যাঙ্গো’র লেখক উইনিফ্রেড এম.রেইলি বলেছেন, “ট্রাফিক জ্যামে বসে থেকে অনেকেই বারবার হর্ন বাজাতে থাকেন, জ্যামের মাঝেই এদিক সেদিক দিয়ে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করেন অথবা খুব বাজে আচরণ করা শুরু করেন। আচ্ছা, কখনো কি ভেবে দেখেছেন, যারা ট্রাফিক জ্যামে বসে এমন আচরণ করছেন তারা নিজ গৃহে কেমন আচরণ করেন? চাপের মুখে একজন ব্যক্তি কেমন আচরণ করেন সেটা তার চরিত্র সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দেয়। ধৈর্যধারণ করতে পারা এমন একটি ক্ষমতা যা একটি সম্পর্কের মাঝে হতাশাজনক অবস্থা তৈরি হলে অথবা সমস্যা দেখা দিলে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন হয়।”

তাদের সবসময় ‘জেতা’র প্রয়োজন হয় না
“আমাদের বোঝা উচিৎ, বিবাহিত যুগলেরা একে অন্যের বন্ধু অথবা পার্টনার, প্রতিযোগী নয়। তবে অনেক যুগলের ক্ষেত্রে তারা একে অন্যের প্রতিযোগী হয়ে ওঠে। একজন একটু উঁচুতে উঠে গেলে অন্যজনও উপরে ওঠার চেষ্টা করতে থাকে। একজন অন্যজনের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করতে থাকে যে- সে তার থেকেও ভালো! পৃথিবীর অন্য সকলের সাথে প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। তবে ভালোবাসার সঙ্গী মানুষটার সাথে একেবারেই নয়,” কথাগুলো জানান পুরুষ বিশেষজ্ঞ থেরাপিষ্ট কার্ট স্মিথ।

ব্যক্তিগত উন্নতির ক্ষেত্রে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ
মনোবিজ্ঞানী রায়ান হোওস এর বিশ্বাস, একটি নতুন সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে সঙ্গী মানুষটি তার ব্যক্তিত্বকে সুগঠিত করার জন্য কি ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেটা জানা খুবই জরুরি। এই সকল পদক্ষেপ হতে পারে কোন থেরাপি, একসাথে ঘুরতে বের হওয়া অথবা ব্যক্তিত্ব সম্পর্কিত বই পড়া। সম্পর্ক একটি পরিবর্ধনশীল এবং পরিবর্তনশীল ব্যাপার। যদি কোন ব্যক্তি এই সকল পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে না পারে এবং না চায় তবে তার সাথে সম্পর্কে জড়ালে সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়।

যৌনজীবন নিয়ে তারা স্বাচ্ছন্দ্য আলোচনা করেন
যৌনজীবন নিয়ে কথা বলা অথবা আলোচনা করাটা এখনও আমাদের দেশে ট্যাবু হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু, যাকে আপনি জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং বিয়ের পরে যার সাথে একই বিছানা শেয়ার করতে হবে তার সাথে এই ব্যাপারে খুব সহজ এবং খোলামেলা ভাবে কথা বলা উচিৎ। সেক্স থেরাপিষ্ট এবং ‘ফিনিশিং স্কুল’ এর লেখিকা ভেনেসা মার্লিন বলেন, “যৌনতার ক্ষেত্রে একে অন্যের মতামত আদানপ্রদান করা উচিৎ খুবই সৎ এবং খোলাখুলিভাবে। একটি টিম হিসেবে এক্ষেত্রে কাজ করতে হবে। এতে লজ্জা পাবার বা বিব্রত হবার কিছু নেই।”

ঝগড়ার সময়েও তারা খুব শান্ত থাকেন
যে কোন সময়ে এবং যেকোন বিষয়েই দুইজন মানুষের মাঝে মনোমালিন্য এবং ঝগড়ার সৃষ্টি হতে পারে। তবে দেখতে হবে যে ঝগড়ার সময়ে সঙ্গী মানুষটি কেমন আচরণ করছেন। থেরাপিষ্ট এবং ‘ডিভোর্স বাস্টিং’ এর লেখিকা মিশেল উইনার-ডেভিস বলেন, “ঝগড়ার মাঝে সঙ্গী মানুষটি আপনার কথা শুনছেন কিনা, আপনার মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছেন কিনা, মনঃকষ্ট দেবার মত কাজগুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন কিনা, আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনা বোঝার চেষ্টা করছেন কিন এবং ক্ষমা চাওয়ার ক্ষেত্রে তার মনোভাব- এই ব্যাপারগুলো একজন ব্যক্তির অনেকটা চারিত্রিক গুণাবলী প্রকাশ করে দেয়।”

সম্পর্কে সমস্যা দেখা দিলে সাহায্য খোঁজেন তারা
একদম ছিমছাম এবং গোছান একটি সম্পর্কের মাঝেও সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং এটি খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। এ সম্পর্কে মিশেল উইনার-ডেভিস বলেন, “দীর্ঘ সূত্রতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে। অনেক সময় সম্পর্কে থেকে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করবে। কিন্তু, এই সকল কঠিন সময়ে সঙ্গী মানুষটি কতোটা চেষ্টা করছেন, সম্পর্ক ঠিক করতে কতটা ইচ্ছুক, কীভাবে কঠিন সময়ে আপনার পাশে থাকছেন- এই সকল কিছুই প্রকাশ করবে সেই ব্যক্তি আপনার জীবন সঙ্গী হিসেবে কেমন হবেন। জীবনের নানান প্রতিকূলতার মাঝে কীভাবে আপনার পাশে থাকবেন।”

জীবন সঙ্গী নির্বাচন প্রতিটি মানুষের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। যে মানুষটার সাথে জীবনের অর্ধেকটা কিংবা তারও বেশী সময় কাটাতে হবে, সে যদি চমৎকার মানুষ হয় তবে বৈবাহিক জীবনটা দারুণ হয়। যে কারণে জীবনে বড় কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই সঠিকভাবে যাচাই করে নেওয়া উচিৎ।

আরও পড়ুন ::

Back to top button