বসিরহাট মহকুমার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের যোগেশগঞ্জে মহিলার অর্ধনগ্ন মৃতদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে হেমনগর কোস্টাল থানায় বিক্ষোভ বিজেপির মহিলা মোর্চার। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে তাঁরা থানায় স্মারকলিপিও জমা দেন। ইতিমধ্যেই এই ঘটনা নিয়ে বঙ্গ রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছে।
৬ জানুয়ারি বুধবার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের যোগেশগঞ্জে খড়ের গাদার মধ্যে সন্ধ্যা মন্ডল বর্মন (২৮) নামে এক মহিলার অর্ধনগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মৃতার বাবা গোবিন্দ মন্ডল ও মা ঊষা রানী মন্ডল অভিযোগ করেন, তাদের মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। মৃতার বাবার বাড়ি হেমনগর কোস্টাল থানার গোবিন্দকাটি। ১০ বছর ধরে সন্ধ্যা স্বামী পরিত্যক্তা। সন্ধ্যা তার ৮ বছরের একটি শিশু সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকতো। যোগেশগঞ্জ বাজারের সার ব্যবসায়ী বিকাশ মন্ডলের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতো সন্ধ্যা। বিকাশ মণ্ডলের স্ত্রী রূপা মন্ডল যোগেশগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যা। জানুয়ারির শুরুতেই সন্ধ্যা নিখোঁজ হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। ৬ জানুয়ারি যোগেশগঞ্জ বাজার সংলগ্ন কালী বাড়ি লাগোয়া মাঠে খড়ের গাদা থেকে মহিলার অর্ধনগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার হয়। যদিও মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করে দেখার জন্য পুলিশ মৃতদেহটি ময়না তদন্তের জন্য বসিরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠায়। এদিকে সন্ধ্যা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর সপরিবারে দীঘা বেড়াতে চলে যান পঞ্চায়েত সদস্যা রূপা মন্ডল ও তাঁর স্বামী বিকাশ মণ্ডল। ফলে রূপা মন্ডল ও তাঁর স্বামী বিকাশ মণ্ডল দীঘায় ঘুরতে চলে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
আরও পড়ুন : পদ্মের সঙ্গ ছেড়ে আক্রান্ত তৃণমূল কর্মী, প্রতিবাদে ঘাসফুলের নজরকাড়া মিছিল
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৮ জানুয়ারি শুক্রবার হিঙ্গলগঞ্জ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যোগেশগঞ্জে পৌঁছে যান বিজেপি রাজ্য মহিলা মোর্চার সভাপতি অগ্নিমিত্রা পাল-সহ একাধিক নেতৃত্ব। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা ও মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে হেমনগর কোস্টাল থানা ঘেরাও করলে পুলিশ বাধা দেয়। তারপর সেখানে তাঁরা অবস্থান-বিক্ষোভ দেখায়। অবশেষে পুলিশ ৭ দিনের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতার করার আশ্বাস দিলে তাঁরা বিক্ষোভ তুলে নেন। রাজ্য আইন শৃঙ্খলা, মহিলাদের উপর নির্যাতন ও প্রশাসনের ব্যর্থতা বিষয়ে হেমনগর কোস্টাল থানায় পুলিশ আধিকারিককে স্মারকলিপি জমা দেন বিজেপি রাজ্য মহিলা মোর্চার পক্ষ থেকে রাজ্য বিজেপি মহিলা সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল।
বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল সাংবাদিকদের বলেন, “তৃণমূল নেতার বাড়িতে ওই মহিলা পরিচারিকার কাজ করতেন। ওই নেতার বাড়ির পেছন থেকে মহিলার অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার হয়েছিল। এখন তৃণমূলের লোকজনই মর্গ থেকে মৃতদেহ বার করে দাহ করার ব্যবস্থা করছে। তৃণমূল মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করছে। অথচ তৃণমূলের লোকেরাই সব ঘটনা ঘটিয়েছে।”
অগ্নিমিত্রা পাল আরও বলেন, “বাংলার মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করেছে, আমরা জানি যে পরের তিন মাস আমাদের উপরে আরও অত্যাচার হবে। কিন্তু আমরা সব অত্যাচার সহ্য করতে প্রস্তুত আছি। যতই বাধা আসুক, অত্যাচার হোক অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ থামবে না।”
আরও পড়ুন : বাংলার কৃষকরা ভাল আছেন: ফিরহাদ
এই প্রসঙ্গে হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ পরিমল বিশ্বাস জানান, ‘এই ঘটনার সাথে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও কর্মী-সমর্থক -এর যোগ নেই। আসলে বিজেপির কয়েকজন দুষ্কৃতী এই অঞ্চলে অশান্তি ছড়ানোর জন্য এসব কাজ করছে কিছু বহিরাগতদের নিয়ে। স্থানীয় কোনও সাধারণ মানুষ ওদের সাথে নেই। এই ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বসিরহাটে হুমকি দিয়ে বলেন, “হেমনগর কাণ্ডে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করা হলে বসিরহাটে আগুন জ্বলবে।”