দলিত–কন্যা আমার মেয়ে, হাথরসে আমি যাবই: মুখ্যমন্ত্রী
উত্তরপ্রদেশের হাথরসে নির্যাতিতা দলিত–কন্যার বাড়িতে গিয়ে ওর পরিবারের সঙ্গে আমি দেখা করব। দেখি, আমাকে কে আটকায়! দলিত–কন্যা আমাদের কন্যা। দলিত–কন্যাকে ধর্ষণ করে রাতের অন্ধকারে ওর দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হল। কোনও বিচার হল না। আমার মন পড়ে আছে ওই গ্রামে।
মনে হচ্ছে এখনই ছুটে সেখানে চলে যাই। এতদিন পরে ওই গ্রামে মিডিয়ার লোকজনদের যেতে দেওয়া হচ্ছে। নেতারা যাচ্ছেন। আগে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হল না কেন? যোগীর রাজ্যে সন্ত্রাস, খুন বেড়েই চলেছে। বিজেপি হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্যানডেমিক। চরম স্বৈরতান্ত্রিক। গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।
শনিবার ময়দানে গান্ধীমূর্তির নীচে বিক্ষোভ–সমাবেশে এই মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
সভার আগে মমতা এদিন বিড়লা তারামণ্ডল থেকে গান্ধীমূর্তি পর্যন্ত এক বিশাল মিছিল করেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বহু মানুষ মিছিলে হাঁটেন। স্লোগান ওঠে— ‘বিজেপি দূর হঠো’, ‘বিজেপি আর নেই দরকার’। সভার মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘বিজেপি লজ্জা, লজ্জা। আমরা আর বিজেপি–কে চাই না।
উত্তরপ্রদেশে যোগীর সরকারকে আর চাই না।’ তিনি বলেন, ‘শুক্রবার তৃণমূল সাংসদদের এক প্রতিনিধিদল দলিত–কন্যার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যায়। গ্রাম পৌঁছনোর ১ কিলোমিটার আগে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। কোনও সৌজন্য দেখানো হয়নি। মহিলা সাংসদদের মারা হয়।
কোন দেশে আছি আমরা! প্রতিনিধিদলে ছিলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন, দীনেশ ত্রিবেদী, প্রতিমা মণ্ডল ও মমতাবালা ঠাকুর। সুনীল মণ্ডলের যাওয়ার কথা ছিল। তাঁর ছেলে করোনায় আক্রান্ত, তাই তিনি যেতে পারেননি। মানুষ বিপদে পড়লে আমি তাঁদের পাশে আছি। সে যে ধর্মের, যে বর্ণেরই হোক। দলিতদের সামনে এখন বড় বিপদ। তাই এখন আমি দলিত।’
শুধু মমতার হাতেই নয়, যাঁরা মিছিলে হেঁটেছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের হাতেই ছিল একটি করে টর্চ। মঞ্চে টর্চ জ্বালিয়ে মমতা বলেন, ‘দলিত মেয়েরা ও মায়েরা এখন অন্ধকারে। তাঁদের আলোয় ফেরাতে আমি আজ এই টর্চ এনেছি।’ মমতার অভিযোগ, শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, কর্ণাটক, অসম, হরিয়ানা— সব জায়গায় সংখ্যালঘু্, আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাইক-ট্যাক্সিতে বাড়ি ফেরার পথে যুবতীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালকের
তিনি বলেন, ‘আমি বিজেপি–র বন্দুককে ভয় পাই না। ওদের গুন্ডা বাহিনীকে আমি তোয়াক্কা করি না। কোনও অপরাধ হলে তার বিচার হয়। এখানে কোনও বিচার হল না। মেয়েটাকে দহন করে দিল। যাঁরা বিপদে পড়বেন, তাঁদের পাশে আমি আছি। হাথরসের ঘটনার বিচার চাই।’
সিঙ্গুরের তাপসী মালিকের প্রসঙ্গ এনে তিনি বলেন, ‘একইভাবে ওঁকে ধর্ষণ করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যোগী বলছেন, উত্তরপ্রদেশে দুর্গাপুজো বন্ধ। আমার সম্পর্কে মিথ্যে কথা বলা হচ্ছে। আমি নাকি দুর্গাপুজো বন্ধ করে দিচ্ছি। মন্দির, মসজিদ, গির্জা নিয়ে আমি রাজনীতি করি না। মিডিয়াকে ওরা চমকাচ্ছে।
হাথরসের ঘটনার পর বিজেপি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। ওরা বলছে, এ সব ঘটনা লেখা যাবে না, টিভিতে দেখা যাবে না। কত বড় ঔদ্ধত্য! আমাদের এখানে মিডিয়ার লোকেরা তো ঘুরে বেড়ান। কোনও মিডিয়া হাউস বলতে পারবে না আমি তাদের কাজে বাধা দিই। বিজেপি ভাবে, ওরাই হচ্ছে মহাপুরুষ। বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজি, নেতাজি, নজরুল কেউ নন।
নির্বাচন এলে রাজনৈতিক টনিক নিয়ে নেমে পড়ে বিজেপি। বিমান ভাড়া করে টাকা দিতে আসে। ভারতে কোথাও নিরাপত্তা নেই। নেতারা ঘরে বসে ভাষণ দিচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যে কথা বলা হচ্ছে। মিথ্যে খবর ছড়ানো হচ্ছে। দিল্লির দাঙ্গায় কারা যুক্ত ছিল, একদিন সব সত্য সামনে উঠে আসবে। মহামারীর জন্য আমরা ভয়ে মিটিং, মিছিল করছি না। বিজেপি কোভিড ছড়িয়ে দিচ্ছে।
কোভিডের জন্য এক পয়সাও দেয়নি।’ মমতা এদিন কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘রবিবার থেকে এই ঘটনার প্রতিবাদে তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস, যুব তৃণমূল কংগ্রেস, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পোস্টার লিখে প্রতিবাদ করবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই কর্মসূচি পালন করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হবে। কৃষি বিলের বিরুদ্ধেও আমরা প্রতিবাদ করছি। সংসদে আমাদের সাংসদরা সোচ্চার হয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের হাথরসের ঘটনায় বিজেপি–কে জবাব দিতেই হবে। পদে পদে বাংলাকে বঞ্চিত করা চলবে না।’
বিড়লা তারামণ্ডল হয়ে জওহরলাল নেহরু রোড ধরে মেয়ো রোড হয়ে গান্ধীমূর্তির নীচে মিছিল আসে। মিছিলে পা মেলান ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, জাভেদ খান, ইন্দ্রনীল সেন, শশী পঁাজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মালা রায়, কৃষ্ণা চক্রবর্তী, দোলা সেন, মালা সাহা, স্মিতা বক্সি প্রমুখ। মঞ্চে মমতা ছাড়া ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি।
সুব্রতবাবু বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ দলিত মেয়েটির দেহ পুড়িয়ে দিল। ওর পরিবারের কেউ দেখতে পারলেন না। দলিতদের ওপর ওঁরা অত্যাচার বাড়িয়ে দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপি যত দিন না শেষ হবে, তত দিন আমাদের লড়াই চলবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা কর্মসূচি নিয়েছি।’প্রতিবেদক দীপঙ্কর নন্দী
সুত্র: আজকাল