রাজনীতিরাজ্য

জিতেন্দ্রকে মেনে নিতে পারব না: বাবুল

জিতেন্দ্রকে মেনে নিতে পারব না: বাবুল

তৃণমূল ছেড়ে জিতেন্দ্র তিওয়ারির বিজেপি-তে আসার জল্পনা জোরাল হতেই ফেসবুকে তাঁর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন বাবুল সুপ্রিয়। আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল বৃহস্পতিবার ফেসবুকে একটি স্টেটাস দেন এবং ভিডিয়োও পোস্ট করেন।

সেখানে তিনি লিখেছেন, ”আমার টপ বস্‌রা কী করেন, সেটা আলাদা ব্যাপার। সেই সিদ্ধান্তই সর্বোচ্চ। তাতে আমার কিছু বলার অধিকার নেই। কিন্তু আমার প্রচুর বিজেপি সহকর্মী এতদিন ধরে চূড়ান্ত ভাবে আক্রান্ত, নির্যাতিত, আহত হয়েছেন। জীবন দিয়েছেন।

ভুয়ো কেসে জেলে রয়েছেন। এবং এই পুরো ব্যাপারটা তৃণমূলের মাননীয়া নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায়, তাঁর নির্দেশে আসানসোল-দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতারা কার্যকর করেছেন। আপনারাও জানেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি তাঁদের মধ্যে অন্যতম।”

জিতেন্দ্র বিজেপি-তে যোগ দিলে সেটা তাঁর এবং স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের কাছে ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে’ বলে বর্ণনা করে বাবুল আরও বলেছেন, ”এঁদের কারও বিজেপি-তে যোগ দেওয়াটা আমি মন থেকে মেনে নিতে পারব না।”

আরও পড়ুন: দল থেকে ইস্তফা দিলেন মমতার প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যাম মুখার্জিও

বাবুলের ওই পোস্টের পর রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে এই জল্পনা শুরু হয়েছে যে, এ বার কি তৃণমূলের মতো বিজেপি-তেও ‘আদি বনাম নব্য’ লড়াই শুরু হতে চলেছে? মুকুল রায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের যোগদানের পর রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে একটা অংশ বলে থাকে, বিজেপি-র ‘তৃণমূলায়ন’ হচ্ছে।

এ বার শুভেন্দু অধিকারী বা জিতেন্দ্র বিজেপি-তে যোগ দিলে সেই বিতর্ক আরও জোরাল হবে। প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটে প্রথম বার দোলা সেনকে হারিয়ে বাবুল আসানসোলে জিতেছিলেন এবং কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছিলেন।

গত লোকসভা ভোটে তিনি হারিয়েছেন মুনমুন সেনকে। কিন্তু তৃণমূলের জেলা সভাপতি হিসেবে জিতেন্দ্রর বিরুদ্ধেও বাবুলকে অহরহ লড়তে হয়েছে। এখনও হয়। ফলে তাঁর ‘ব্যক্তিগত উষ্মা’ স্বাভাবিক বলেই তাঁর অনুগামীরা মনে করছেন।

বাবুল আরও জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে তিনি বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করবেন। যা থেকে পরিষ্কার যে, জিতেন্দ্রর তৃণমূল ত্যাগ এবং বিজেপি-তে যোগদানের বিষয়ে বাবুল আগে থেকে কিছুই জানতেন না।

বস্তুত, বাবুল জানিয়েছেন, জিতেন্দ্রর বিজেপি-তে যোগদানের খবর চাউর হতেই বাবুলের সঙ্গে তাঁর কোনও ‘গোপন ডিল’ হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া শুরু হয়েছে। এতেই ক্ষুন্ন হয়েছেন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সম্প্রতি মাতৃবিয়োগের পর তিনি হরিদ্বারের গঙ্গায় মায়ের চিতাভস্ম বিসর্জন দিতে গিয়েছিলেন।

বুধবার রাত পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। তার পর বৃহস্পতিবার জিতেন্দ্রকে নিয়ে ঘটনাপ্রবাহ দ্রুত গড়াতে থাকে। বিকেলের পর জিতেন্দ্র তৃণমূল থেকে ইস্তফা দেন।

তার পরেই তাঁর বিজেপি-তে যোগদানের সম্ভাবনা আরও তীব্র হয়েছে। শওনা যাচ্ছে, শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের মেদিনীপুরে সভায় জিতেন্দ্র আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন।

ঘটনাচক্রে, জিতেন্দ্র তৃণমূল ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বাবুল ওই ফেসবুক পোস্ট করেছেন। ইংরেজিতে লেখা পোস্টে আসানসোলের সাংসদ লিখেছেন, ‘খুব স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, যাঁদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা আসানসোল এবং বাংলা থেকে টিএমসি-কে উত্‍খাত করতে লড়াই করছি, আমার বিজেপি-র সেই সহকর্মীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে আমি কোনও গোপন আঁতাতে যাব না।

আমার তেমন মানসিকতাও নেই। আমার টপ বসেরা কী করেন, সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু আমি আমার সাধ্য এবং সততা নিয়ে এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব, যাতে কোনও তৃণমূল নেতা, যিনি তৃণমূল স্তরের বিজেপি কর্মীদের উপর মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার করেছেন, তিনি যেন বিজেপি-তে ঢুকতে পারেন! আমরা আসানসোলের মানুষের সহায়তা নিয়ে সেখানকার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।

আরও পড়ুন: ‘তৃণমূলে দিদি ছাড়া অন্য কাউকে মানব না’: জিতেন্দ্র

সম্প্রতি কয়লা এবং বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু হয়েছে, সেটাই আমার এবং আমাদের আন্তরিক চেষ্টার প্রমাণ। আমি সমস্ত হৃদয় দিয়ে আসানসোলের মানুষকে সুবিচার দেওয়া চেষ্টা করে যাব এবং ২০২১ সালে রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর সেখানকার তরুণ প্রজন্মকে একটা পরিচ্ছন্ন জীবন দেব’। শেষ লাইনে বাবুল লিখেছেন, ‘আশা করি এই লেখা সমস্ত গুজবের মৃত্যু ঘটাবে’।

লিখিত পোস্টে জিতেন্দ্রের নাম না করলেও তার সঙ্গে পোস্ট-করা সাড়ে তিন মিনিটের ওই ভিডিয়োয় কিন্তু বাবুল জিতেন্দ্রর নাম করেই আক্রমণ করেছেন। সেখানেও তিনি বলেছেন, ”আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তই সর্বোচ্চ। তা নিয়ে কিছু বলার অধিকার আমার নেই।

আমি কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে চাই না। কিন্তু আমি আসানসোলের মানুষকে কথা দিয়েছিলাম, বালি-কয়লা-লোহার কারবারের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের শাস্তি হবে। মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছেন।

অনেকে ধরা পড়েছেন। অনেকে ধরা পড়বেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমি এঁদের কারও বিজেপি-তে যোগ দেওয়া মন থেকে মেনে নিতে পারব না।” শেষে বাবুল আবার জানিয়েছেন, তিনি গোটা বিষয়টি নিয়ে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

এখন দেখার, বাবুল কবে, কখন এবং কোথায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং তার ফল কী হয়। এ-ও দেখার যে, জিতেন্দ্র শেষপর্যন্ত জিতেন্দ্র বিজেপি-তে যোগদান করলে বাবুলের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয়।

 

 

সুত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

আরও পড়ুন ::

Back to top button